অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ভিন্ন মেরুতে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। দল দুটি নিজেদের অবস্থানে অনড়। রাজনৈতিক বক্তব্যে একে অপরকে জর্জরিত করেন নিয়মিতই। তবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আকস্মিক সাক্ষাতকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকে। সংঘাত ও কাদা ছুড়াছুড়ির রাজনীতির দৃশ্যপটে এটাকে ‘নতুন মেরুকরণ’ ভাবছে কেউ কেউ।
.
অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ এই দুই নেতার সাক্ষাতে রাজনৈতিক ‘সমঝোতায়’ আশা দেখছেন না দু’দলের অন্য কোনো নেতা। আকস্মিক এই সাক্ষাতকে সৌজন্যতার বাইরে অন্য কিছু ভাবছেন না তারা।
‘ইসলাম অবমাননা’ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে রংপুরের পাগলাপীরে ঠাকুরপাড়ায় কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রোববার ওবায়দুল কাদের এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শনে যান।
বিকেলে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে এই দুই নেতার মধ্যে দেখা হয়। তারা কুশল বিনিময় করেন এবং পরস্পরের খোঁজ-খবর নেন। এসময় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েজন কেন্দ্রীয় নেতাও উপস্থিত ছিলেন।
ফখরুলকে উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা যেহেতু রাজনীতি করি, তাই আলাপ-আলোচনার পথ খোলা রাখাই ভালো।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা মনে করেন, এ সাক্ষাৎ সৌজন্যতার মধ্যে পড়ে। এখানে রাজনৈতিক সমঝোতার কিছু নেই। একসঙ্গে রাজনীতি করতে গেলে একজনের সঙ্গে আরেকজনের দেখা হলে কুশল বিনিময় হতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক, বরং না করাটাই অন্যায়। এটাকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবেই দেখছেন তারা।
জানতে চাইলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অনেক কথাই বলেন। উনি বললেন- আমি উনাকে (মির্জা ফখরুল) আমার পাশের সিটে বসতে দিতাম, সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। এমন ভাবসাব- উনারা জমিদার আর প্রজাদের সমাবেশের অনুমতি দিচ্ছেন। সুতরাং উনার কথায় পাত্তা দিয়ে লাভ নেই।’
দলের বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘এত উৎসাহের কিছু নেই। এক-দুই মিনিট কথা হয়েছে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের কুশল বিনিময় হয় না? দুই রাজনৈতিক নেতার মধ্যেও তাই হয়েছে। এতে রাজনীতিতে সু-বাতাস, কু-বাতাস বইছে এটা ভাবার মতো কিছু হয়নি।’
বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আলোচনা প্রসঙ্গে আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘যদি তিনি (ওবায়দুল কাদের) আলোচনার কথা বলে থাকেন তাহলে এটা পজেটিভ স্টেপ (ইতিবাচক পদক্ষেপ)। তাহলে মনে হয়, শাসক দলের সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে। কারণ এর আগে এই ওবায়দুল কাদের সাহেবই বলেছেন- বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হবে না, হতে পারে না। সেখান থেকে সরে এসে তিনি যদি তার অবস্থান বদলে থাকেন, তাহলে উনাকে ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে আলোচনার পথ বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। আলোচনার পথ রুদ্ধ করতে নেই। আলোচনার পথ খোলা রাখতে হয়।’
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘দুই নেতার মধ্যে সাক্ষাৎ হয়েছে, করমর্দন হয়েছে। এতে হৃদয়ের উষ্ণতা বাড়ুক।’
তিনি বলেন, ‘এটা অভিনন্দন যোগ্য। আমাদের সৌজন্যতা, ভদ্রতা থাকবে না কেন? রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই, কিন্তু একজন আরেকজনের সঙ্গে দেখা হলে কুলশলাদি জিজ্ঞাসা করা কালচারের মধ্যে পড়ে। এটা ব্যহত যাতে না হয় এটা আশা করি।’
এতে রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত আছে কিনা এমন প্রশ্নে আহমদ হোসেন বলেন, ‘একটি করমর্দনের মধ্যে কি কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা থাকে? এটা যদি কেউ বলে তাকে কি বলা যায়…! এর মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা আমি দেখি না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন