জাতীয় পার্টির (জাপা) দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুর সিটি কর্পোরশন নির্বাচনে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখানে সরকারের উন্নয়নকে ভর দিয়ে ভোটে জেতার বিষয়ে আশাবাদী ক্ষমতাসীনরা। তবে জাপা নেতাদের দাবি, সম্প্রতি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও নিরাপত্তার বিষয়টি এ নির্বাচনে মুখ্য ভূমিকা রাখবে।
আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ার দ্বিতীয়বারের নির্বাচনে বর্তমান মেয়র সরফুদ্দীন আহমদ ঝন্টুকে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেছে ক্ষমতাসীনরা। অপরদিকে রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফাকে মনোনীত করেছে দলটি।
নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ২২ নভেম্বর মনোনয়নপত্র জমা দেয়া শেষ তারিখ। ২৫ ও ২৬ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৪ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
এরই মাঝে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টের কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনাকে পরিকল্পিত উল্লেখ করে জাপা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি কু-চক্রীমহল পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত-সাপেক্ষে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সম্প্রতি তিনি আরো বলেন, আসন্ন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জন্য একটি পরীক্ষা। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে ইসির প্রতি জনগণের আস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন সেই ঝুঁকি গ্রহণ করবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, রংপুর সবসময়ই জাপার ঘাঁটি হিসেবে বিবেচিত। প্রতিটি নির্বাচনে এ অঞ্চলে জাপার প্রার্থী এগিয়ে থাকে। তিনি আরো বলেন, অন্য জায়গায় সংখ্যালঘু ভোটগুলো আওয়ামী লীগ পেয়ে থাকে। কিন্তু রংপুরের ক্ষেত্রে বিষয়টি অন্যরকম। এখানে তাদের ভোট জাপার পকেটে আসে। সম্প্রতি রংপুরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নিরাপত্তার বিষয়টি এবারের নির্বাচনে আরো বেশি প্রভাব বিস্তার করবে। ওই ঘটনায় আওয়ামী বিরোধী মনোভাব ইতোমধ্যে জন্ম নিয়েছে। বিষয়টি আমরা কাজে লাগাতে চাই।
তবে ওই ঘটনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করে না আ. লীগের নেতারা। সিটি নির্বাচন ও প্রার্থিতা নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, রংপুর সিটি নির্বাচনে জাপার প্রার্থী ভালো। তবে আমাদের প্রার্থীও খারাপ হয়নি। নির্বাচনটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাতামূলক হবে, এটাই বড় বিষয়।
ক্ষমতাসীন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, সকল দিক বিবেচনা করে আমরা প্রার্থী দিয়েছি। আমরা জেতার বিষয়ে আশাবাদী।
সাংগঠনটিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, রংপুরে জাপার প্রতি মানুষের আবেগ এখন কমে গেছে। রংপুরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ যা করেছে এটা অতীতের কোনো সরকার করেনি। আমি মনে করি, রংপুরের মানুষ এ সরকারের কর্মকাণ্ড ও দৃষ্টিভঙ্গির দিকে দৃষ্টি দিয়ে নিশ্চয়ই ভোটের মাধ্যমে এর প্রতিদান দেবে।
জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী সরফুদ্দীন আহমদ ঝন্টু। তিনি বলেন, আমি আশাবাদী। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান বলেন, আমরা সিদ্ধান্তের বাইরে নই। প্রার্থী বর্তমান মেয়র। উনার কর্মকাণ্ডের উপরই জনগণ বিবেচনা করবেন। দলীয় প্রার্থী হিসেবে আমাদের যা করণীয় সেটা আমরা করব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন