রংপুর সিটি নির্বাচনের মাধ্যমেই জাতীয় পর্টিকে কাছে পেতে চায় বিএনপি। এজন্যই দুই দলের মধ্যে যোগাযোগও শুরু হয়েছে। দুদলের নেতারাই বলেছেন।, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ঐক্য হবে গণতন্ত্রের জন্য এক ঐতিহাসিক সন্ধি।’ যদিও বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখনো জাতীয় পার্টি বিশেষ করে এরশাদের ভূমিকা নিয়ে সন্দিহান। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য স্বীকার করেছেন, ‘এরশাদ খুবই আনপ্রেডিক্টেবল।’ কখন কোন দিকে ছোটেন বলা মুশকিল।’ জাতীয় নির্বাচনে ঐক্য হোক আর না হোক, রংপুর সিটিতে জাতীয় পার্টিকে জিতিয়ে বিএনপি আওয়ামী লীগের মধ্যে হতাশা ছড়িয়ে দিতে চায়।
আগামী ২১ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি তাঁদের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। বর্তমান মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। দলের ভেতর অন্ত:কলহ মেটাতেও কঠোর অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রংপুর সিটিতে বিজয়ের মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ তাঁর নির্বাচনী মিশন শুরু করতে চায়।
রংপুর জাতীয় পার্টির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এরশাদের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়লেও, রংপুর জাপা এখনো শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, রসিকের মেয়র প্রার্থী হিসেবে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার নাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু এরশাদের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তাঁর ভাতিজা কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ। তবে জাতীয় পার্টির নেতা জিএম কাদের বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে এই মতদ্বৈততা শিগগিরই কেটে যাবে, আর শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থীই ‘লাঙ্গল’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।‘
বিএনপি এখনো আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেনি। বিএনপি কাওসার হাসান বাবলাকে মনোনয়ন দিতে পারে। তবে, প্রার্থী মনোনয়ন দিলেও, রসিক নির্বাচনে বিএনপির মূল লক্ষ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করা। এজন্য বিএনপি শেষ পর্যন্ত প্রার্থী নাও দিতে পারে। বিভিন্ন অভিযোগ করে প্রার্থিতা সরিয়ে নিতে পারে। জাতীয় পার্টির সঙ্গে রসিক নির্বাচন নিয়ে সমঝোতার চেষ্টাও চলছে। এ কারণেই ১৯ নভেম্বর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের রংপুর সফর বাতিল করা হয়। বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালে বিএনপি জাতীয় পার্টিকে নির্বাচন বর্জনের পথে নিয়ে এসেছিল। জাতীয় পার্টি যদি ওই নির্বাচন পুরোপুরি বর্জন করতো তাহলে আওয়ামী লীগ সংসদই গঠন করতে পারতো না বলেই বিএনপি নেতারা মনে করেন। জাতীয় পার্টির একটি অংশ যেমন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ, তেমনি অন্য একটি অংশ বিএনপির সঙ্গে নিবিড়। জাতীয় পার্টির কো-চেয়ার জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। নির্বাচন অথবা আন্দোলনে জাতীয় পার্টিকে পেলেই বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
সংসদের বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির নেতারাও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আর না থাকার পক্ষে। এই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জিএম কাদের। এরশাদের নির্দেশেই জিএম কাদের বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করছেন বলে জানা গেছে। তবে, বিএনপি এরশাদকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। ২০১৪ সালে নির্বাচনের বিরোধীতা করলেও শেষ পর্যন্ত এরশাদ শুধু সংসদ সদস্যই হননি, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও হয়েছেন। এরশাদ বিএনপির সঙ্গে যাবেন, না আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবেন- সেটা এরশাদ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেউ বলতে পারেন না। এরশাদ শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন, বাজার যেদিকে ভারী পাবেন, সেদিকেই ঝাঁপ দেবেন। এর আগে প্রধান দুই দলই এরশাদকে চাইবে।বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন