ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বলেছেন, বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় ভারত। ভারত বাংলাদেশের জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
সুষমা আরো বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে নয়া দিল্লি।
ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সঙ্গে হোটেল সোনারগাঁয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সাক্ষাৎ করতে গেলে সুষমা এসব কথা বলেন বলে বৈছক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল আরো জানান, সার্বিক বিষয়ে আমাদের মধ্যে খুবই ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বৈঠকটি ফলপ্রসু হয়েছে।
রবিবার রাতে হোটেল সোনারগাঁয়ে ঢাকায় সফররত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সঙ্গে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে বৈঠকে অংশ নিতে সন্ধ্যা ৭টা ৫ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন থেকে রওনা দিয়ে সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটের দিকে সোনারগাঁওয়ে পৌঁছেন বেগম খালেদা জিয়া।
রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে রাত ৮ টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে চলে রাত ৮টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।
চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ অংশ নেন।।
উল্লেখ্য, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের মধ্যে সর্বশেষ বৈঠকটি হয় ২০১৪ সালের ২৭ জুন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে অনুষ্ঠিত সে বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলগীরসহ ৫জন সিনিয়র নেতা অংশ নেন। তারও আগে ২০১২ সালে ভারত সফরকালে সুষমা স্বরাজের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন বৈঠক করেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চেয়ারপারসনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের এ বৈঠকটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে বিএনপি। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকারের অব্যাহত দমন নিপীড়ন এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশবাসীর প্রত্যাশার বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়া ভারতের সঙ্গে বিএনপির ইতিবাচক সম্পর্কে উন্নয়নের বিষয়টিও জোরালোভাবে তুুলে ধরেন নেতারা।
এছাড়া সম্প্রতি প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে সংঘটিত নানা ঘটনাবলীর প্রেক্ষিতে দেশের বিচার বিভাগের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়ে সৃষ্ট সংকটের বিষয়টি বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পায়। সূত্র জানায়, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ও প্রতিবেশী হিসেবে আগামীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে ভারতের আন্তরিক ভূমিকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপি। সে নির্বাচনে ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
এর আগে ২০১২ সালের অক্টোবরে এক সপ্তাহের ভারত সফর করে বাংলাদেশের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া৷
বিএনপি দলনেত্রী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে যান গত ২৮শে অক্টোবর৷
সফর শেষে বিমানবন্দরে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রপতি যে আন্তরিকতা ও আতিথেয়তা দেখিয়েছেন, তাতে আমি অভিভূত। আমি মনে করি এ সফর সফল হয়েছে।’
প্রায় সপ্তাহব্যাপী এ সফরে খালেদা জিয়া ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবে তৎকালীন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সাক্ষাত হবার কথা থাকলেও তা হয়নি ।
এসব বৈঠকে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের মাটিকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যবহার করতে না দেয়ার কথা বলে খালেদা জিয়া এখন দেশে-বিদেশে তুমুল আলোচিত৷ আর বিএনপির চেয়ারপার্সনের নতুন এই অবস্থান নিয়ে কথা বলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ৷ তিনি বলেন, ‘ভারত এগিয়ে এসেছে বলে বিএনপিও এগিয়ে গেছে৷ আর এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সুসম্পর্ক রচিত হলো৷ এরপর সমতার ভিত্তিতে সব দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান করা হবে৷ এই যুগে যুদ্ধ করে কিছু হয় না৷’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন