করোনার সংক্রমণ রোধে ২১ দিনের জন্য শনিবার (৪ জুলাই) লকডাউন করা হয়েছে রাজধানীর ওয়ারীকে। নিয়ম অনুযায়ী ওই এলাকায় থেকে কেউ প্রবেশ বা বের হওয়ার কথা নয়। তবে রবিবার (৫ জুলাই) সকালে ওই এলাকা থেকে বেশিরভাগ লোককেই খাতায় নাম লিখে বা অনুরোধ করে বের হচ্ছেন। আবার ‘উচ্চ পদস্থ’ সরকারি কর্মকর্তারা হুমকি দিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবীরা।
রবিবার ওয়ারীর চারদিকে ঘুরে দেখা গেছে, এলাকার প্রত্যেকটি প্রবেশপথে বন্ধ রয়েছে। সেগুলোতে বাঁশের বেড়ার ওপর কাপড় টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই কাপড়ের ফাঁক দিয়ে বাইরে থেকে সিগারেট আনিয়ে নিতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। জরুরি চলাচলের জন্য খুলে রাখা হয়েছে হট কেক গলি এবং ওয়ারী থানার পাশে র্যাংকিং স্টিট। ওই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালের রোগীরা প্রবেশ করছেন। তবে সেই পথে রোগীদের কোনও ধরনের সামাজিক দূরত্ব মানতে দেখা যায়নি।
বাইরে বের হতে চাওয়া মানুষের ভিড়
সেখানে কর্তব্যরত ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর আসাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। এলাকাবাসীর সঙ্গে কোনও খারাপ আচরণ করছি না।’
সকাল ৯টার পর থেকেই হট কেক গলিতে ভিড় ছিল সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তাদের। তাদের প্রত্যেককেই স্বেচ্ছাসেবকরা খাতায় নাম লিখিয়ে বাইরে বের হয়েছেন।
পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা স্বপ্না রায় বলেন, ‘এলাকা থেকে বের হতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। স্বেচ্ছাসেবকরা নাম লিখিয়ে বের হতে দিচ্ছেন।’
কাপড়ের ফাঁক দিয়ে সিগারেট কিনছেন
শুধু স্বপ্না রায় না, ৩০ মিনিটের পর্যবেক্ষণে করে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যাংক কর্মকর্তা কোনও প্রকার বাধা ছাড়াই এলাকা থেকে বের হতে পেরেছেন। সেখানে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘জরুরি সেবাদানকারী লোকজনই এলাকা থেকে বের বা প্রবেশ হতে পারবেন। তবে সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবকদের কথায় ব্যাংকাররা বেরিয়েছেন।’
সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা হুমকি দিয়েই এলাকা থেকে বের হচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। তারা বলছেন, এলাকাবাসীর যদি সহযোগিতা না করে এরকম হুমকি দিয়ে বেরিয়ে যায়, তাহলে এমন লকডাউনের দরকার কী ছিল?
এলাকা থেকে গাড়ি নিয়ে বরে হচ্ছেন একজন
ক্ষোভ প্রকাশ করে সিনিয়র স্বেচ্ছাসেবক মঞ্জুরুল কাদের মামুন বলেন, ‘একচ্যুয়ালি প্রাইভেট ব্যাংকের যারা সার্ভিস করে তারা আমাদের খুবই বিরক্ত করছেন। কারণ প্রধানমন্ত্রী কথামতে ২১ দিনের লকডাউনে এই এলাকা থেকে কেউ বের বা প্রবেশ করতে পারবে না। কিন্তু এলাকার লোক বিষয়টিতে আমাদের কো-অপারেট করছে না। কিছু সময় আগে তিতাসের এক কর্মকর্তা আমাকে থ্রেট করেছে। সে আমাকে বলেছে কোনও একটা দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার আমি নেবো কিনা। আমি তো দায়ভার নেওয়ার লোক না। জোর করে তিনি বের হয়ে গেল। জরুরি সেবা এবং ই-কমার্সের লোকজন ছাড়া কেউ বের হতে পারবে না এটাই হওয়ার কথা, কিন্তু তা হচ্ছে না। আমরা সাধারণ মানুষদের বুঝিয়ে ঘরে পাঠাতে পারছি। কিন্তু সরকারি বড় কর্মকর্তাদের আমরা সেটা মানাতে পারছি না। তারা আমাদের থ্রেট করে বের হয়ে যাচ্ছেন।’
নাম লিখে এলাকা থেকে বের হচ্ছেন
হট কেট গলিতে কর্তব্যরত ওয়ারী থানার সাব-ইন্সপেক্টর সুকান্ত বলেন, ‘এই আবাসিক এলাকা সিটি করপোরেশন লকডাউন দিয়েছে। কোনও বিশৃঙ্খলা হয় কিনা সে বিষয়টি আমরা তদারকি করছি আর এলাকায় প্রবেশ এবং বের হওয়ার বিষয়টি দেখছে স্বেচ্ছাসেবকরা। তবে নির্দেশনা মতে এই এলাকা থেকে জরুরি সেবা প্রদানকারী কর্মীরা এলাকা থেকে বের হতে পারবেন আর বিশেষ বিবেচনায় বিভিন্ন রোগীদের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বের বা প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে।’
থ্রেট করে বের হয়ে যাওয়া তিতাসের কর্মকর্তার বিষয়টি কঠোরভাবে নজরদারিতে আনার ব্যবস্থা করবেন এমনটা জানিয়ে ওই এলাকার কাউন্সিলর সারোয়ার হাসান আলো বলেন, ‘হুমকি দিয়ে কারও এলাকা থেকে বের হওয়ার কথা না। স্বেচ্ছাসেবকরা সেখানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আছেন, অর্থের বিনিময়ে কিন্তু তারা কাজ করছেন না। বিষয়টি আমি কঠোর নজরদারিতে আনার ব্যবস্থা করছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন