ভোটকেন্দ্র হলে রেখেই ঘোষণা করা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের তফসিল। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এ তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৯ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। মনোনয়নপত্র জমা ও বাছাই পর্ব শেষ হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৭ ফেব্রুয়ারি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় ২ মার্চ ও প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে ৩ মার্চ। এবং সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ৫ মার্চ। তফসিলে সিন্ডিকেট মিটিংয়ে নেওয়া সিদ্ধান্ত বলবৎ রেখেই হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়েছে ছাত্রলীগ ছাড়া ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদল বলছে, তফসিল পুনরায় ঘোষণা করতে হবে। ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি-ছাত্রলীগকে সুবিধা দিতেই সবার দাবিকে অগ্রাহ্য করে হলে ভোটকেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে প্রশাসন।
তফসিল ঘোষণায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি তানভীর রেজা রুবেল খোলা কাগজকে বলেন, নির্বাচন পেছানো, ভোটকেন্দ্র হলে করাসহ আমাদের যে দাবিগুলো ছিল, এর কোনো দাবিই প্রশাসন মানেনি। আমরা আশা করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শুভবুদ্ধির উদয় হবে, তারা দাবিগুলো মেনে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করবেন।
ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে না করলে বা নির্বাচন পেছানোর দাবি না মানলে আপনাদের ভূমিকা কী হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত নির্বাচনকে পজিটিভলি নিচ্ছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত দলীয় ফোরামে আলোচনা করে নেওয়া হবে।
বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী খোলা কাগজকে বলেন, ২৯ বছর পর ডাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে, এ লক্ষ্যে তফসিল ঘোষণা করা হলো-এটা আমাদের জন্য আনন্দের। কিন্তু একই সঙ্গে যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে, তা উৎকণ্ঠার জন্ম দিয়েছে। আমাদের সুনির্দিষ্ট দাবিগুলোকে অগ্রাহ্য করে, শুধু একটি দলের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যার কারণে নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ। তফসিল ঘোষণার পর ক্যাম্পাসজুড়ে আনন্দ মিছিল বের করে সংগঠনটি। বিভিন্ন হল ছাত্রলীগের ব্যানারে শোডাউন দিয়ে ক্যাম্পাস মুখর করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন খোলা কাগজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নির্বাচিত নেতৃত্বের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। যে নেতৃত্ব সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেহেতু এর একমাত্র পথ হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন, সুতরাং ডাকসু নির্বাচনের এই তফসিলকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি।
ছাত্রদলের পুনরায় তফসিল দেওয়ার দাবির বিষয়ে ছাত্রলীগের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, ছাত্রদলের কর্মীরা ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিতে চায়; কিন্তু তাদের নেতারা যেহেতু অছাত্র তারা নিজেদের নেতৃত্বকে নিরাপদ রাখার জন্য ডাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র করছে।
১৯৯০ সালের পর একাধিকবার ভোটের আশ্বাস এলেও ডাকসু নির্বাচন আর হয়নি। প্রতিবারই সরকার সমর্থক ছাড়া অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর বিরোধী মনোভাবের কারণে নির্বাচন ভেস্তে যায়। এবার নির্বাচনের দাবি আদায়ে আদালতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। ২০১২ সালে এই রিট আবেদন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৫ শিক্ষার্থী। রিটের সূত্র ধরে সর্বশেষ উচ্চ আদালত মার্চের মধ্যে নির্বাচন দিতে আদেশ দেন। এ আদেশ বাস্তবায়নেই তফসিল ঘোষণা করল প্রশাসন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন