রাজশাহীর তানোর উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্যদের ভাতা দেন না চেয়ারম্যানরা। বছরের পর বছর ধরে এই টাকা তছরুপ করছেন। ইউপি সদস্যদের অভিযোগ, চেয়ারম্যানরা নিয়মিত ভাতা এবং বিভিন্ন বিষয়ে খরচ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করছেন।
একাধিক ইউপি সদস্য জানান, সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। সাত ইউপির সদস্যরা কোনো সময়ে ভাতা পান না। পরিষদের রাজস্ব আদায় হলেও বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে সব টাকা সচিব-চেয়ারম্যানরা খরচ করেন। আবার সংরক্ষিত নারী সদস্যদের থাকে না কোনো ধরনের ক্ষমতা। কোনো নারী সদস্য বেতন-ভাতা নিয়ে কথা বললে তাঁকে দেওয়া হয় না কোনো প্রকল্প। যেসব সদস্যের সঙ্গে চেয়ারম্যানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে, তাঁদের দেওয়া হয় একাধিক প্রকল্প। যাঁদের সখ্য নেই তাঁদের কোনো ধরনের মূল্যায়ন করা হয় না। এ জন্য অনেকে ক্ষোভে পরিষদে আসেন না। তাঁরা পরিষদে না এলেও চেয়ারম্যানদের কাজে তেমন সমস্যা হয় না।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ইউপি সদস্যরা সরকারের কাছ থেকে ভাতা পান তিন হাজার ৬০০ টাকা। আর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে চার হাজার ৪০০ টাকা পাওয়ার কথা। সরকারি ভাতা নিয়মিত পেলেও পরিষদের ভাতা পান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেম, পাঁচন্দর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন, কলমা ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না, বাধাইড় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান, কামারগাঁ ইউপি চেয়ারম্যান মোসলেম উদ্দীন, সরনজাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক, চান্দুড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মজিবর রহমান জানান, সদস্যরা বেতন পাবেন। তবে তাঁদের দাবি, পরিষদ চালানো দুষ্কর। কিভাবে ইউপি সদস্যদের বেতন দেবেন? আয় নেই, তাই তাদের বেতন নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ইউপি সদস্য জানান, ইউনিয়ন পরিষদ আইন কোনোভাবে মানা হয় না। নারীদের ক্ষেত্রে আরো ভয়াবহ অবস্থা। তাঁরা পরিষদের সবচেয়ে অবহেলিত। তাঁরা তিন ওয়ার্ডের মালিক হলেও থাকে না প্রয়োজনীয় বরাদ্দ। সব কিছু থেকে তাঁদের চরমভাবে বঞ্চিত করা হয়। অথচ নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে গলা ফাটিয়ে ফেলা হচ্ছে। বাস্তবে এর কিছুই নেই। তাঁদেরও দেওয়া হয় না বেতন বা প্রকল্প। এ জন্য তাঁদের নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে জবাব দিতে দিতে নাজেহাল হতে হয়। তিনি বলেন, ‘বেতন-ভাতা না দেওয়ার নিয়ম যুগ যুগ ধরে চলে এলেও কারো মাথাব্যথা নেই।’
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী গোলাম রাব্বী বলেন, ‘সরকারি ভাতাসহ নিজ নিজ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইউপি সদস্যরা ভাতা পাবেন। কেন চেয়ারম্যানরা তাঁদের বেতন দেন না বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন