বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) কর্তৃপক্ষ এবার বাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা ও দৃষ্টিনন্দন করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর জোয়ারসাহারা থেকে সদ্য বদলি হওয়া ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামানের দুর্নীতিরও তদন্ত শুরু হয়েছে।
বিআরটিসি প্রধান কার্যালয় থেকে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ডিপোতে শনিবার থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে জোরেশোরে। মতিঝিল ও জোয়ারসাহারাসহ ৯টি ডিপোতে এ অভিযান নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ডিপো ব্যবস্থাপকরা। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে বিআরটিসি প্রধান কার্যালয়ে ডিপো ব্যবস্থাপকদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন সংস্থার চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভুঁইয়া।
জানা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল বাস ডিপোতে ১০টি ও জোয়ারসাহারায় চারটি বাস দৃষ্টিনন্দন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জানতে চাইলে মতিঝিল ডিপোর ব্যবস্থাপক (পরিচালনা) নায়েব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই ডিপো থেকে ১০৭টি বাস চলাচল করে রাজধানী ও দেশের বিভিন্ন জেলায়। এর মধ্যে ১০টি বাসের রং উঠে গেছে। এগুলোর রং করতে হবে। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা বহু আগে থেকেই আছে। তবে সংবাদপত্রে দরজা ঝুলে থাকার ছবি ছাপা হওয়ার পর নির্দেশনা ও সেসবের বাস্তবায়ন জোরদার করা হয়েছে।
জোয়ারসাহারা বাস ডিপোর ব্যবস্থাপক নুর ই আলম বলেন, ‘এখান থেকে চলাচলকারী ৭০টি বাসই পুরনো। এর মধ্যে দোতলা বাস রয়েছে ২৩টি। এসব বাসের কোনোটির রং উঠে গেছে, কোনোটির বডি ভেঙেছে। ২০১১ ও ২০১২ সালের এসব বাস নিয়মিত মেরামত ও দৃষ্টিনন্দন করার নির্দেশনা আগে থেকেই ছিল। তবে চেয়ারম্যান মহোদয় কয়েক দিন ধরে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন।’
গত শনিবার কালের কণ্ঠে ‘লুটপাটে ডুবছে বিআরটিসি’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ পায়। প্রতিবেদনের সঙ্গে বিআরটিসির দরজা ভেঙে ঝুলতে থাকা একটি নড়বড়ে দোতলা বাসের ছবিও ছাপা হয়। ওই দিনই বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ ওই বাসের চালক আবু তালেবকে সাময়িক প্রত্যাহার করে। এর পর থেকেই ডিপোগুলোতে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু হয়েছে।
এদিকে জোয়ারসাহারার ডিপো ব্যবস্থাপক মো. মনিরুজ্জামানকে বদলি করে গাজীপুরে আইসিডাব্লিউএসের ইউনিট প্রধান করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে রাজস্ব চুরি, শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে একজোট হয়ে চাঁদাবাজি ও ভুয়া বিলের কাগজ তৈরির অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। এরই মধ্যে সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে দুই সদস্যের নিরীক্ষকদল জোয়ারসাহারা ডিপো পরিদর্শন করেছে। ভুয়া বিলের প্রমাণ এ দলের কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রধান কার্যালয়ের দুই কর্মকর্তা বিষয়টি তদারক করছেন।
জানতে চাইলে গতকাল সোমবার বিআরটিসি চেয়ারম্যান ফরিদ আহমদ ভুঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাস্তায় বের করার নির্দেশনা পুরনো। তবে এটি আরো ভালোভাবে অনুসরণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। সংস্থাটির উন্নয়নে যে কাজগুলো করছি তাতে ইতিমধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আসলে বিআরটিসির বাসে বেশি অত্যাচার করা হয়। এ কারণে প্রতি মাসেই ৩০ থেকে ৪০টি বাসের পেছনের অংশ পরিবর্তন বা সংস্কার করতে হয়। বেশির ভাগ বাসই ২০১১ ও ২০১২ সালে আনা হয়েছিল। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ধরনের মেরামতকাজ করাচ্ছি।’ তিনি জানান, কোরিয়া থেকে আনা ৯০টি দাইয়্যু বাস অকেজো হয়ে আছে। এগুলো মেরামতের জন্য দাইয়্যু কম্পানি থেকে চার লাখ ডলারের অনুদান পাওয়া যাবে। ৩৭০টি বাস ব্যাপক মেরামত শেষে রাস্তায় নামানো হয়েছে। অচল বাকি সব বাসও মেরামত করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন