‘আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, ধুত্তুুর ধুত্তুুর ধুত্তুরধু সানাই বাজিয়ে, যাবো তোমায় শ্বশুর বাড়ি নিয়ে-গরুর গাড়ি নিয়ে দেশীয় চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় গান এখন শুধুই অতীত। গৃহস্থের মাঠের ধানসহ আবহমান গ্রামবাংলার এক সময়ের বাহন ছিল গরুর গাড়ি। এ গরুর গাড়ির চাকা হতে শুরু করে এর সব কিছুই মানুষের হাতে তৈরী হয়। আধুনিক প্রযুক্তির ভীড়ে গরুর গাড়ি আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। যে কারণে ভাল নেই গরুর গাড়ির চাকা তৈরীর কারিগররা। তবুও বংশপরমপরায় বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছেন যশোরের মনিরামপুরের গরুর গাড়ির চাকা তৈরীর কারিগর খোদাবাক্স। তিনি উপজেলার কাশিমনগর গ্রারে মৃত মান্দার সরদারের ছেলে।
খোদাবাক্স বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গরুর গাড়ির ব্যবহার কমে গিয়ে এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবুও নাড়ির টানে বাপ-দাদার এ পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছি। পূর্ব পুরুষরা এ পেশার মাধ্যমে জীবিকা নিবাহী করেছেন। বাবা মৃত মান্দার সরদারের বাবা মৃত রহমান মিস্ত্রীকে এক ডাকেই চিনতো কয়েক গ্রামের লোক। দাদা মৃত রহমান মিস্ত্রীর বাবা গোলাম সরদার ও তার পূর্ব পুরুষরা বংশপরমপরায় কাঠের চাকা তৈরি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
খোদাবাক্স আরো বলেন, শুধু বাবলার কাঠ থেকেই গরুর গাড়ি চাকা তৈরী হয়। বাবলার কাঠ সাইজ করে কেটে প্রথমে বেলন (যা হাড়ির কাঠ হিসেবে অনেক জায়গায় পরিচিত) তৈরী করা হয়। বেলনের চারিপাশে প্যাখের কাঠ ( পাতির কাঠ) লাগিয়ে বেড়ের কাঠ বসানো হয়। এরপর বেলনের মধ্যেভাগ দিয়ে প্রয়োজন মাফিক সরু গর্ত করে লোহার শিট বসালেই তা ব্যবহার উপযোগী হয়।
একজোড়া চাকা তৈরীতে সপ্তাহ খানেক সময় লাগার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি তৈরীকৃত চাকা সাড়ে সাত থেকে ৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়। যা সাধারণত ফাগুন মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চাহিদা থাকে। আর সারা বছরই প্রায় বেকার থাকতে হয়। আর এভাবেই তিনি পরিবার-পরিজনের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন জুগিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে তাদের নতুন প্রজন্মরা এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া চাকা তৈরী কষ্ট সাধ্য হওয়ায় তার দুই ছেলে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে বলেও তিনি জানান। এসময় তিনি আরো বলেন, এক সময় গ্রামের পথ-ঘাট ছিল অনুন্নত। গ্রামের প্রায় প্রতিটি গৃহস্থ পরিবারে ছিল গরুর গাড়ি। তখন গরুর গাড়ির চাকা তৈরীতে ভিড় সামলানোই ছিল কঠিন। কিন্তু সময় পাল্টিয়েছে। এখন পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টরসহ আধুনিক প্রযুক্তির ভীড়ে গরুর গাড়ি প্রায় বিলুপ্তি হতে চলেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন