অভিষেকটা রাঙালেন বটে জাকের আলি, তবে সুখময় করে তুলতে পারলেন না। টান টান উত্তেজনার শিহরণ জাগানিয়া লড়াই শেষ বিষাদ মুখেই মাঠ ছাড়তে হলো টাইগারদের। মাহমুদউল্লাহর পর জাকেরের রেকর্ড গড়া ফিফটিতেও রেহাই হলো না পরাজয় থেকে।
সোমবার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সিলেটে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৩ উইকেটে ২০৬ রান তুলে শ্রীলঙ্কা।
জিততে হলে রেকর্ড গড়েই জিততে হতো টাইগারদের। ছিলও সেই পথে। তবে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২০৩ রান পর্যন্ত করতে পারে বাংলাদেশ। জিততে জিততে হেরে যায় ৩ রানে।
অবশ্য ১৩.২ ওভারে মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর আশা ছেড়ে দেয় অনেকেই। তখনো জয়ের জন্য প্রয়োজন ৪৬ বলে ৯১ রান। মাঠে জাকের আলির সাথে শেখ মেহেদী, নেই আর কোনো স্বীকৃত ব্যাটার। অনেকেই যখন মাঠ ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতিতে বিভোর, ওই সময় খেলায় প্রাণ ফেরান জাকের।
মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর অপরপ্রান্তে মেহেদীকে দর্শক বানিয়ে সমীকরণ কমাতে শুরু করেন জাকের। তার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে একটা সময় এসে শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় মাত্র ১২ রান। তবে এই সমীকরণ আর মেলানো হয়নি। শানাকার এই ওভারে ৪ বলে যখন ১০ প্রয়োজন তখন ফেরেন তিনি, আউট হন ৩৪ বলে ৬৮ রান নিয়ে।
শেখ মেহেদীকে নিয়ে এই সময়ে গড়েন ৩২ বলে ৬৫ রানের জুটি। যেখানে শেখ মেহেদীর অবদান মোটে ১১ বলে ১৬ রান! মাত্র ২৫ বলে ফিফটি তুলেন জাকের, যা অভিষেকে দেশের হয়ে দ্রুততম। তাছাড়া তার ৬৮ রানের ইনিংসটাও টি-টোয়েন্টি অভিষেকে দেশের সেরা ইনিংস, সব মিলিয়ে দ্বিতীয়।
জাকের দলকে যেখান থেকে টেনে এনেছেন, এর আগে সেখান পর্যন্ত দলকে পৌঁছে দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ১৭ মাস পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফিরেই তুলে নেন ফিফটি। প্রত্যাবর্তন রাঙান ২৮ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়ে। তার ৩১ বলে ৫৪ রানের ইনিংসেই লড়াই করার ভিত পায় বাংলাদেশ।
মাহমুদউল্লাহ-জাকের ছাড়া অবশ্য এদিন ব্যর্থ ছিলেন বাকি সবাই। লিটন প্রথম ওভারেই ফেরেন কোনো রান যোগ করে। সৌম্য সরকার ১১ বলে করেন ১২ রান। তাছাড়া তাওহীদ হৃদয় ৫ বলে ৮ ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ২২ বলে করেন ২০ রান।
এর আগে, বোলাররাও ছিল ব্যর্থ। সিলেটের মাঠে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২০৬ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। প্রথমটাও অবশ্য তাদের দখল, ২০১৮ সালে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ২১০ করেছিল তারা।
২০৬ রান তাড়া করে জয় পাওয়া স্বপ্নের মতোই ছিল বাংলাদেশের কাছে। সিলেটের মাটিতে আজকের আগে সর্বোচ্চ ১৫৭ রান করেছিল বাংলাদেশ! যেখানে এদিন করতে হতো ৫০ রান বেশি।
বল হাতে শুরুতে অবশ্য লঙ্কানদের চেপে ধরেছিলেন দুই পেসার শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইনিংসের প্রথম ওভারেই তুলে নেন উইকেট, তৃতীয় বলেই ফেরান আভিস্কা ফার্নান্দোকে। ২ বলে ৪ করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন তিনি।
দুই মেন্ডিস কামিন্দু ও কুশল মিলে অবশ্য চাপমুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালান। বড় শটে রান বাড়ানোয় মন দেন। তবে কামিন্দুকে উঠিয়ে নিয়ে সেই প্রচেষ্টা ভণ্ডুল করেন তাসকিন। ১৪ বলে ১৯ করে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন কামিন্দু। ৪.৩ ওভারে ৩৭ রানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
তবে সেখানেই থমকে যায় বাঘের গর্জন। এরপর সিলেটে ঝড় উঠে চার-ছক্কার। ফের যখন উল্লাসের সুযোগ হয় শান্ত-লিটনদের, ততক্ষণে স্কোরবোর্ডে ১৪.৪ ওভারে যোগ হয় ১৩৩ রান। সাদিরা সামারাবিক্রমা ও কুশল মেন্ডিস মিলে এই সময়ে ৬২ বলে যোগ করেন ৯৬ রান।
কুশল মেন্ডিস ৩৬ বলে ৫৯ করে রিশাদের বলে ফেরেন মাহমুদউল্লাহর দারুণ ক্যাচ হয়ে। তবে থামেননি সামারাবিক্রমা। যদিও শেষ দিকে তাকে ছাপিয়ে যান লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা। ২১ বলে ৪৪* রানের এক ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। সামারাবিক্রমার ব্যাটে আসে ৪৮ বলে ৬১* রান।
৩ উইকেটে ২০৬ রান তুলে লঙ্কানরা। শরিফুল ৪ ওভারে ৪৭ রানে ১ ও তাসকিন আহমেদ ৪০ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। রিশাদ ৩২ রানের বিনিময়ে নেন ১ উইকেট।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন