বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে প্রশিক্ষণ নেয়া ফরিদপুরের ফুটবলার রিপন কুমার দাস এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর (ঝাড়ুদার) কাজ করছেন। সংসারের অভাব-অনটন তাকে এই কাজ করতে বাধ্য করেছে। রিপনের এই কাজের জন্য জেলা ক্রীড়া সংস্থা ও বাফুফের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে এমন অবস্থা বলে মনে করছেন ফুটবলের সঙ্গে জড়িতরা।
শৈশবে গ্রামের মাঠে ফুটবল খেলতেন রিপন। অল্প বয়সে পায়ের নৈপুণ্যে সবার নজর কেড়েছিলেন তিনি। এতে উৎসাহ দেয় বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীরা। ধীরে ধীরে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন বুকে দানা বাঁধে তার।
রিপনের মা পান্তা দাস বলেন, আমার দুই ছেলে রিপন সবার বড়। ছোট ছেলে তপন এখনও কিছু করে না। রিপন বড় একজন ফুটবলার; শুধু সংসারে অভাবের কারণে তাকে বেছে নিতে হয়েছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ। এতে আমাদের খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। রিপন যদি আয়-রোজগার না করে তাহলে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
ফরিদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার নাজমুল ইসলাম লেভী বলেন, রিপন দাস ২০১২ সালে এয়ারটেলের রাইজিং স্টার চ্যাম্পিয়ন হয়ে ১২ জনের একটি টিমের সঙ্গে একই বছরের ১৭ নভেম্বর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবে অনুশীলন করার জন্য যান। এরপর সেখানে ১০ দিনের অনুশীলন শেষ করে ফিরে আসেন দেশে।
দেশে আসার পর বাফুফের তদারকির অভাবে তাকে ফিরে আসতে হয় ফরিদপুরে। ফরিদপুরে আসার পরে সংসারের অভাব-অনটনের কারণে তাকে বেছে নিতে হয় বাবার কর্মস্থল ফরিদপুর সড়ক বিভাগে মাস্টাররোলের পরিচ্ছন্নতার কাজ। গত কয়েক বছর ধরে এই কাজ করছেন ফরিদপুর সড়ক বিভাগে তিনি। রিপন প্রতিদিনের রুটিন কাজ শেষে সুযোগ করে বল নিয়ে নেমে পড়ে যেকোনো মাঠে।
ফরিদপুর জেলা ফুটবল টিমের কোচ প্রণব কুমার মুখার্জী বলেন, রিপনের ফুটবলের প্রতি বিশেষ প্রেম রয়েছে। যে কারণে অফিসের পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে সুযোগ পেলেই অনুশীলন করতে স্টেডিয়ামে চলে আসে। এখনও তার ইচ্ছা দেশসেরা ফুটবলার হওয়ার।
ফরিদপুর ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ভোলা বলেন, রিপনের মতো ফুটবলার তৈরি হয় খুব কম। বাফুফে যদি সঠিকভাবে ভূমিকা নিতো তাহলে তাকে এভাবে ঝরে পড়তে হতো না। এখনো তার অনেক সুযোগ রয়েছে।
ফুটবলার রিপন কুমার দাস বলেন, সংসারের আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে আমি এখন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাবা-মায়ের কষ্টের কথা চিন্তা করে কাজ করছি। চেয়েছিলাম বড় ফুটবলার হতে। এতে সংসারের দৈন্যদশা কাটবে। কিন্তু তা হয়নি। সরকার যদি আমার বিষয়টি দেখে তাহলে হয়তো আমি আবারও বল নিয়ে মাঠে দর্শকদের মন জয় করতে পারব।
রিপন বলেন, ইংল্যান্ডে যাওয়ার পরে সে দেশের নাম করা ফুটবল তারকারা আমাদের সময় দিয়েছিলেন। দেখিয়েছিলেন কিভাবে আরও ভাল ফুটবল খেলা যায়। ফুটবল খেলার মান কিভাবে উন্নত করা যায়। কিন্তু সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগাতে পারিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন