এসএসসির বাধা পেরোলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের এক ঝাঁক তারকা। স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না, ডিফেন্ডার আঁখি খাতুন, শামসুন্নাহার সিনিয়র, আনাই মগিনী, ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা রয়েছেন এই তালিকায়।
এ ছাড়াও সাজেদা, রেহেনা, মাফুজা উত্তীর্ণ হয়েছেন এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায়। সব মিলে করোনার এই সময়েও নারী ফুটবলের জন্য দিনটা এক রকম উৎসবের।
সারা বছর ফুটবল নিয়েই কাটে তাদের। বছর জুড়ে থাকে নানা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। সেগুলোকে লক্ষ্য করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) অধীনে কঠোর অনুশীলনের মধ্যে থাকতে হয় আঁখিদের। এর বাইরে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া। ফুটবলের মেয়েরা সব বাধা ডিঙিয়েই ছুটে চলেছেন দুরন্ত গতিতে।
বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী আঁখি ৩.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। সিরাজগঞ্জ থেকে মুঠোফোনে দেশ রূপান্তরকে অনুভূতি বলছিলেন এভাবে, ‘খুব খুশি লাগছে। যখন পরীক্ষা দিয়েছি, তখন চিন্তাতেই ছিলাম কি হবে…। কারণ সারা বছর খেলার ব্যস্ততা থাকে। পড়াশোনার সেভাবে সুযোগ পাইনি। বিকেএসপিতে দেখা গেছে পরীক্ষা দিতে গেছি, সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত, আমি প্র্যাকটিস করতে গেছি মাঠে। তাই পাশ করেছি, খুবই আনন্দ লাগছে।’
পরীক্ষার সময় থেকেই আঁখির বাবা-মা চিন্তায় ছিলেন। খেলার জন্য সেভাবে পড়াশোনায় মন দিতে না পারা মেয়েটা না জানি কেমন করে। আঁখি জানালেন, ‘রেজাল্ট শুনে চিন্তা মুক্ত হয়েছেন বাবা-মা। যেদিন থেকে পরীক্ষা দিয়েছি, সেদিন থেকেই খুব চিন্তা কি করব না করব। এখন খুবই খুশি।’
আঁখি জানান, খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও ভালোভাবে চালিয়ে যেতে চান তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে তারা। অবশ্য আরেকটি ইচ্ছেও আছে তার। সেটি সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হওয়া।
বিকেএসপির আরেক শিক্ষার্থী ঋতুপর্ণা চাকমা রেজাল্টের পরই ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘হুররে…। স্কুল লাইফ শেষ হলো।’ মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বাঁ-পায়ের এই স্ট্রাইলিশ ফরোয়ার্ড।
রাঙ্গামাটির মেয়ে ঋতু দেশ রূপান্তরকে বলছিলেন, ‘রেজাল্টে আমি খুশি। তবে আরো ভালো হতে পারতো। এখন অবশ্য আফসোস করছি না। খুবই ভালো লাগছে।’
রাঙ্গামাটির আরেক ফুটবলার আনাই মগিনী স্থানীয় স্কুল থেকে মানবিক বিভাগ থেকে পেয়েছেন ২.০০। জাতীয় দলের দুই যমজ বোনদের মধ্যে ছোট আনুচিং মগিনী অবশ্য এসএসসির বাধা ডিঙিয়েছিলেন আগেই। এবার বড় বোন আনাইও পেরোলেন এসএসসির বাধা।
ফলাফলের প্রতিক্রিয়া জানতে যখন ফোন করা আনাইকে, তখন দুই বোন মিলে মন্দিরে যাচ্ছিলেন। আনাই বলেন, ‘পয়েন্ট খুব বেশি পাইনি, এটার জন্য একটু মন খারাপ। তবে সব মিলে ভালো লাগছে। এখন কলেজে পড়তে পারবো…।’ আনাই আরো বলেন ফুটবলের সঙ্গে পড়াশোনাতেও এগিয়ে যেতে চান সমানভাবে, ‘দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে থাকতে চাই।’
রংপুরের মেয়ে স্বপ্না ৩.৯৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন জানিয়েছেন, শামসুন্নাহার সিনিয়র ৩.০৬, রেহেনা ৩.৭৫, মাহফুজা ৪.৪৩, সাজেদা ২.৮০ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে এবারের এসএসসি পরীক্ষায়।
তবে তহুরা খাতুন দুই বিষয় ও শামসুন্নাহার জুনিয়ার এক বিষয়ে উত্তীর্ণ হতে পারেননি।
মেয়েদের এসএসসির এই ফলাফলে দারুণ খুশি কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। দেশ রূপান্তর তিনি বলেন, ‘সকাল থেকেই উদ্গ্রীব ছিলাম, ওদের ফলাফলের জন্য। সবার সাথে কথা হলো। আমাদের একটা আগ্রহ থাকে মেয়েরা কেমন করে। কারণ ওরা সারা বছর খুবই ব্যস্ত থাকে। তারপরও ওরা যে ফলাফল করেছে এটা খুবই ভালো বলব আমি।’
তিনি যোগ করেন, ‘ওদের জন্য এটা অন্য সবার থেকে কঠিন। সারাদিন ওরা খেলায় ব্যস্ত থাকে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ, ট্রেনিং…। কঠোর অনুশীলনের মধ্যে থেকেও তারা পড়াশোনাতেও এগিয়ে যাচ্ছে। এটা বাহবা দিতে হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন