ঘরের মাঠে ২০১১ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। সেই ছবি এখনো হৃদয়ে রক্ত ঝরায় মাশরাফী ভক্তদের। নিজেদের মাঠে বিশ্বকাপ খেলতে না পারায় এখনো খারাপ লাগা আছে মাশরাফীর। তবে সেই খারাপ লাগার চেয়ে নড়াইল এক্সপ্রেসের ভালো লাগাটাই এখন ৩গুন।
শনিবার তামিম ইকবালের ফেইসবুক লাইভে শো-তে এমনটাই জানিয়েছেন মাশরাফী। দেশের ক্রিকেটেরে সবচেয়ে সফল এই অধিনায়ক মনে করেন, বিশ্বকাপে ছিলেন না বলেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের দিন মুমূর্ষু স্ত্রীকে সময়মতো হাসপাতালে নিতে পেরেছিলেন। ফিরে পেয়েছিলেন পরিবার।
পুরো ক্যারিয়ারটাই চোট জর্জর মাশরাফী। লড়াই করে বারবার ফিরে এসে মাশরাফী প্রমাণ করেছেন তিনি ‘যোদ্ধা’। ২০১১ বিশ্বকাপে মাশরাফীর না থাকাটাও সেই বেদনার বা সংগ্রামের অধ্যায়গুলোর একটি।
ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করে ফিরে বিশ্বকাপের আগে আগে ফের চোটে পড়েছিলেন। সেই চোট কাটিয়ে বিশ্বকাপের আগে ঠিক সময়ে ফিট হওয়ার বিশ্বাস রেখেছিলেন মাশরাফী। কিন্তু রফিকুল আলমের নেতৃত্বাধীন নির্বাচক কমিটি ১৯ জানুয়ারি মাশরাফীকে বাইরে রেখেই ঘোষিত করে দেন বিশ্বকাপ স্কোয়াড।
এদিন তামিম তার ফেইসবুক লাইভ শো-তে মাশরাফীর কাছে জানতে চাইলেন, সেই বিশ্বকাপে খেলতে না পারার খারাপ লাগা প্রসঙ্গে।
মাশরাফী বলেন, ‘যখন শুনলাম ২০১১ বিশ্বকাপ বাংলাদেশে হবে, তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল খেলব। আফসোস অবশ্যই আছে। এটা আমি বলব না যে আফসোস নেই, খারাপ লাগা নেই। আমি কাউকে দোষারোপ করিনি কখনো এবং করবও না। … ২০১১ বিশ্বকাপ মিস করা আসলে আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল।’
পুরো ক্যারিয়ারে মাত্র দুইবার সবার সামনে ইমোশনাল হওয়ার কথা বলেন মাশরাফী। যার একটি ওই বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ে কান্নায় ভেঙে পড়া। কিন্তু সেই বাদ পড়ার বিনিময়েই বরং পরিবারকে ফিরে পেয়েছেন বলে মনে করেন মাশরাফী।
মাশরাফী বলছিলেন এভাবে, ‘… এখন একটা জায়গায় আমার অত্যন্ত ভালো লাগে। যদি ২০১১ বিশ্বকাপ আমি খেলতাম, শেষ ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে যেদিন ছিল, ওই দিন আমার ওয়াইফকে ক্লিনিক্যালি ডেথ বলা হয়েছিল। আমি ওকে যখন হসপিটালে ভর্তি করলাম, আমার মেয়ে হলো। ওয়াইফের প্রেগনেন্সি জন্ডিস ধরা পড়ল। বিলিরুবিন ১১ ছিল, ভর্তি রাখার পরও ১২তে ওঠে গেল। ডাক্তার বলল ৯৯ ভাগই এসব ক্ষেত্রে বাঁচে না।’
‘মেয়ের তখন সাত মাস মাত্র হলো, সাত মাসে আসা বাচ্চার জন্যও রিস্ক। কোনো অপশন ছিল না। ওই দিন রাতটা পার করেই পরের দিন অপারেশন করতে হলো। এখন এটাও মনে হয়, যদি আমি বাসায় না থাকতাম, ওই দিন ম্যাচে থাকতাম, হয়তো আমি আমার বউকে হাসপাতালে নিতে পারতাম না।’
তাই এখন সেই বাদ পড়া নিয়ে মোটেও আক্ষেপ করেন না মাশরাফী, ‘ওইটা চিন্তা করলে খারাপ লাগা থেকে ভালো লাগাই এখন বেশি কাজ করে। এ কারণেই হয়তো বা আল্লাহ তায়ালা চায়নি আমি বিশ্বকাপটা খেলি। হয়তো বা এর অছিলায় আমার পরিবার আমি ফিরে পেয়েছি। আসলে আল্লাহ যা করেন সব কিছু ভালোর জন্যই করেন।’
মাশরাফী যোগ করে বলেন, ‘অবশ্যই খারাপ লাগা যেমন আছে, তিন গুন ভালো লাগাও আছে। কারণ এটা আল্লাহ তায়ালার সিদ্ধান্ত।’
তামিমের আড্ডায় এদিন মাশরাফী ছাড়াও ছিলেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন