পঞ্চপান্ডব একত্রে খেলার কারণে ওয়ানডে ক্রিকেটে গত কয়েকবছর ধরেই বেশ অভিজ্ঞ ও পরিণত এক দল বাংলাদেশ। যার সুফল মিলেছে মাঠে, পরিসংখ্যানও কথা বলবে টাইগারদের পক্ষে। কিন্তু ফরম্যাট বদলে সাদা পোশাকের টেস্ট ক্রিকেট বিবেচনায় আনলে, এখনও নবীন শিশুই বলা চলে মুমিনুল হকের বর্তমান দলকে।
মাশরাফি বিন মর্তুজা টেস্ট খেলেন না, নিষেধাজ্ঞার কারণে নেই সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানও। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আসন্ন টেস্টের দলে রাখা হয়নি আরেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। ফলে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে বেশ পিছিয়েই গেছে বাংলাদেশ দল।
ম্যাচের আগেরদিন এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলেন দলের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোও। তার মতে বর্তমান বাংলাদেশ দলটা বিশ্বের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ টেস্ট দল। তাই এ দলের কাছ থেকে সেরাটা পেতে হলে ধৈর্য্য ধরতে হবে সবাইকে। শুধু সমর্থক নয়, সংবাদ মাধ্যমকেও ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করে যান টাইগার হেড কোচ।
ততক্ষণে শেষ হয়ে গিয়েছিল আনুষ্ঠানিক প্রশ্নোত্তর পর্ব। প্রথমে কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো আর পরে অধিনায়ক মুমিনুল হক উত্তর দেন সংবাদ মাধ্যমের নানান প্রশ্নের। সব শেষ হওয়ার পর নিজ থেকেই ডোমিঙ্গো বলেন, ‘আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। আপনারা একটু মাথায় রাখবেন।’
পরে তিনি বলতে থাকেন, ‘বাংলাদেশে ক্রিকেটের উন্মাদনা অনেক বেশি। একইসঙ্গে (ক্রিকেটের জন্য) মিডিয়ার চিন্তা সত্যিই অবিশ্বাস্য। দলও এসব ছাড়া ঠিকভাবে এগুতে পারবে না। তাই বিষয়গুলো স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন; কিন্তু মানুষকে বুঝতে হবে...আপনি যদি বর্তমান টেস্ট দলের দিকে তাকান, (নাজমুল হোসেন) শান্ত মাত্র ৩টি টেস্ট খেলেছে। সাইফ (হাসান) তার দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে। (আবু জায়েদ) রাহী..., দেখে মনে হবে যেনো ৪০ ম্যাচ খেলে ফেলেছে, অথচ তার টেস্টের সংখ্যা মাত্র ৭টি। এবাদত মাত্র ৪ ম্যাচ খেলেছে। এরা খুবই অনভিজ্ঞ।’
পাশে বসা অধিনায়ক মুমিনুল হকের দিকে ইঙ্গিত করে তার (মুমিনুল) হাতে থাকা অনভিজ্ঞ দল এবং সেজন্য বিদ্যমান অসহায়ত্ব তুলে ধরেন ডোমিঙ্গো। বিশ্বের অন্যান্য অধিনায়ক যেখানে অস্ত্র হিসেবে অভিজ্ঞ পেসার বা ক্রিকেটারদের পেয়ে থাকেন, সেখানে মুমিনুলের হাতে তেমন কিছুই যে নেই- সেটি মনে করিয়ে দেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ।
তিনি বলেন, ‘আপনি যদি ভারত বা পাকিস্তানের অধিনায়কের কথা চিন্তা করেন অথবা বিশ্বের অন্য যেকোনো দলের অধিনায়কের কাছে ভালোমানের পেসার আছে যারা অভিজ্ঞ, অনেক টেস্ট খেলেছে। ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রড ১৪০ টেস্ট খেলেছে, অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্ক ৬০, দক্ষিণ আফ্রিকার রাবাদা ৫০, ফিল্যান্ডার ৭০ ম্যাচ খেলেছে। সে তুলনায় আমাদের দলটা খুবই অনভিজ্ঞ।’
নিজের কথার ইতি টানতে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের প্রতি অনেকটা অনুরোধের সুরে হেড কোচ বলেন, ‘আমি বলতে চাচ্ছি যে, সংবাদমাধ্যমকে খেলোয়াড়দের ব্যাপারে আরেকটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। নির্বাচকদেরও কিছু খেলোয়াড়দের ব্যাপারে সময় দিতে হবে। আমাদের দলটা এখন বিশ্বের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ টেস্ট দল। আমাদের ক্রিকেটারদের খেলা মোট টেস্টের সংখ্যা দেখলেই বুঝবেন। এই দল নিয়ে মাত্র একদিনের প্রস্তুতিতে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলা সত্যিই কঠিন। তাই দয়া করে ছেলেদের সময় দিন, ধৈর্য ধরুন- এটাই বলতে চাচ্ছি আমি। সমর্থক এবং সংবাদ মাধ্যম থেকে যে সমর্থনটা আসে, সেটা দলের জন্য সত্যিই অনেক বড় বিষয়। আমাদের ভালো খেলতে হবে, এটা ছেলেরাও জানে। ওরা চেষ্টা করছে। তবে বড় বড় দেশগুলোর বিপক্ষে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত হতে, আমাদের মত অনভিজ্ঞ দলের সময়ের প্রয়োজন। তাই ধৈর্য ধরুন। এরাই আপনাদের গর্বিত করবে। কিন্তু সেটুকু সময় দিতে হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন