ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া হলেও নিজেদের প্রমাণ করতেই লড়বো: মাশরাফি
20 Jun, 2019
বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন এবং এবারের আসরেও অন্যতম ফেভারিট অস্ট্রেলিয়া। ওয়েনডেতে এই দলটির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড মাত্র একটি, তাও ১৪ বছর আগে ২০০৫ সালের ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে যতোই আত্মবিশ্বাসী হোক না কেনো টাইগাররা, নটিংহামের বৃহস্পতিবারের ম্যচে অস্ট্রেলিয়াকেই ফেভারিট মানছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি। তবে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে খাতাকলমের হিসাবের চেয়ে মাঠের হিসাবকে সামনে এনে তিনি বললেন, টিকে থাকার ক্ষেত্রে আমাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এটি। অস্ট্রেলিয়াকে হারানো কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এটা সম্ভব করতেই এবং নিজেদের প্রমাণ করতেই আমরা লড়বো। অবশ্যই জয়ের জন্য খেলবে বাংলাদেশ।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে আত্মবিশ্বাসী মাশরাফি বিন মুর্তজা আরও বললেন, অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে সবসময়ই ভালো করে। টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দলের সঙ্গে খেলতে নামবো আমরা।এখানে নিজেদের সেরাটা দেওয়া ছাড়া আর বিকল্প নেই। শুধু নিজেদের সে্রাটা দিলেই চলবে না। নিজেরা শতভাগ দেওয়ার পর চাইতে হবে যেন অস্ট্রেলিয়া ৭০ ভাগের বেশি দিতে না পারে।
ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপে বার বার হানা দিচ্ছে বৃষ্টি। নটিংহামের আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হতে পারে বৃহস্পতিবার। তবে বিশ্ব মঞ্চে যখন মুখোমুখি এই দুই দল, বৃষ্টির প্রসঙ্গ চলে আসে এমনিতেও। সবশেষ দুটি আইসিসি টুর্নামেন্টেই এই দুই দলের ম্যাচে ছিল বৃষ্টির ছোবল। সেই দুই ম্যাচ থেকে পাওয়া একটি করে পয়েন্ট বড় ভূমিকা রেখেছিল বাংলাদেশের সামগ্রিক সাফল্যে। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল আর ২০১৭ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে ওঠার পেছনে ওই একটি করে পয়েন্ট ছিল মহা মূল্যবান। এবারও একটি পয়েন্ট পেলে বাংলাদেশের অখুশি হওয়ার কথা নয়। তবে পয়েন্ট টেবিলে যে পর্যায়ে আছে দল, তাতে একটি পয়েন্ট খুব সাহায্য সামনে নাও করতে পারে দলকে। মাশরাফিও তাই খেলেই জিততে চান।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, আমরা চাই ম্যাচটা হোক। বৃষ্টি হলে যদি এক পয়েন্টও পাই বা যেটাই হোক তা যেন আমাদের পক্ষে আসে। আমরা চাই আমার চাওয়া এই ম্যাচে যেন ভালো খেলে জিততে পারি এবং দুই পয়েন্ট পাই। এই ম্যাচ জিততে পারলে টুর্নামেন্টে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য আলাদা আত্মবিশ্বাস জোগবে আমাদের।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয়টি এসেছিল ১৪ বছর আগে। সেই ম্যাচে মাশরাফিও খেলেছিলেন। এই লম্বা সময়ে কতোটা বদলেছে বাংলাদেশ? জবাবে মাশরাফি বলেন, ১৪ বছর অনেক লম্বা সময়। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই জয়টি আমরা পেয়েছিলাম এই দেশেই (ইংল্যান্ডে)। এই সময়ে অনেক বদলেছে আমাদের ক্রিকেট। আমাদের ড্রেসিংরুমে এমন বেশ কয়েকজন ক্রিকেটারই আছে, যারা বিশ্বাস করে আমরা হারাতে পারি যে কাউকেই। যদিও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কাজটি সহজ হবে না। বিশেষ করে এই কন্ডিশনে ওদের ফর্ম যা, তাতে কঠিনই হবে। কিন্তু ওই যে বললাম বিশ্বাসের কথা। ভালো শুরু পেলে কী হবে, আপনি আগেই বলে দিতে পারবেন না। আমরা লড়াই করব।
এই বিশ্বকাপে খেলতে আসা বাংলাদেশ দল সম্পর্কে অধিনায়ক বলেন, আগের চেয়ে আমরা ভালো দল, সেটিও প্রমাণ করার উপযুক্ত সময় এটি। বাংলাদেশের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করার পর থেকেই সাকিব অসাধারণ। নিজের ওপর আস্থা রাখে সে। আশা করছি, ওর ভালো খেলাটা অব্যাহত থাকবে। তবে দলের অন্যদেরও সমর্থন লাগবে। আগের ম্যাচে যে সমর্থন সে লিটনের কাছ থেকে পেয়েছে। তামিম এবং সৌম্যও দারুণ শুরু পেয়েছিল। বোলারদেরও নিজেদের মেলে ধরতে হবে। এখানকার (নটিংহ্যাম) উইকেট যেহেতু ব্যাটিং সহায়কই হওয়ার কথা, সুতরাং অস্ট্রেলিয়াকে অল্পের মধ্যে আটকে রাখার জন্য ওদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সও জরুরি। আমাদের মাথায় এখন একটাই চিন্তা, আমাদের ভালো খেলতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা টুর্নামেন্টে টিকে থাকি।
সংবাদ সম্মেলনে নানা প্রশ্নের ভিড়ে মাশরাফি বিন মর্তুজাকে প্রশ্ন শুনতে হলো, বাংলাদেশ কি এই মুহূর্তে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ মানে সাকিব আল হাসান নির্ভর একজনেরই দলে পরিণত হয়েছে? বাংলাদেশ অধিনায়ক তা নাকচ করে দিয়ে বললেন, আমার দলকে ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ বলতে আমি রাজি না। মেনে নিতে হবে আমাদের সাকিব রান করছে। দলের জন্য দারুণ ব্যাপার। কিন্তু অন্যরাও তো ভালো করছে। আগের ম্যাচে মুস্তাফিজের বোলিংয়ের কথাই ধরুন। এক ওভারে দুটি উইকেট তুলে দেওয়ার কথা ভাবুন। সাইফ উদ্দিনও বোলিং করছে এবং উইকেট নিচ্ছে। ক্রিস গেইল কী করতে পারে, আপনারা তো তা জানেনই। ওর উইকেট সাইফ উদ্দিনেরই নিয়ে দেওয়া। কাজেই আমরা ‘ওয়ান ম্যান আর্মি’ নই। কেউ একজন সেঞ্চুরি করলে সে প্রচারমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়ে নেবে, এটাই স্বাভাবিক। সাকিবের পারফরম্যান্সও ব্যতিক্রমী। এই মুহূর্তে ও নিজের সেরা খেলাই খেলছে। কিন্তু মুস্তাফিজ, সাইফ উদ্দিনরাও ভালো খেলছে। মুশির কথা কেন বলছেন না? মিরাজও দারুণ বোলিং করছে।
এদিকে বাংলাদেশ দলকে নিয়ে চিন্তিত অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচপূর্ব সংবাদসম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া দলের সহ অধিনায়ক উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান অ্যালেক্স ক্যারি এটি স্বীকার করে নিলেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই মুহূর্তে দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলছে। সাকিব ও অন্য টপ অর্ডারদের দিকে আমাদের নজর রাখতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের বোলিং আক্রমণ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে। আমাদের দলের অনেক ক্রিকেটার এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলেনি।
তিনি আরও বলেন, সাকিব ছাড়াও দলের বাকি ক্রিকেটাররা দারুণ ছন্দে রয়েছেন।। ছন্দে থাকা যে কোনো দলের বিপক্ষে খেলাটা সবসময় চ্যালেঞ্জিং। আমরাও ভালো ছন্দে রয়েছি। আশা করছি ন্ একটা ভালো ম্যাচ হবে।
ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকায় পাঁচ ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে বাংলাদেশ। তারা দুই ম্যাচ জিতেছে, একটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে। আর দুটি ম্যাচ হেরেছে। সমান ম্যাচে আট পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন