২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফরকালেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন মাশরাফি। অনেকেই মনে করেছিল- তার পক্ষে হয়তো আর কখনোই ফর্মে ফেরা সম্ভব হবে না। তবে সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। গত দু-চার বছরে তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বহু সম্মান অর্জন করেছে। দীর্ঘ ৯ বছর পর আবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে মাশরাফি। তার নেতৃত্বেই শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সিরিজ। তবে টেস্ট ক্রিকেটে লজ্জাজনক পরাজয়ের পর খেলোয়াড়দের মধ্যে যে জড়তা ও মানসিক দুর্বলতা সেটি নিয়েই তিনি প্রথমত কাজ করতে চান। চান ক্রিকেটারদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসটা ফেরাতে।
স্ত্রী সুমনা হক অসুস্থ থাকায় এবারও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরটা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল ম্যাশের জন্য। কিন্তু তারপরও স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তিনি দলের সঙ্গে যোগ দিতে গত পরশু ঢাকা ছেড়েছেন।
এরই মধ্যে ক্রিকবাজকে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। সাক্ষাৎকারটির চুম্বক অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: অসুস্থ স্ত্রীকে দেশে রেখে দলের সঙ্গে যোগ দেয়া আপনার পক্ষে কতটা কঠিন ছিল?
মাশরাফি: এটা সবসময় কঠিন। তবে আমি পুরো বিষয়টি নিয়ে খুব ইতিবাচক ছিলাম। এটা সত্য যে আমার স্ত্রী অসুস্থ। তবে একই সঙ্গে বলছি আমি দলের সঙ্গে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে খুব ইতিবাচক ছিলাম। আমার শুধু আসতে দু-চার দিন দেরি হলো। এর আগেও আমি পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা স্বত্ত্বেও বাইরে খেলতে এসেছি। আমি এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি।
প্রশ্ন: ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসে কেমন লাগছে? ২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন।
মাশরাফি: অনেকেই হয়তো ভেবেছিল। তবে এ নিয়ে আমার মনে কোনও খচখচানি ছিল না। এখনও নেই। আমি বাস্তবতাটা মেনে নিয়েছি। সেটা যত ব্যথারই হোক কোন ব্যাপার না। আমি ওটা ভুলে সামনের দিকে তাকিয়েছি। ২০০৯ সালে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসেছিলাম। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে তার কিছুই পূরণ হয়নি। এসব স্মৃতি মনে করা গুরুত্বহীন।
প্রশ্ন: দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগেও একই অবস্থায় পড়েছিলেন। টেস্টে হেরে দল টালমাটাল ছিল। আপনাকে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে থাকা এক দল গিয়ে সামলাতে হয়েছিল। অধিনায়ক হিসেবে এমন পরিস্থিতিতে পড়লে কী ধরনের কাজ করতে হয়?
মাশরাফি: সবাই প্রস্তুত হয়েই মাঠে নামে। সবাই সবসময় শতভাগ দিতে চায়। এবার টেস্টে আমাদের সবকিছু ঠিকঠাক নক হয়নি। এমনভাবে দল হারলে সকলের মানসিক অবস্থা খুব দুর্বল থাকে এটা সত্য। আমি আগে চেষ্টা করবো- দলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করার।
কিভাবে ওটা কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে আমি চিন্তা করছি। কারণ আমরা ওয়ানডে সিরিজে তাদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আমি মনে করি না যে, আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ভালো ব্যাট করার সামর্থ নেই। কিন্তু আমাদের সেটা করে দেখাতে হবে। মানসিকভাবে আমাদের শক্ত হতে হবে। এছাড়া আমাদের সবকিছু ইতিবাচকভাবে ভাবতে হবে।
এখানকার যে উইকেট তা দেখে বোঝা যায় রান করতে পারলে ভালো কিছু আশা করা যায়। আর তাই আমাদের দলের টেস্ট হতাশা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। আমাদের অবশ্যই ওয়ানডে সিরিজে বড় প্রত্যাশা আছে। যদিও আমাদের সমর্থকরা সম্প্রতি পারফর্মের কারণে বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারছে না। নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলার কোন মানে হয় না। এমনকি আমরা হারলেও আমাদের সঠিক পথটা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি এর আগে বলেছিলেন যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নতুন ক্রিকেটাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। কারণ তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে হারের ওই ধকলের মধ্যে নেই।
মাশরাফি: আসলে কথাটা ওমন ছিল না। আমি আসলে বলতে চেয়েছি যারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাজেভাবে হারের মধ্যে ছিল না তাদেরকে নিতে পারলে হয়তো তারা ভালো করতো। কারণ তাদের মধ্যে ওই মানসিক চাপটা ছিল না। এছাড়া ভালো করার একটা তাড়নাও থাকতো তাদের মধ্যে। এটা তো সত্য যে আপনি যখন হারবেন তখন আপনার মানসিক অবস্থা খারাপ থাকবে। কিন্তু আমাদের ওয়ানডে সিরিজের জন্য যারা পরে দেশ থেকে এসেছে তাদের মধ্যে হারের ব্যাপারটা নেই।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কী এই সিরিজ থেকেই শুরু হচ্ছে। নতুন কোচের চিন্তায় তরুণ ক্রিকেটারদের নিয়ে চিন্তা কতটুকু?
মাশরাফি: দেখুন আমরা বিশ্বকাপের জন্য আর মাত্র ১২ মাস হাতে সময় পাচ্ছি। সুতরাং আপনাকে সামনে এগুতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু জায়গা পূরণ করতে হবে। আর সামনে এগুনোর জন্য সব ধরনের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। দলে নতুন কোচ এসেছেন। প্রথমত তার প্রভাব দলে ব্যাপকভাবে কাজে দেবে।
আমার মনে হয়, আমাদের দলটা মোটুমুটি দাঁড়ানোই আছে। ওদিকে ফিল্ডিং কোচ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এই একই দল নিয়ে এখনো আমরা অন্তত সামনের পাঁচ-ছয় মাস খেলবো। নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে হলে এখনই তাদের দলের সঙ্গে আনতে হবে। কারণ তাদের দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এবং প্রমাণ করার একটা সময় তো দিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি সবসময় বলেন যে, বিশ্বকাপের আগে ২০ সদস্যের দল দেয়া উচিত।
মাশরাফি: সম্ভবত। আমরা যদি তা করতে পারি তবে তা সম্ভবত ভালোই হবে। তাতে করে একই দল নিয়ে অনেকদিন খেলা যাবে। তাছাড়া ইনজুরি নিয়ে বেশি দুশ্চিন্তা থাকবে না। কাউকে সুযোগ দিলে সে সুযোগ কাজে লাগাতে পারবে।
প্রশ্ন: ফাঁকা জায়গার কথা বললেন। আসলে দলে ফাঁকা জায়গা বলতে কি বুঝাতে চাইছেন?
মাশরাফি: আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তামিকের একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজছি। তেমন কাউকে পাচ্ছি না। যারা আসছে তারা ধারাবাহিক নয়। ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরেও আমাদের একজন নির্ভরযোগ্য কাউকে দরকার। সাতে-আটের দিকেও তাই। আমি আটে একজন অলরাউন্ডারকে বেশি সমর্থক করবো। সেখানে অবশ্যই প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনা করে পেসার, বাঁ হাতি স্পিনার বা অফ স্পিনার হাতে থাকতে পারে।
প্রশ্ন: মোস্তাফিজকে নিয়ে কি বলবেন?
মাশরাফি: সে সবেই ইনজুরি থেকে ফিরেছে। সে নিয়মিত উন্নতি করছে। তাকে একটু সময় দিতে হবে। তার যে বিষয়টি আমার সবচেয়ে ভালো লাগে- সে নিজেকে নিয়ে কখনোই দুঃশ্চিন্তা করে না।
প্রশ্ন: সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনও দুশ্চিন্তা আছে কি আপনার?
মাশরাফি: আমার মনে হয় না সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ আছে। কারণ, তারা পরীক্ষিত এবং বহুবার নিজেদের যোগ্যতম হিসেবে প্রমাণ করেছে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন