ব্রাজিলের বিশ্বকাপ শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার। কোস্টারিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে। না, আমি দিবাস্বপ্ন দেখছি না। আমি আধুনিক রিপ ভ্যান উইঙ্কল, এমন ভাবারও কোনও কারণ নেই। বরং যারা ভেবেছিল, পায়ের পাতার চোটের জন্য দীর্ঘ সময় বাইরে থাকার পরেও বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে এসেই ঝড় তুলে দেবে নেইমার, তারাই এখন মুখ লুকোচ্ছে। তাদের বলতে ইচ্ছে করছে— বন্ধু, ফুটবল খেলাটা অতটা বোধ হয় সহজ নয়!
এছাড়া আনন্দবাজার পত্রিকার তার বিশেষ কলামে জিকো লেখেন, 'আমার মনে হচ্ছে, প্রথম ম্যাচে আটকে যাওয়া ব্রাজিলের জন্য শাপে বর হতে পারে। আমরা যদি খুব সহজে জিতে যেতাম বা সহজ গ্রুপে পড়তাম, তা হলে নক-আউট পর্বে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারত। সেই কারণেই বলছি, শুক্রবারই আসল বিশ্বকাপ শুরু ব্রাজিলের। কল্পনা ছেড়ে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে লড়াই শুরু করতে যাচ্ছে ওরা।'
এই ইন্টারনেটের যুগে একটা শিশুও বলে দিতে পারবে, নেইমারের চোটটা কোথায়। আর প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডাররা যে ওর চোট পাওয়া পায়ের বাড়তি 'যত্ন' নেবে, এটা ধরে ফেলার জন্যও কোনও পুরস্কার নেই। কিন্তু ব্রাজিলের এত চিন্তিত হওয়ারও কোনও কারণ নেই। এই বিশ্বকাপে পুরো নজরটাই নেইমারের উপর।
তাতে দল হিসেবে ব্রাজিলের সুবিধে হতে পারে। ফিলিপে কৌতিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, মার্সেলোদের মতো উচ্চমানের ফুটবলারও ব্রাজিল দলে আছে, যারা সাফল্য আনতে পারে। নেইমার নিশ্চয়ই সব দলের কাছে বড় শিকার। কিন্তু অন্যদের উপেক্ষা করলে ভুল হবে।
ফুটবল একটা দলগত খেলা। কখনও একজন ব্যক্তিকে ঘিরে এই খেলায় সাফল্য-ব্যর্থতা ঘোরাফেরা করে না। আমার মনে হয়, এই বিশ্বকাপই সেটা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে শুরু করেছে। এই কথাটা আমি বলছি মেসি, রোনালোদ, নেইমার সব বড় তারকার কথা মাথায় রেখেই। এই বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত আমাকে সব চেয়ে বেশি মুগ্ধ করা ফুটবলারের নাম ক্রিস্টিয়ানো রোনানদো।
তার পরেও আমার সন্দেহ আছে, রোনালদোর পক্ষেও একক প্রচেষ্টায় পর্তুগালকে কাপ দেওয়া সম্ভব কি না। ব্রাজিলকে নিয়ে আবার প্রত্যাশার বহরটাই সব সময় অনেক বেশি। এমন কোনও বিশ্বকাপ আছে, যেটাতে ব্রাজিল ফেভারিট হিসেবে খেলতে আসেনি? এ বারের দলে সব চেয়ে বেশি নজর থাকছে নেইমারের উপর, সন্দেহ নেই। কিন্তু আবারও বলছি, একটা ফুটবলারের উপর নির্ভরশীল নয় ব্রাজিল।
এই দলটায় প্রতিভা শুধুই নেইমারের পায়ে নেই, আছে আরও অনেকের মধ্যে। তবে একটা কথা জানিয়ে রাখি। দু' মাস আগেই আমাদের দশ নম্বরের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। নেইমারের কথাবার্তা শুনে আমার মনে হচ্ছিল, এখন অনেক পরিণত হয়ে উঠেছে ও। ব্রাজিলের বর্তমান কোচের কিন্তু সর্বোচ্চ প্রশংসা প্রাপ্য। তিতেই দলটার চেহারা ফিরিয়ে দিয়েছে।
দুঙ্গার মতো কোচের অধীনে ব্রাজিল পুরোপুরি রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলছিল। সেটা মোটেও ব্রাজিলিয় ঘরানার নয়। ব্রাজিলকে মানুষ পছন্দ করে তার আক্রমণাত্মক চেহারার জন্য। বিনোদনদায়ক ফুটবলের জন্য। সেটাকে বদলে দিলে কী করে হবে? তিতে এসে ব্রাজিলীয় ভঙ্গির দিকে নজর দিয়েছে। ওর সব চেয়ে বড় শক্তি দুর্দান্ত 'গেম রিডিং' এবং ফুটবলারদের চরিত্র বুঝে তাদের পথপ্রদর্শক হওয়া।
কিন্তু তার পরেও বলা যায় না যে, বিশ্বকাপে কাজ খুব সহজ হবে। সুইজ়ারল্যান্ডই সেটা প্রমাণ করে দিয়েছে। অনেকে দেখলাম সুইসদের 'শিশু' বলছে। আমি একেবারেই তাদের সঙ্গে একমত নই। ফিফা র্যাংেকিংয়ে সুইজ়ারল্যান্ড ৬ নম্বরে। কাউকেই হাল্কা ভাবে নেওয়া যায় না।
কয়েকটা ব্যাপারে দ্রুত সতর্ক হতে হবে তিতেকে। যেমন, সুইজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দারুণ শুরু করার পরেও সেই ঝাঁঝটা দ্রুত হারিয়ে ফেলা। কোস্টারিকাও কিন্তু সহজ প্রতিপক্ষ হবে না। সার্বিয়া বিরুদ্ধে দুর্দান্ত ফ্রি-কিকের কাছেই শুধু হার মেনেছিল কোস্টারিকা।ওদের গোলকিপার রিয়াল মাদ্রিদের এক নম্বর প্রহরী কেইলর নাভাস। তাই এই ব্রাজিল দলটার অনেকের সম্পর্কেই খুঁটিনাটি তথ্য জিতে পারবে ও।
আমার মতে, শুক্রবার কোস্টারিকা ম্যাচে ব্রাজিলের আসল লোক কৌতিনহো। এই ছেলেটার উপর নজর রাখুন সকলে। পাউলিনহো আর কাসেমিরোর সঙ্গে কুটিনহোর যুগলবন্দি ব্রাজিলের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারে। আমার মনে হচ্ছে, ব্রাজিল ৪-১-২-২-১ ছকে খেলবে। আমার পূর্বাভাস, হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হলেও ব্রাজিল জিতবে ২-০। ব্রাজিল, যাও নেমে পড়ো!
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন