সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরটা দেখেই বিস্মিত হন তিনি। বিশ্বাসই করতে পারছেন না, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল এমন কাণ্ড করতে পারেন। স্মিথদের বল টেম্পারিংয়ের খবর শুনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল শুধু হতাশই হননি, রীতিমতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।
গতকাল শনিবার কেপটাউন টেস্টের তৃতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় অসি ফিল্ডার ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে একটি হলুদ বস্তু দিয়ে বল ঘষতে দেখা যায়। দিনের খেলা শেষে তিনি ও অসি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ স্বীকার করে নিয়েছেন যে তাঁরা বল টেম্পারিংয়ের চেষ্টা করছিলেন।
খবরটি শুনে চরম হতাশ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠেই এমন খবর পাওয়া খুবই হতাশার। সত্যিই আমি বিস্মিত হয়েছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল এমন প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।’
এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী, ‘দক্ষিণ আফ্রিকায় যা হয়েছে, তা নিয়ে আমার উদ্বেগ জানিয়েছি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে, এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও বলেছি।’
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অস্ট্রেলীয় দলের অধিনায়ক স্টিভ স্মিথকে পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।
তবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া জানিয়েছে, বল টেম্পারিং কেলেঙ্কারির তদন্ত চলাকালে স্মিথই দলের অধিনায়ক থাকবেন।
টেম্পারিংয়ের ঘটনায় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত জানিয়ে প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড বলেন, কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে আমাদের গভর্নিং বডি ঘটনার পুরো চিত্র জানতে চায়।
এর আগে স্থানীয় সময় রোববার দুপুরে বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।
এ সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পাওয়া খবরে আজ সকালে আমরা সবাই অত্যন্ত মর্মপীড়া নিয়ে ঘুম থেকে জেগেছি। এটি পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য যে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল প্রতারণার সঙ্গে জড়িত।
তিনি বলেন, সব মিলিয়ে ক্রিকেটাররা হচ্ছে আমাদের আদর্শের মূর্ত প্রতীক। আর যেখানে ক্রিকেট হচ্ছে সততার অপরনাম, সেখানে আমাদের দল কীভাবে এই ধরনের প্রতারণায় সঙ্গে যুক্ত হন? এটা অবিশ্বাস্য।
টার্নবুল জানান, বল টেম্পারিংয়ের ঘটনায় তিনি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার চেয়ারম্যান ডেভিড পিভারের সঙ্গে কথা বলেছেন। আশা করছেন গভর্নিং বডি এ বিষয়ে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, পিভারের কাছে আমি অত্যন্ত স্পষ্টভাবে এ বিষয় আমার অসন্তোষের কথা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছি।
কেপটাউন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার ৩১১ রানের জবাবে শনিবার সিরিজের তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস থামে ২৫৫ রানে। ৯ উইকেটে ২৪৫ রান নিয়ে দিন শুরু করা অস্ট্রেলিয়া অলআউট হওয়ার আগে এদিন যোগ করে আর মাত্র ১০ রান।
এদিন চা বিরতির আগেই ব্যানক্রফট বল টেম্পারিং করেন। হাতের তালুতে বল ঘষতে থাকেন তিনি।
টিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, হাতের তালুতে করে হলুদ রঙের কিছু একটা ট্রাউজারের পকেটে লুকাচ্ছেন ব্যানক্রফট।
এর পর টিভি আম্পায়ার সতর্কবার্তা দিয়ে খেলা বন্ধ রেখে মাঠে দায়িত্বরত দুই আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলেন।
পরে স্মিথ ও ব্যানক্রফটকে ডেকে কথা বলেন মাঠের দুই আম্পায়ার। ব্যানক্রফটের পকেটে পাওয়া সানগ্লাস কভার দেখে তার বিরুদ্ধে বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
ব্যানক্রাফটের বিরুদ্ধে আইসিসি লেভেল-২ অভিযোগ আনা হয়েছে। এ কারণে ম্যাচ ফির অর্ধেক থেকে শতভাগ গুনতে হবে তাকে। এ ছাড়া পরের টেস্টের জন্য মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
এদিকে বল টেম্পারিং নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ব্যানক্রফট ও অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ স্বীকার করে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যানক্রফট বলেন, বল টেম্পারিং করার জন্য পকেটে থাকা শিরীষ কাগজ দিয়ে তিনি বল ঘষেছিলেন।
এদিকে অধিনায়ক স্মিথ বলেন, যা ঘটেছে তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। অধিনায়ক হিসেবে এমন ঘটনা এটিই প্রথম, আর এটিই শেষ। কিছুটা সুবিধা পেতে এমন কাজ করা হয়েছে। তবে এর সঙ্গে সিনিয়র ক্রিকেটাররাও যুক্ত ছিলেন। এ সময় অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান স্টিভ।
উল্লেখ্য, টিভি ক্যামেরায়ও ধরা পড়ে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের বল টেম্পারিংয়ের বিষয়টি। সেখানে দেখা যায়, পকেট থেকে অসি ক্রিকেটার ব্যানক্রফট হলুদ একটি বস্তু বের করে তা দিয়ে বল ঘষছেন। পরে তিনি সে বস্তুটি ট্রাউজারের ভেতরে ঢুকিয়ে ফেলেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন