গত দুই-তিন বছর কি দারুণ ক্রিকেটই না খেলছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকেই সব গেলো উল্টে। ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে এবার প্রায় নাস্তানাবুদই হতে হয়েছে টাইগারদের। অথচ গত বছর লঙ্কানদের মাটিতে গিয়ে তিন সিরিজই ড্র করে ফিরেছিল বাংলাদেশ। টাইগারদের এমন হারে দুশ্চিন্তায় ভক্তরা। দুশ্চিন্তায় সাবেক ক্রিকেটাররাও। বিশেষ করে টি-টুয়েন্টিতে স্বাগতিকদের পারফরম্যান্স হতাশার মাত্রাটা বাড়িয়েছে বহুগুণে। পুরোনোদের বাদ দিয়ে দলের নতুন মুখে আস্থা। কিন্তু ভাগ্য বদলায়নি। দলে খুব দ্রুত এতো পরিবর্তন করার কারণেই টাইগারদের ভরাডুবি হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের দলের সাবেক ক্রিকেটার আফতাব আহমেদ।
তবে ত্রিদেশীয় সিরিজের শুরুটা দারুণ করেছিল বাংলাদেশ। ১৬৩ রানের রেকর্ড ব্যবধানে লঙ্কানদের হারায় টাইগাররা। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা দু’টি বড় জয়। তবে চতুর্থ ম্যাচে এসেই বুমেরাং। আর জয়ের ধারায় ফিরতে পারেনি বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় কাপের শিরোপা হারায়। টেস্ট সিরিজও। আর ষোলোকলা পূরণ হয় যেন টি-টুয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হয়ে। তাও দুই ম্যাচে বড় ব্যবধানে হার। এরপর স্বাভাবিকভাবেই টাইগারদের পরিকল্পনা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। দুই ম্যাচে যে ছয় নতুন মুখকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সঠিক পরিকল্পনা করতে না পারায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন আফতাব। এতো এতো পরিবর্তনে দল ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে বলেও মনে করেন সাবেক এ ড্যাশিং ব্যাটসম্যান। পরিবর্তনের সঙ্গে একান্ত আলাপে আফতাব জানালেন, ‘আমাদের দলটা ভালোই খেলছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা ফেভারিট হয়েই মাঠে নেমেছি। কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলো। কোচ নেই, তার একটা প্রভাব তো পড়েছেই মনে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, আমরা মনে হয় পরিকল্পনা ঠিকভাবে করতে পারিনি বা করলেও তার সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারিনি। দলে খুব বেশি পরিবর্তন হয়েছে। যেটা আমার কাছে একটু বেশি মনে হয়েছে। বেশি পরিবর্তনে দলে কিছু হলেও ভারসাম্যে প্রভাব পড়ে।’
দু’টি টি-টুয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে ৬ বাংলাদেশী তরুণের। মিরপুরে বৃহস্পতিবার টি-টুয়েন্টি ক্যাপ পান ৪ ক্রিকেটার। তারা হলেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান জাকির হাসান, অল রাউন্ডার আফিফ হোসেন ধ্রুব ও আরিফুল হক এবং বাঁহাতি স্পিনার নাজমুল ইসলাম অপু। এরপর সিলেটে রোববার অভিষেক হয় পেসার আবু জায়েদ রাহী ও অল রাউন্ডার মেহেদী হাসানের। এক অপু ছাড়া যাদের সবাই ছিলেন ব্যর্থ। আর অপু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন প্রায় নয় বছর।
যদিও সাম্প্রতিক সময়ে অভিষেক হওয়া খেলোয়াড়রা পারফর্ম করেই জাতীয় দলে ঢুকেছেন। তারপরও আরও শক্তভাবে তাদের তৈরি করে জাতীয় দলে আনলে ভালো হতো বলে মনে করেন আফতাব, ‘নতুন যারা এসেছে তারা ঘরোয়া লিগে ভালো খেলেই এসেছে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলে ভালো খেলেছে। অন্যান্য ঘরোয়া লিগেও ভালো খেলেছে। সামর্থ্য আছে। তবে আমার মনে হয় দুই একজন খেলোয়াড়ের অভিষেক একটু আগেই হয়েছে। আরেকটু পাকাপোক্ত করে দলে আনলে ভালো হতো। সবারই মেধা আছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে আমার মনে হয় ঘাবড়ে গিয়েছে। তারা মেধাবী সন্দেহ নেই; কিন্তু একটু বেশি আগে (অভিষেক) হয়ে গিয়েছে।’
মূলত খেলোয়াড়দের জাতীয় দলের তাবুতে আনার আগে অন্যান্য প্লাটফর্ম পার হয়ে আসার কথা বললেন আফতাব। ‘এ’ দল কিংবা এইচপি দলের হয়ে দেশ বিদেশে খেললে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ধারণা বাড়বে বলে তার ধারণা। সেক্ষেত্রে এই খেলোয়াড়রাই ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন বলে জানান তিনি। তাই অভিষেক যখন হয়েছেই এবার তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ দেওয়ার পক্ষেই কথা বললেন সাবেক এ ক্রিকেটার।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন