সময়টিভির ওয়েবসাইটে সংবাদ শিরোনাম, "কোহলিকে বিয়ের পর রাতে হেলমেট পরতে বললেন শচীন!"
সংবাদটির ভেতরে লেখা হয়েছে-- "সদ্য বিয়ে করেছেন আনুশকা-বিরাট। আর একারণেই সকলের শুভেচ্ছা বার্তায় ভাসছে এই দুজন। এদিকে কোহলি ক্রিকেটার হওয়ার সুবাদে ক্রিকেটারদের কাছ থেকেই সবার আগে শুভেচ্ছা আসার কথা। আর তারই প্রেক্ষিতে ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার তার টুইটারের কোহলিকে উইশ করে একটি টুইট করেন। আর সেই টুইট নিয়েই যত কাহিনী। টুইটের দেখা যাচ্ছে, কোহলিকে কনগ্রেচুলেশন জানিয়েছেন শচীন। আর তারই উত্তর হিসেবে কোহলি বলেন, ধন্যবাদ স্যার, কোনো টিপস আছে? শচীন তখন উত্তরে জানান 'রাতে হেলমেট পড়বে'।"
(কথিত টুইটের স্ক্রিনশট--)
কালের কণ্ঠ শিরোনাম করেছিলো, "বিরাটকে বাসর রাতে টিপস দিলেন শচীন"। তবে প্রতিবেদনটি পরে সরিয়ে নিয়েছে পত্রিকাটি।
কালের কণ্ঠের রিপোর্টের গুগল থেকে নেয়া স্ক্রিনশট।
মূলধারার দুটি সংবাদমাধ্যমে এমন প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্বাভাবিকভাবেই তা অন্যান্য ছোটোখাটো অনলাইন পোর্টালে কপিপেস্ট হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
বাংলাদেশ প্রতিদিনও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে "বিয়ের রাতে কোহলিকে হেলমেট পরার পরামর্শ ভাইরাল!" শিরোনামে। তবে এই পত্রিকাটি তাদের বিস্তারিত রিপোর্ট শেষে একটি লাইন যোগ করেছে, "আর সেই টুইটারের কথোপকথন ইতোমধ্যেই ফটোশপ হয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে।" যদিও শিরোনাম পড়ে বুঝার উপায় নেই 'ফটোশপ করা' কোনো টুইট ভাইরাল হয়েছে কিনা।
কিন্তু ইন্টারনেটে ভারতীয় গণমাধ্যম ঘেঁটে শচীনের এমন কোনো টুইটারের খবর পাওয়া যায়নি। শচীন কোহলি-অনুশকার বিয়ে নিয়ে যে টুইটটি করেছিলেন সেটি নিয়ে ভারতের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেই টুইটটির স্ক্রিনশট দেয়া হলো এখানে--
শচীনের প্রকৃত টুইটের স্ক্রিনশট।
কিন্তু কোথাও সময়টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত টুইটের হদিস পাওয়া যায়নি। বরং বাজফীড এবং একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে 'ট্রল-মুলক' কিছু টুইট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এরকম একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম, "Just 19 Hilarious Tweets About Anushka Sharma And Virat Kohli's Royal Wedding."
'ট্রল-মূলক' এসব টুইটে সময়টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কথিত টুইটের বক্তব্য (বিয়ের রাতে হেলমেট পরার পরামর্শ) নানাভাবে এসেছে। মূলত হাসিঠাট্টার জন্যই কিছু টুইটার ব্যবহারকারী এসব কথা লিখেছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ঘেঁটে শচীনের সাথে “হেলমেট” এর একটি সংযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি এক সচেতনতামূলক প্রচারণায় ভারতের মোটরসাইকেল আরোহী মেয়েদেরকে হেলমেট পরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। হেলমেট পরার ক্ষেত্রে শচীনের এই পরামর্শকে ভিন্ন ইঙ্গিতে বিরাট কোহলির 'বাসর রাতের পরামর্শ' হিসেবে প্রচার করে একটু মজা করেছেন কোহলি-অনুশকা ভক্তরা। অর্থাৎ, সময়টিভির ওয়েবসাইটে প্রচারিত টুইটটি পুরোপুরিই ভুয়া। একজন সাংবাদিকের যেমন 'সেন্স' থাকা দরকার সেটুকু থাকলে যে কেউ ওই টুইটের ইঙ্গিত বুঝে ওঠতে পারার কথা। এবং এমন ইঙ্গিতপূর্ণ কথা প্রকাশ্যে লেখার মতো ব্যক্তিত্ব শচীন নন, তা বুঝতে পারাও সাংবাদিকের দায়িত্ব; আর সংবাদটির সূত্রহীনতার কথা তো উপরে বলাই হয়েছে। কালের কণ্ঠ বিষয়টি বুঝতে পেরে ঘোষণা ছাড়াই রিপোর্ট সরিয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিন শিরোনাম ও রিপোর্টের প্রথমাংশে ইঙ্গিত না দিলেও শেষের দিকে গিয়ে টুইটটাকে 'ফটোশপড' বলেছে। কিন্তু সময়টিভির ওয়েবসাইটে এখনও বহাল তবিয়ে আছে ভুয়া সংবাদটি।
ফ্যাক্টচেক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন