বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) প্রথম আসরটা ছিল বিদেশি ব্যাটসম্যানদের একচ্ছত্র রাজত্বের। সেরা দশের প্রথম নয়জনই ছিলেন বিদেশি। তবে পরের আসরে দেশি ব্যাটসম্যানরা জ্বলে উঠতে শুরু করেন। শেষ তিনটি আসরেই স্থানীয় ব্যাটসম্যানরা বেশ ভালোই করেছিলেন। সেরা দশের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ছিলেন বাংলাদেশের। এমনকি দ্বিতীয় ও চতুর্থ আসরে শীর্ষস্থানটাও ছিল দেশি ব্যাটসম্যানদের দখলে। কিন্তু পঞ্চম আসরে এসে আবার টুর্নামেন্টের লাগাম চলে গেছে বিদেশিদের হাতে। এবার ব্যাট হাতে ছড়ি ঘুরিয়েছেন গেইল-লুইস-বোপারারা। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যাটসম্যানদের সবাই সেই হিসেবে প্রায় ব্যর্থই।
.
এবারের বিপিএলের শীর্ষ দশে দেশের ব্যাটসম্যান আছেন ৪ জন। আর সেরা বিশে সংখ্যাটা ৮। বিপিএল মানেই ব্যাট হাতে মুশফিকুর রহীমের দাপট। চলতি আসরের আগে ১১৭২ রান নিয়ে বিপিএলের সেরা ব্যাটসম্যানের তালিকায় শীর্ষেই ছিলেন তিনি। কিন্তু সেই মুশফিক এবারের আসরে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ। রাজশাহী কিংসের ডেরায় ফিরে গিয়ে ১২ ম্যাচে ১১ ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ১৮৫ রান। গড় ১৮.৫। একটি মাত্র ফিফটির দেখা পেয়েছেন। ম্যাচ জেতানো কোন ইনিংসই নেই। দুর্ভাগ্যটা সেখানেই শেষ হয়নি। তার বিপিএল শেষ হতেই শুনেছেন আরও বড় দুঃসংবাদ। তিনি আর বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক নন। সাকিব আল হাসান সেখানে।
মুশফিক তো তবু একটা ফিফটি তুলেছেন এবারের আসরে, তবে একটা গাফ সেঞ্চুরিরও দেখে মেলেনি সাকিবের। বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার যদিও মুশফিকের চেয়ে ২৬ রান বেশি করেছেন। অবশ্য ব্যাটও করেছেন দুই ইনিংস বেশি। ১৩ ম্যাচে তার রান ২১১। তবে রংপুরের বিপক্ষে অপরাজিত ৪৭ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচটি জিতিয়েছিলেন। ব্যাট হাতে না পারলেও বল হাতে দারুণ সফল ছিলেন সাকিব। ২২টি উইকেট নিয়ে এবারের আসরের সেরা বোলারই ঢাকা ডায়নামাইটসের এ অধিনায়ক।
মুশফিক-সাকিবের মতো ব্যাট হাতে ব্যর্থ দেশের একমাত্র টি-টুয়েন্টি স্পেশালিষ্ট খ্যাত সাব্বির রহমান। একটি ম্যাচে ৭০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। তবে দল হেরেছে ওই খেলায়। ১০ ইনিংসে ২৩.৪৪ গড়ে ২১১ রান সিলেট সিক্সার্সের এ আইকন খেলোয়াড়ের। একই দলের নাসির হোসেনও ছিলেন খোলসে আবদ্ধই। ১১ ম্যাচে ৮ ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ১৫৮ রান। ব্যর্থ ড্যাশিং ওপেনার সৌম্য সরকারও। তারুণ্য নির্ভর চিটাগং ভাইকিংস তার ব্যাটের দিকেই তাকিয়ে ছিল। তবে উইকেটে সেট হয়ে আউট হয়ে গেছেন প্রায় প্রতি ম্যাচেই। ১১ ম্যাচে ১৫.৬৬ গড়ে তার সংগ্রহ ১৬৯ রান।
সে তুলনায় সফল ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টরিয়ান্সের অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও খুলনা টাইটান্সের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ১০ ইনিংসে ৩৬.৮৮ গড়ে ৩৩২ রান করেছেন তামিম। আর ১২ ম্যাচে ২৮.৩৬ গড়ে ৩১২ রান খুলনা অধিনায়কের। ভালো খেলেছেন কুমিল্লার ইমরুল কায়েসও। ১৪ ইনিংসে তার সংগ্রহ ২৯৯ রান। গড় ২৭.২৮। কিছুটা সফল লিটন কুমার দাস। ১২ ম্যাচে ২১.৭৫ গড়ে করেছেন ২৬১ রান। এছাড়া জাতীয় দলের সব তারকাই ব্যর্থই বলা চলে।
তবে এবারের আসরে দারুণ নজর কেড়েছেন রংপুর রাইডার্সের উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। ১৫ ম্যাচের ১৩ ইনিংস ব্যাট করে করেছেন ৩২৯ রান। ২৯.৯০ গড়ে রান করা এ ব্যাটসম্যান রয়েছেন সেরা পাচের তালিকাতেও। নজর কেড়েছেন ড্যাশিং ব্যাটসম্যান আরিফুল হক। খুলনার হয়ে প্রায় প্রতি ম্যাচেই শেষ দিকে দারুণ ফিনিশিং দিয়েছেন। প্রয়োজনে আগ্রাসী ব্যাটিং দেখিয়েছেন। ১১ ইনিংসে ২৯.৬২ গড়ে ২৩৭ রান করেছেন এ ব্যাটসম্যান। এছাড়া দারুণ খেলেছেন জহুরুল ইসলামও। ১০ ইনিংসে ১৫৭ রান খুব বেশি না হলেও দলের কাজে এসেছিল খুব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন