কোচ পেপ গার্দিওলার উপর জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের ক্ষোভের আগুন কি কোনো দিনই নিববে না? ২০০৯ সালে বার্সেলোনা ছাড়ার পর অনেকবারই কোচ গার্দিওলাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ইব্রাহিমোভিচ। সাবেক সুইডিশ ফরোয়ার্ড সরাসরিই বলেছেন গার্দিওলাই বার্সেলোনা ছাড়তে বাধ্য করেছিলেন তাকে। কিন্তু বারবার অভিযোগের তীর ছুড়েও ইব্রাহিমোভিচের মনের আগুন নিবেনি। মনের ভেতর তুসের আগুন হয়ে জ্বলা ক্ষোভ তাই ঝাড়লেন আরেকটা। এবার শুধু অভিযোগ নয়, রীতিমতো ধুয়ে দিলেন কোচ গার্দিওলাকে। ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচকে আখ্যায়িত করলেন, সবচেয়ে অপরিপক্ক কোচ হিসেবে!
.
টিকি-টাকার মোহনীয় জাদু দিয়ে অপ্রতিরোধ্য বানিয়েছিলেন গার্দিওলা। ৪ বছরে বার্সেলোনাকে উপহার দেন ১৪টি বড় শিরোপা। শুধু বার্সেলোনাই নয়, গার্দিওলার টিকি-টাকা কোচিং দর্শনে পুরো বিশ্বই মুগ্ধ। সময়ের অন্যতম সেরা কোচই মনে করা হয় বার্সেলোনার সাবেক কোচকে।
অথচ ইব্রাহিমোভিচের মতে সেই গার্দিওলা সবচেয়ে অপরিপক্ক, অদক্ষ কোচ! কথা বার্তায় বরাবরই সোজাসাপ্টা ইব্রাহিমোভিচ। যা বলেন সরাসরি। কোনো রাখডাক রাখেন না। নিজের সেই চারিত্রিক গুণের পরিচয়টাই বিশ্ববাসীর সামনে দিলেন তুলে ধরলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরোয়ার্ড। সরাসরিই বললেন, তিন যেসব কোচের সঙ্গে কাজ করেছেন, তাদের মধ্যে গার্দিওলাই সবচেয়ে অপরিপক্ক!
বিশ্ব নন্দিত কোচ গার্দিওলার উপর ইব্রাহিমোভিচের এই ক্ষোভের রহস্য জানতে হলে ফিরে তাকাতে হবে পেছনে। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টারমিলানে অবিশ্বাস্য ৩টি মৌসুম কাটানোর পর অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ২০০৯ সালে বার্সেলোনায় যোগ দেন ইব্রাহিমোভিচ। কাতালন ক্লাবটির হয়েও তার শুরুটা হয়েছিল দারুণ। কিন্তু ৬ মাস না যেতেই কোচ গার্দিওলার সঙ্গে দেখা দেয় তিক্ততা।
কোচ গার্দিওলার সঙ্গে খেলোয়াড় ইব্রাহিমোভিচের সেই ঝামেলার পেছনে ছিলেন লিওনেল মেসি। নিখাঁদ স্ট্রাইকার হিসেবে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইব্রাহিমোভিচের চাওয়া ছিল দলের মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলার। ইন্টার মিলানে নাম্বার ৯ হিসেবেই করেন কাড়ি কাড়ি গোল। কিন্তু গার্দিওলা ইব্রাহিমোভিচকে তার পছন্দের জায়গায় খেলাতে রাজি ছিলেন না। তিনি ইব্রাহিমোভিচের জায়গায় খেলান মেসিকে।
মেসিকে কেন্দ্র করে দলে খেলানোর পরিকল্পনায় কৌশলটাই বদলে ফেলেন গার্দিওলা। কিন্তু মেসিকে সর্বেসর্বা বানানো গার্দিওলার নতুন সেই কৌশল নাম্বার ৯ ইব্রাহিমোভিচের জন্য ক্ষতিকর। নিখাঁদ স্ট্রাইকার হওয়া সত্ত্বেও তাকে খেলতে হয়েছে উইংয়ে! স্বাভাবিকভাবেই ইব্রাহিমোভিচ বিষয়টা মেনে নিতে পারছিলেন না।
পরে ক্লাব কর্তাদের পরামর্শে বিষয়টা নিয়ে তিনি কথা বলেন কোচ গার্দিওলার সঙ্গে। ইব্রাহিমোভিচের দাবি, গার্দিওলা তার সমস্যাটা বুঝতেও পারেন। কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান না করে উল্টো পরের ম্যাচেই বেঞ্চে বসিয়ে রাখেন তাকে! এরপর থেকে নিয়মিতই তাকে বসিয়ে রাখা হয়। এমনকি কোচ গার্দিওলা তার সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ করেন দেন বলে জানালেন ইব্রাহিমোভিচ।
কোচ গার্দিওলার সঙ্গে সেই তিক্ততার জের ধরে এক মৌসুম পরই ইব্রাহিমোভিচ বার্সেলোনা ছেড়ে পাড়ি জমান এসি মিলানে। মিলান থেকে পিএসজি ঘুরে সেই ইব্রাহিমোভিচ এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। নিয়তির কি নিষ্ঠুর খেলা, সেই গার্দিওলাও বায়ার্ন মিউনিখ ঘুরে এখন ইংল্যান্ডে। পালন করছেন ম্যানচেস্টার সিটির কোচের দায়িত্ব।
গত রোববার ম্যানচেস্টার ডার্বিতে দেখাও হয়ে যায় দুজনের। ম্যাচে ইব্রাহিমোভিচের ইউনাইটেডকে ২-১ গোলে হারিয়েছে গার্দিওলার সিটি। হারের সেই হতাশা চাপা রেখে স্কাই স্পোর্টস ইতালিয়ানাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইব্রাহিমোভিচ ধুয়ে দেন গার্দিওলাকে।
মেসিকে একক রাজা বানাতে গিয়ে গার্দিওলা তাকে অবজ্ঞা করেছেন জানিয়ে ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, ‘ন্যু-ক্যাম্পে প্রথম ৬ মাসে আমি প্রচুর গোল করি। এবং আমরা দুটি সুপার কাপ শিরোপাও জিতে নিই। সেখানে আমার প্রথম ৬ মাস তাই ছিল নিখূঁত।’
কিন্তু পরবর্তীতে তার পারফরম্যান্স তার নিখূঁত থাকেনি গার্দিওলা মেসিকে ‘রাজা বানানো’ কৌশলের আশ্রয় নেওয়ায়, ‘কিন্তু এরপর হঠাৎ করেই আমাদের খেলার পদ্ধতি ও ট্যাকটিকস বদলে ফেলা হলো। যা আমার জন্য মোটেও ভালো ছিল না। ক্লাব তাই আমাকে গার্দিওলার সঙ্গে কথা বলতে বলে। আমিও তাই করি। আমি গার্দিওলাকে বলি অন্য খেলোয়াড়দের মতো আমিও মেসির জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি। সে বলে, আমার বিষয়টা সে বুঝতে পারছে। কিন্তু পরের ম্যাচেই আমাকে বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়। এরপর ম্যাচের পর ম্যাচ আমার জায়গা হয় বেঞ্চে।’
ইব্রাহিমোভিচের দাবি, গার্দিওলা ইচ্ছা করলেও একটা সমাধান বের করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ইব্রাহিমোভিচের সঙ্গে কথাই বলাই বন্ধ করে দেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, সে ভালো একটা সমাধান হয়তো বের করবে। কিন্তু না। এরপর সে আমার সঙ্গে কথাই বলত না। এমনকি আমার দিকে তাকাতও না। আমি রুমে গেলে সে বাইরে বেরিয়ে আসত। আমি তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে, সে অন্য কোথাও চলে যেত।’
এরপরই ৩৬ বছর বয়সী ইব্রাহিমোভিচ আসল তীরটা ছুড়েছেন, ‘অথচ সমস্যাটা ছিল তার। একমাত্র তিনিই আমার সমস্যাটা সমাধান করতে পারতেন। ন্যু-ক্যাম্পে প্রথম দিনটির কথা মনে আছে আমার। সে আমাকে বলেছিল, বার্সেলোনার খেলোয়াড়েরা ফেরারি বা পোরশে গাড়ি নিয়ে অনুশীলনে আসে না।’
পরে ক্রোয়েশিয়ান ফরোয়ার্ড মারিও মানজুকিচ এবং ক্যামেরুনিয়ান ফরোয়ার্ড স্যামুয়েল ইতোর সঙ্গেও গার্দিওলা একই ব্যবহার করেছেন দাবি করে ইব্রাহিমোভিচ বলেছেন, ‘আমি বলছি না যে, আমি যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের মধ্যে গার্দিওলাই সবচেয়ে খারাপ কোচ। তবে নিশ্চিতভাবেই সে সবচেয়ে অপরিপক্ক কোচ। কারণ, সে এমন একজন কোচ, যে নিজের সমস্যা সমাধান করে না।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন