বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পঞ্চম আসরের শিরোপা পেল রংপুর। রংপুর-ঢাকার ফাইনাল খেলার মাধ্যমে পর্দা নামে এবারের আসরের। একমাস আট দিন ব্যাপি এই ক্রীড়াজজ্ঞ অনেক আলোচিত-সমালোচিত ঘটনারই জন্ম দিয়েছে।
তামিমের অনন্য উদাহরণ
ক্রিকেট যে ‘জেন্টলম্যানস গেম’ সেটার প্রমাণ আগেও অনেকবার দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। মানবিকতার এমন কিছু ঘটনা ক্রিকেটকে তুলে দিয়েছে অন্য উচ্চতায়। নিছক জয়-পরাজয় ছাপিয়ে মূর্ত হয়ে ওঠে ক্রিকেটীয় চেতনা। ঢাকা ডায়নামাইটসের বিপক্ষে এক ম্যাচে এমনি ক্রিকেটীয় চেতনাবোধের অনন্য এক উদাহরণ তৈরি করলেন তামিম ইকবাল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস অধিনায়ক প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যান কেভিন কুপারকে আউটের পর উইকেটে আবার ফিরিয়ে আনেন কুপারের আউটের ধরনটা ঠিক খেলোয়াড়ি চেতনার সঙ্গে যায় না বলে। ক্রিকেটীয় চেতনাকেই ঊর্ধ্বে তুলে ধরেছিলেন তামিম। ওই সিদ্ধান্তের কারণে তাঁর দল হেরেও যেতে পারত। যদিও উত্তেজনা জমে উঠে ম্যাচটায় জয় হয়েছিলো তামিমদেরই।
গেইলের টর্নেডো
রুপকথার ঘুমন্ত দৈত্য যেন জেগে উঠেছিল রংপুর-খুলনার প্রথম এলিমিনেটর ম্যাচে। আর সেই দৈত্যের তান্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় খুলনা টাইটানসের ফাইনাল খেলার স্বপ্ন। ক্রিস গেইল সেই ম্যাচে ব্যাট হাতে যে তান্ডব চালিয়েছেন তাতে রুপকথার দৈত্যর সঙ্গেই তাঁর তুলনা চলে। মাত্র ৫১ বলে ১২৬ রানের এক টর্নেডো ইনিংস খেলেন গেইল। ২৪৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালানো গেইল ১৪ টি ছক্কা আর ছয়টি চার হাঁকান।
ফাইনালেও দেখা যায় গেইল টর্নেডো। ফাইনাল ম্যাচটিও ছিল যেন গেইলময়। গেইল ভেঙ্গেছেন অনেক রেকর্ড। নিজে করেছেন ১৮টি ছয় ও ৫ চারে ১৪৬* রান। সর্বোচ্চ ৪৮৫ রান করে এবং ৪৯টি ছয় মেরে হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা। আর এই ব্যাটিং পরিসংখ্যান দেখেই বোঝা যায় প্রতিপক্ষের বোলারদের নিয়ে কতটা ছেলে খেলা করেছেন এই ব্যাটিং দানব।
বাজে আম্পায়ারিং
লিগ পর্বে রংপুর রাইডার্স ও সিলেট সিক্সার্সের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের ১৬তম ওভার যখন শুরু হয়, তখন ৫ ওভারে ৫৩ রান দরকার ছিল রংপুরের। কামরুল ইসলাম রাব্বি ওই ওভারে সাতটি বল করেন। যার প্রমান পাওয়া গেছে ক্রিকইনফোর ম্যাচ বিশ্লেষণে। বিপিএলে বাজে আম্পায়ারিংয়ের অভিযোগ আজই প্রথম নয়। এর আগেও আম্পায়ারদের বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে খেলোয়াড়দের মেজাজ হারাতে দেখা গেছে।
আরেক ম্যাচে রংপুরের হয়ে দুর্দান্ত ব্যাট চালাচ্ছিলেন জনসন চার্লস। দলীয় ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে তার ব্যাটেই ভরসা করছিলো রংপুর। কিন্তু ঠিক তখনই নাদির শাহ যেভাবে লেগ বিফোর আউট দিলেন তাতে তাঁর ক্রিকেটীয় জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। কেননা বলটি লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে ফেলেছিলেন ঢাকা পেসার আবু হায়দার রনি। আর সেই বলকেই কিনা তিনি আউট দিয়ে দিলেন!
আবু হায়দার রনির শেষ বলটি নাফিসের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক জহুরুলের ইসলামের গ্লাভসে গেলেও তা জমাতে পারেননি জহুরুল। তখন গ্লাভসের বাইরেও বলের একটি অংশ মাটি স্পর্শ করেছিলো। পরে তা তুলে আউটের আবেদন করেন জহুরুল। সফট সিগন্যাল আউট দিয়ে ফিল্ড আম্পায়ার টিভি আম্পায়ার মনিরুজ্জামানের কাছে পাঠান। টিভি আম্পায়ার রিপ্লে দেখার পর আউট ঘোষণা করেন।
এরকম আরো অনেক বাজে উদাহারন সৃষ্টি করেছেন বিপিএলের আম্পায়াররা।
জাতীয় দলের নিয়মিতদের ব্যর্থতা
এবারের আসরে বড় হতাশা বিষয় ছিল জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড়দের ধারাবাহিক বাজে পারফরম্যান্স। কেউই প্রত্যাশা সম্পূর্ণভাবে পূরণ করতে পারেননি। পুরো বিপিএলেই তাদের ব্যর্থতা দেশের ক্রিকেটের জন্য অশুভ সংকেত বলেই মনে করেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। আর সেই তালিকাটা বেশ বড়ই, আছে বেশ কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের নামও। মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান, মমিনুল হক, লিটন দাশ, সফিউল, আল-আমিন, মেহেদি হাসান মিরাজ সহ বড় বড় অনেক নামই রয়েছে ব্যর্থদের এই তালিকায়।
বিপিএলের হাস্যকর বাইলজ
বিপিএলের গভর্নিং কাউন্সিল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে থাকে। জনপ্রিয়তার প্রশ্নে তাদের সে দাবি একবাক্যে মেনে নিবে সবাই। কিন্তু পরিচালনার ক্ষেত্রে কতটুকু কৃতিত্ব দাবি করতে পারবে গভর্নিং কাউন্সিল? রবিবার রাতে বৃষ্টি বিঘ্নিত দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচে কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা উন্মোচিত হয়ে যায় পুরো জাতির সামনে। বাইলজের নানা অসঙ্গতি হাস্যরসের পাশাপাশি ক্ষোভেরও জন্ম দেয় দর্শকদের মনে।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন