নির্ঘুম রাত কাটিয়েও কাউন্টারে টিকেট পায়নি অনেকে। অথচ ফেসবুকে দ্বিগুণ দামে টিকেট মিলছে সহজেই। একই হারে কালোবাজারীরা টিকেট বিক্রি করছে কাউন্টারের পাশেও। আর কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে- টিকেট নেই। টিকেট নেই। এমন অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর জহুর আহমেদ চৌধুরী ও এম আজিজ স্টেডিয়ামে বিপিএল চট্টগ্রাম আসরের টিকেট কিনতে আসা দর্শকরা।
এদের কারও চোখে রাজ্যের ঘুম, শরীরে ঝিমিয়ে পড়া ক্লান্তি। কিন্তু কন্ঠে টিকেট না পাওয়ার ক্ষোভ। টিকেট না পাওয়া দর্শকদের কেউ কেউ আক্ষেপ করছেন, বিপিএলের এবারের আসরে প্রিয় দল চিটাগং ভাইকিংসের খেলা দেখতে পারবে না বলে। আবার কেউ কেউ বলছেন, শুধু ভাইকিংসের খেলা নয়, ক্রিকেটপ্রেমী বলেই ভালোবেসে খেলা দেখতে চায় তারা।
তাই একটি টিকেটের জন্য জহুর স্টেডিয়ামের বিটাক মোড়ে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। দর্শকদের অভিযোগ, ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকার টিকেট নেই বলছেন টিকেট বিক্রেতারা। এ দামের বেশিরভাগ টিকেট কালোবাজারীদের পকেটে চলে গেছে।
এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট না পাওয়ায় আক্ষেপ নিয়ে সোহান নামে ক্রিকেটপ্রেমী এক তরুণ বলেন, আমার সামনে লাইনে ছিলো মাত্র ১০ জন লোক। কাউন্টারে আসার পর ২০০ টাকার টিকেট চাইলে বিক্রেতা জানান,টিকেট শেষ। এভাবে আরো অনেকেই সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিড়ম্বনার শিকার হন। অথচ ফেসবুকের বিভিন্ন পেজে টিকেট বিক্রির পসরা দেখা যায়। ফেসবুকে সিটিজি সেল বাজার ডটকমে আবদুল রহমান পাপ্পু নামের একটি আইডি থেকে ডজনখানেক টিকেটের ছবি দিয়ে পোস্টে লেখা হয় বিপিএল আগামীকাল ও পরশুদিনের টিকেট আছে ১৭টা, ওয়েস্টার্ন গ্যালারীজ ৬০০ টাকা করে। যোগাযোগের জন্য ০১৬২৮-৭৭৩৩৬৬ নম্বরটি দেয়া হয়। অথচ এই টিকেটের প্রকৃত মূল্য ৩০০ টাকা।
পেইজটিতে আগ্রাবাদ হতে নীল কাব্য আইডি থেকে পোস্ট দেয়া ব্যক্তির সংগ্রহ ছিল আরো বড়। কয়েক ডজন বিভিন্ন তারিখের টিকেট বিক্রি করবে বলে জানান তিনি পোস্টটিতে। তিনি লেখেন, বিপিএল শুক্রবার ম্যাচের ইস্টার্ন গ্যালারির ২০টি টিকেট আছে। ১টি টিকেটের ২টি ম্যাচ দেখা যাবে। প্রতি পিছ ৪০০ টাকা করে। যারা কিনতে আগ্রহী শুধুমাত্র তারাই কমেন্ট করুন। অথচ এই টিকেটের মূল্য ২০০ টাকা। এছাড়া বিভিন্ন আইডি থেকে ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইনভিত্তিক পণ্য বিক্রয় মাধ্যমে টিকেট বিক্রির পোস্ট দিয়েছে কালোবাজারীরা।
নগরীর এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ক্রীড়াসংগঠক বলেন, টিকেট বিক্রী শুরুর ৪৫ মিনিট পর কিভাবে তারা বললেন ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত কোন টিকেট নেই, বোঝা গেলো না। বুথ থেকে নেই বলা হলেও কেউ কেউ অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে ভিন্নপথে টিকেট পাচ্ছেন। ফেসবুকেও দ্বিগুণ দামে কালোবাজারীদের কাছে টিকেট পাওয়া যাচ্ছে। সূত্র জানায়, স্টেডিয়ামে পূর্ব গ্যালারি ৩০০ টাকা, পশ্চিম গ্যালারি ২০০ টাকা, ক্লাব হাউস ৫০০ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল গ্যালারির ৫০০ টাকা, রুফটপ ১০০০ ও ১৫০০ টাকা টিকেটের দাম নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে ২০০, ৩০০ ও ৫০০ টাকার টিকেট বিক্রী হয়ে যায়। টিকেট পেয়েছেন সেরকম ভাগ্যবানের সংখ্যাও খুব একটা বেশি নয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাগরিকা বিভাগীয় স্টেডিয়ামের ভেন্যু ম্যানেজার ফজলে বারী খান রুবেল মানবজমিনকে বলেন, স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ১৮ হাজারের সামন্য বেশি। বিভিন্ন শ্রেণিতে সৌজন্য টিকেট দেওয়া শেষে অবশিষ্ট টিকেট বিক্রির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন দর্শককে দুইয়ের অধিক টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু অনলাইনে বিভিন্ন ক্রয়-বিক্রয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ফেইসবুকে অনেকেই ২০০ ও ৩০০ টাকার নির্ধারিত মূল্যের টিকেট ১০-১৫টিও বিক্রি করতে চাইছেন। যা সত্যিই বিস্ময়কর।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন