উইকেটে যখন ক্রিস গেইল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মতো ব্যাটসম্যান সেখানে ১৫৯ রানের লক্ষ্যটা আর খুব বড় কি? এ দুই ব্যাটসম্যানের যে কারো একারই ক্ষমতা আছে জয় ছিনিয়ে আনার। কিন্তু শুরুতেই ফিরে গিয়েছেন দলের দুই ভরসা। ইনিংসের প্রথম তিন ওভারের মধ্যে টি-টুয়েন্টির দুই বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়েছে রংপুর রাইডার্স। এরপর ফিরেছেন মোহাম্মদ মিঠুনও। ফলে বড় বিপদেই আছে দলটি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রংপুরের সংগ্রহ ৭ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৩ রান। ৬ রান নিয়ে ব্যাটিং করছেন ফজলে মাহমুদ। তার সঙ্গী রবি বোপারা উইকেটে আছেন ১৭ রানে।
.
১৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারটা দেখেই খেলে রংপুর। দ্বিতীয় ওভারে হাত খুলতে গিয়েছিলেন ম্যাককালাম (২)। কিন্তু আফিফ হোসেন ধ্রুবর বলে লং অনে আরিফুল হকের সহজ ক্যাচে পরিণত হন তিনি। পরের ওভারে নেই ক্রিস গেইলও। ইনফর্ম পেসার আবু জায়েদ রাহীর বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন গেইল। ৯ বলে করেছেন ১৬। ফলে চাপে পড়ে যায় মাশরাফির দল। এর পর সে চাপ আরও বাড়িয়ে তোলেন মিঠুন। মিড অনে ঠেলে দিয়ে কিছুটা অলস ঢঙ্গেই দৌড়েছিলেন তিনি। তবে অলস ছিলেন না কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। দারুণ থ্রোতে উইকেট ভাঙলে ৩ রান করে বিদায় নিতে হয় মিঠুনকে। ২৯ রানে ৩ উইকেট নেই ফেভারিটদের!
অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহতে খুলনার ১৫৮
আবারো খুলনা টাইটান্স। আবারো অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। আবারো সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন দলকে। বিপদের সময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। তার দারুণ লড়াইটি শেষ হয়েছে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর নাহিদুলের দুর্দান্ত যৌথ ক্যাচে। তবে তার আগে দলকে এনে দিয়েছেন লড়াকু সংগ্রহ। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান করেছে দলটি।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শুক্রবার টস হেরে ব্যাটিং করতে নামে খুলনা। শুরুটা ভালোই করেছিল তারা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই ১৩ রান দিয়ে ফেললেন রংপুর রাইডার্স অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। টানা দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে রাইলি রুশো (১১) ভয়ংকর রূপেই অবতীর্ণ হলেন। কিন্তু পরের ওভারটি স্পিনার সোহাগ গাজীকে দিয়েছিলেন মাশরাফি। গাজীর বলে বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হলেন রুশো।
এরপর উইকেটে নেমে চমৎকার শুরু ছিল গত আসরের চমক আফিফ হোসেন ধ্রুবর (৯)। রুবেল হোসেনের করা ম্যাচের তৃতীয় ওভারে মারলেন দুটি চার। কিন্তু শেষ বলেই হারলেন রুবেলের অভিজ্ঞতার কাছে। দারুণ ইয়র্কার দিলেন রুবেল। বল আটকানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন আফিফ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। বোল্ড হয়েই ফিরে যান সাজঘরে।
আফিফের বিদায়ের পর অধিনায়কের সঙ্গে দলের ইনিংস মেরামতের কাজ করছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে প্রথম ওভারে ১৩ রান দেওয়ার পর ইনিংসের সপ্তম ওভারে আবার বল হাতে নেন মাশরাফি। তৃতীয় বলেই শিকার করেন শান্তকে (২০)। মাশরাফির লেগ স্টাম্পে থাকা লেন্থ বলটি ফ্লিক করতে গিয়েছিলেন শান্ত। তবে টাইমিংয়ে হেরফের করে সহজ ক্যাচ তুলে দেন মিড উইকেটে। সে ক্যাচ লুফে নিতে কোন কষ্টই করতে হয়নি রুবেলকে।
এরপর ক্যারিবিয়ান নিকোলাস পুরানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ। ৪৩ রানের জুটিও গড়েন। লাসিথ মালিঙ্গার বলে টপ এজ হয়ে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ মিঠুনের তালুবন্দি হয়ে ফিরে যান পুরান (১৬)। তবে অপর প্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ। এবারের আসরের চমক আরিফুল হকের সঙ্গে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। ব্যক্তিগত ৫৯ রানে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে নাহিদুলের তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ। তবে ক্যাচটি নাহিদুলের নামের পাশে থাকলেও এর সম্পূর্ণ কৃতিত্বই ম্যাককালামের। লং অন থেকে মিড উইকেটের দিকে দৌড়ে এসে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচটি ধরে ফেলেছিলেন ম্যাককালাম। তবে শেষ মুহূর্তে শরীরের নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে ছুড়ে দেন নাহিদুলের কাছে। আর তাতেই শেষ হয় মাহমুদউল্লাহর বীরোচিত ইনিংস। ৩৬ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৯ রানের চোখজুড়ানো ইনিংস খেলেছেন।
মাহমুদউল্লাহর আউটের পর রুবেলের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফিরে আসেন আরিফুল হক (১৬)। বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি গত টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের বিস্ময় কার্লোস ব্র্যাথওয়েটও (১১)। ফলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৫৮ রান করে দলটি। রংপুরের পক্ষে ৩৫ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নিয়েছেন রুবেল। মালিঙ্গা ২টি উইকেট পান ২৭ রানের খরচায়। এছাড়া ১টি করে উইকেট পেয়েছেন মাশরাফি, গাজী ও থিসারা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
খুলনা টাইটান্স : ১৫৮/৮ (২০ ওভার) (শান্ত ২০, রুশো ১১, আফিফ ৯, মাহমুদউল্লাহ ৫৯, পুরান ১৬, আরিফুল ১৬, ব্রাথওয়েট ১১, আর্চার ১০*, জুনায়েদ ১, তানভীর ০*; মাশরাফি ১/৩২, গাজী ১/৩০, রুবেল ৩/৩৫, মালিঙ্গা ২/২৭, পেরেরা ১/৩০)।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন