শাকিব খানের সঙ্গে সালমান শাহ’র তুলনা করাকে কেন্দ্র করে ক’দিন আগেই মুখ খুলেছিলেন ঢাকাই ছবির জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। এবার দুই যুগ আগে অমর নায়ক সালমান শাহ’র মৃত্যুর সঙ্গে নিজের নাম জড়ানোর ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে সালমান শাহর মৃত্যু রহস্য ফাঁস করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, হত্যা নয়, আত্মহত্যাই করেছিলেন সালমান শাহ। শাবনূরকে বিয়ে করে দুই স্ত্রী নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু স্ত্রী সামিরা সতীনের ঘর করতে রাজি ছিলেন না। এখান থেকেই পারিবারিক ও দাম্পত্য জীবনে কলহের শুরু।
নব্বইয়ের দশকে সবচেয়ে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে ১৪টি ছবিতে জুটি বেঁধে দর্শকদের হৃদয় জয় করেছিলেন সালমান শাহ। প্রায় সবগুলো ছবিই ছিল ব্যবসা সফল। শাবনূর-সালমান জুটির রসায়নও ছিল আলোচিত। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, শাবনূরের সঙ্গে তার অতিরিক্ত অন্তরঙ্গ সম্পর্ক সালমান শাহর আত্মহত্যার অন্যতম কারণ।
পিবিআই প্রধান বনজ কুমার বলেন, ‘শাবনূরের সঙ্গে এই অন্তরঙ্গ সম্পর্কের পাশাপাশি আরও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রী সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ ছিল সালমান শাহর। এছাড়া মায়ের প্রতি তার অসীম ভালোবাসা এবং জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পুঞ্জিভূত আবেগ অভিমানে রূপ নিয়েছিলে সালমানের। সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনে অপূর্ণতাও ছিল তার।’
পিবিআই’র তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়িকা শাবনূর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কীসের জন্য আমার নাম জড়ানো হচ্ছে! সালমান যদি আত্মহত্যাও করে তাহলে আমার কারণে করবে কেন! আমার নামটা জড়ানোর আগে সবারই একবার ভাবা উচিত ছিল। একজন মৃত মানুষের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে কথা বলাটা খুব বিশ্রী মনে হয়েছে।’
সালমানের মৃত্যুর সঙ্গে নিজের নাম জড়ানোর ঘোর বিরোধিতা করে শাবনূর বলেন, ‘সালমান শুধুই আমার নায়ক ছিল, সহশিল্পী ছিল, বন্ধু ছিল- এর বাইরে আর কোনও সম্পর্ক ছিল না। আমিও আগেও বলেছিল, ওর কোনও ছোট বোন ছিল না, ও আমাকে ছোট বোনের মতো দেখতো, আমি তাকে ভাইয়ের মতো সম্মান করতাম। আমাদের সম্পর্কটা ছিল ভাই-বোনের মতো। ও আমাকে পিচ্চি বলে ডাকতো। ওর মা-বাবাও আমাকে অনেক আদর করতেন। তবে আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও ছিল। কিন্তু অনেক পরিচ্ছন্ন সম্পর্ক ছিল আমাদের, এ নিয়ে এখন কেউ কিছু বললে তা তো আমি মানবোই না।’
প্রায় ২৪ বছর আগের সময়গুলোর কথা উল্লেখ করে শাবনূর আরও বলেন, ‘তখন আমি একটা অবিবাহিত মেয়ে, সালমান বিবাহিত। ওর স্ত্রীর সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমানের স্ত্রী সবসময় আমাদের সঙ্গেই থাকতো। সালমানের সঙ্গে আমার প্রেমের কোনও সম্পর্ক থাকলে সেটা তখন সবাই বুঝতে পারতো। এত বছর পর সালমানের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে এভাবে উক্তি করা মোটেও ভালো লাগছে না। কিছু মানুষ আগেও আমাকে জড়িয়ে গুজব ছড়িয়েছে, এখনও ছড়াচ্ছে।’
শাবনূর বলেন, ‘সালমানের স্ত্রী সামিরা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সালমান নাচ একটু কম পারতো। আমি নাচে পারদর্শী ছিলাম। ও আমাকে নাচ দেখিয়ে দিতে বলতো। আমি আগ্রহ নিয়ে ওকে নাচ দেখিয়ে দিতাম।’
সালমানকে অনেক বড় মনের মানুষ উল্লেখ করে শাবনূর বলেন, ‘বয়সে বড় সবাইকে ও সম্মান করতো। ওর মধ্যে কোনও অহংকার ছিল না। ও অনেক বেশি ভালো ছিল। সবার প্রতি আন্তরিক আর কাজপাগল একটা ছেলে ছিল ও। আমাদের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার, কাজের ক্ষেত্রে একে অন্যের চোখের ঈশারা সহজেই বুঝতে পারতাম।’
শাবনূর কথা বলেছেন সালমানের মৃত্যুর খবর শোনার মুহূর্তটি নিয়েও। ঢালিউডের এই প্রিয়দর্শিনী অভিনেত্রী বলেন, ‘আমি তখন বাসায় ছিলাম। হঠাৎ কে যেন ফোনে সালমানের মৃত্যুসংবাদ দিলো। আমি উল্টো ধমক দিয়ে বলিছিলাম- কী বলো এসব! এর পর আমার বোন আমাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে। আমি হতবাক হয়ে যাই। এরপর সালমানকে দেখতে যাই এফডিসিতে।’
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন