অভিনেতাদের ভোটের ময়দানে নামা ভারতের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নির্বাচনে লড়ছেন। প্রয়াত মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রেগনও আগে অভিনেতা ছিলেন। তবে তিনি রাজনৈতিক জীবনেও খ্যাতি কুড়িয়েছেন বেশ।
তাই অভিনেতারা রাজনীতিবিদ হিসেবে সফল হবেন না এটা ভাবা ভুল। তবু প্রশ্ন উঠছেই! প্রশ্ন উঠছে রাতারাতি একজন অভিনেতা বা অভিনেত্রীকে কি জননেতা হিসেবে মেনে নেওয়া যায়?
কেউ বলতেই পারেন, শুধু রোনাল্ড রেগন কেন, পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও আগে ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। কিন্তু এই মুহূর্তে তাকে তার দেশের এক নম্বর রাজনীতিবিদ বললে ভুল হবে না।
অস্বীকার করার উপায় নেই, ইমরান খানের উত্থানের পেছনে বিরাট অধ্যবসায় রয়েছে। তিনি অনেক পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু যাদের সঙ্গে সেভাবে রাজনীতির সম্পর্ক নেই তাদের? তারা কি পারবেন কোনো একটি দলের দাক্ষিণ্যে দেশনেতা হয়ে উঠতে?
খোদ অমিতাভ বচ্চন, তিনিও কি পেরেছিলেন রাজনীতিতে পা রেখে জনগণের নেতা হয়ে উঠতে? দেশজুড়ে বিরাট ভক্তকূল থাকা স্বত্ত্বেও তিনি পারেননি। পারেননি মিঠুন চক্রবর্তীও। বাকিরাও কম-বেশি একইরকম। সাফল্য হাতে গোনা।
সেই হাতে গোনাদের মধ্যেই জয়ললিতা, রাজ বব্বর, স্মৃতি ইরানী কিংবা জয়াপ্রদা, শত্রুঘ্ন সিনহা নিজেদের নেতা-নেত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
অভিনেতা-অভিনেত্রী মানেই যে রাজনীতিতে অচল সেটা ভাবারও কোনো কারণ নেই। কিন্তু কয়েকটা প্রশ্ন থেকেই যায়। এর মধ্যে মূল প্রশ্ন ‘হোমওয়ার্ক’।
সব বিষয়ের মতোই রাজনীতিতেও অভিজ্ঞতা, বিশ্লেষণ ও চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেটা অভিনেতাদের মধ্যে দেখা যায় কি?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সদ্য পা রেখেছেন দুই অভিনেত্রী নুসরাত এবং মিমি চক্রবর্তী। এর আগে এসেছেন শতাব্দী রায়, তাপস পাল, চিরঞ্জিত, দেব, মুনমুন সেনসহ আরো কয়েকজন। কিন্তু নেতা হিসেবে তাদের উত্তরণ খুব একটা চোখে পড়ার মতো নয়।
মিমি এবং নুসরতের মধ্যেও ‘হোমওয়ার্ক’-এর অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের সভায় লোক জমছে ঠিকই, কিন্তু তাদের বক্তব্যে গভীরতা ও বুদ্ধিমত্তার ছাপ রয়েছে, তা তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থকরাও প্রকাশ্যে বলবে না। একই কথা বলা যায় মাত্রই কংগ্রেসে যোগ দেওয়া নায়িকা উর্মিলা মাতন্ডকরের প্রসঙ্গেও।
মিমি এবং নুসরাতদের কথায় উঠে আসছে মোটামুটি কয়েকটি পরিচিত বাক্য ‘আমি দিদির লোক’, ‘আপনাদের জন্যে কাজ করতে এসেছি’ বা ‘ভোটের পরেও আমাকে দেখতে পাবেন’ ইত্যাদি । মুনমুন সেন তার মা মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের আত্মার শান্তির জন্য ভোট চেয়েছেন বলে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন।
মিমিকে একটি প্রচারে দেখা গেছে মেজাজ হারাতেও, নুসরাত আবার আক্রমণ করে বসলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে, বললেন মোদী ‘ঢপের চপ’ ছাড়া কিছুই দেননি।
রাজনৈতিক আক্রমণ চলতেই পারে, কিন্তু মোদী বা মমতা ভালো করেছেন না খারাপ, সে হিসেব জনগণকে করতে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নরেন্দ্র মোদীর সমালোচনা করেন কিংবা মোদী যখন পাল্টা সমালোচনা করেন তখন কেন এই প্রশ্ন ওঠে না?
মমতার মুখে মোদীর বা মোদীর মুখে মমতার কটাক্ষ শুনতে অবাক লাগে না। কারণ তাদের রাজনীতি চর্চার ইতিহাস। ভারতের রাজনীতিতে তাদের দেওয়ার পাল্লাটা অনেক ভারি এবং তাদের চর্চা বা হোমওয়ার্ক অনেক বিস্তৃত বলেই তাদের বক্তব্যে এটা মানিয়ে যায়।
মূলধারার রাজনীতিতে নবাগত ছাত্রনেতা কানাইয়া কুমারও যখন মোদী, মমতা বা অমিত শাহের কাজের সমালোচনা করেন সেটাও মানানসই হয়ে যায় শুধু তার চর্চা এবং হোমওয়ার্কের জন্যই। কিন্তু যখন অভিনয় জগৎ থেকে সদ্য পা রাখা নবাগতরা ‘মোদী কিছুই করেননি’ বা ‘মমতা কিছু করেননি’ বলেন তখন বোঝাই যায় এটা সস্তা হাততালি পাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছু নয়। আর প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনীতিতে এটা একটা মূল সমস্যা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন