ঢাকাই ছবির অভিনেতা আহমদ শরীফকে ৩৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসার জন্য এই অনুদান দেয়া হয় বলে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে বলা হয়, আহমদ শরীফ ও তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য এই অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনুদানের জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এদিকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে আহমেদ শরীফকে নিয়ে কিছু কথা লিখেছেন আফরীন জামান লীনা নামের একজন। তার সেই লেখাটি শেয়ার করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
লেখাটি তুলে ধরা হলো:- সালটা ২০০৩। আমি খুলনা সরকারী মহিলা কলেজের ছাত্রী তখন। পাশাপাশি তখন ছাত্রলীগের হয়ে বিরোধী পার্টিতে অবস্থান নিচ্ছি।ঐ সময়ে খুলনা সরকারী মহিলা কলেজে ছাত্রী সাংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদন্দিতায় ক্ষমতায় যায় ছাত্রদল। ছাত্রদলের অভিষেক অনুষ্ঠানে তৎকালীন একজন সেলিব্রেটি চলচ্চিত্র অভিনেতাকে অতিথি হিসাবে নিয়ে আসা হয়। অতিথি স্টেইজে উঠে প্রচন্ড দরাজ কন্ঠে ভাষন শুরু করলেন। তার ভাষনের প্রথম লাইন ছিল “মুজিব যদি পিতা হয় আমি কার সন্তান? এরপরের বক্তব্যগুলির ভেতরে তিনি বলেছিলেন “৭১ এ মুজিব ছিল পাকিস্তানের এয়ারকান্ডিশন ঘরে।উনি ঐখানে বসে আপেল আঙুর খাইছেন আর আমার নেতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন”। ঐ সেলিব্রেটি যখন তার জালাময়ি ভাষন জারি রেখেছেন ঠিক সেই মুহুর্তে খুব সুকৌশলে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে তার একজন নিরেট ভক্ত হিসাবে স্টেইজে উঠে যাই আমি সহ আরো দুইজন।ছাত্রদলের মেয়েরা ভাবে আমি তার অনেক বড় ভক্ত তাই তাকে শুভেচ্ছা জানাতে স্টেইজে গেছি।আমি সেই অভিনেতার হাতে ফুলের তোড়াটা দিয়ে আস্তে করে বললাম ” স্যার আমি আপনার উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চাই,মাউথ টাকি একটু দিবেন? শোনার সাথে সাথে তিনি তার হাতের মাইকটা আমার হাতে ছেড়ে দিয়ে সরে দাড়ালেন।আমি তখন যা বলেছিলাম তা হল—-
কিছুক্ষণ আগে আমাদের দেশের জনপ্রিয় খল অভিনেতা “আহমেদ শরীফ ” আমাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন “মুজিব যদি পিতা হয় আমি কার সন্তান? যদিও উনি আমার পিতার বয়সি তাও উনি আমাদের কাছেই উনার জন্ম পরিচয় খুজতে এসেছেন।যা উনার মায়ের কাছে খোজা উচিৎ ছিল।যাই হোক উনার মা হয়ত উনাকে সঠিক উত্তর দিতে ব্যার্থ।তাই আমিই বলছি — মিঃ আহমেদ শরীফ আপনি হচ্ছেন একাত্তরে যেই রাজাকার নামক কিছু শুয়ারের বাচ্চাদের উদ্ভব হয়েছিল তাদের সন্তান।অথবা কোন পাকিস্তানি সেনাপতির সন্তান”।
কথাটা বলার সাথে সাথেই মাইকটা বন্ধ হয়ে যায়। এবং স্টেইজ থেকে আমাকে নামিয়ে আনা হয়। এরপর যা হয় সেইটা বলে নিজেকে আর পিছনের দিনে টেনে না নিয়ে যাই। জাস্ট এইটুকুনুই বলব এরপর থেকে ঐ কলেজে ঠিকমত ক্লাস কখনই করতে পারি নাই। কলেজে যাওয়াটা অনেক রিস্কিই ছিল।
জি আমি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ৩৫০০০০০/- ( পয়ত্রিশ লক্ষ) টাকা অনুদান নেয়া আহমেদ শরীফের কথাই বলছি।আমার জানা নেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই মানুষ গুলিকে কারা নিয়ে যাচ্ছে এবং কেন নিয়ে যাচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নাই। সে যে দলেরই হোক না কেন একজন অসহায়কে সাহায্য করা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু মানুষ রুপি কিছু দাতাল কে সহায়তা করা কি আমাদের অনেক বেশি প্রয়োজন?আহমেদ শরীফ ঠিক কোন ক্যাটাগরিতে অসহায় হিসাবে প্রমাণিত?
আমার জাতির পিতাকে যে সম্মান দেখাতে পারেনা, আমার দেশের স্বাধীনতাকে নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যে প্রহসনের আশ্রয় নেয় তার জন্য আমার এক গাল থুতু ছাড়া কোন আবেগই আসেনা। আর আহমেদ শরীফ আপদ্দমস্তক থুতু পাওয়ার মতই একজন যোগ্য মানুষ।
পরাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের নাম ধরে গান গাইবার জন্য অথবা নিজের গাওয়া গান বিএনপি তাদের দলীয় গান বানিয়েছে বলে শাহনাজ রহমতুল্লাহর মত শিল্পীকে মারা যাবার পরেও আমরা নোংরা কথা বলতে ছাড়ি নাই। অথচ এই কাজটা করবার আগে একবারেও ভাবি নাই সেই শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া জয় বাংলা বাংলার জয় আওয়ামীলীগের দলিয় গান। যা আওয়ামীলীগের জন্যই তার ভাই সুর করেছিলেন আর তিনি গেয়েছিলেন। শাহনাজ রহমতুল্লাহকে আমরা শিল্পী হিসাবে দেখে ভাবতে পারি নাই শিল্পীদের কোন দল নাই অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে জাতির জনককে কটাক্ষ করে কথা বলা আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করে কথা বলা আহমেদ শরীফকে শিল্পী হিসাবে তুলে দেই সরকারি অনুদান। তাও জাতীর জনকের কন্যার হাত দিয়ে। কিছুই বলার নাই।জাস্ট তাকিয়ে দেখা আর অসহায়ের মত বলা
হায়রে স্বাধীনতা।।
হায়রে বাংলাদেশ।।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন