অভিনয়ের দার্শনিক। অভিনয় দিয়ে কি না করেছেন এই অসমান্য, তার অভিনয়ে মানুষ হেসেছে, কেঁদেছে, বিস্মিত হয়েছে, হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে দেখেছে একজন হুমায়ূনের অভিনয় ক্ষমতা কতটা প্রবল, কতটা বিস্ময়কর!
জাত অভিনেতা ছিলেন হুমায়ুন ফরিদী। তার রক্তে মিশে ছিলো অভিনয়, নাট্য জগতের সবাই বুঝে ফেলেছিল ধূমকেতুর জন্ম হয়েছে, একদিন শাসন করবে এই যুবক। সেদিনের হিসেব এক চিলতেও ভুল হয়নি, এরপর টানা তিন দশক নিজের ম্যাজিকাল অভিনয়ে বুঁদ করে রেখেছিলেন পুরো বাঙালি জাতিকে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবচেয়ে সব্যসাচী প্রতিভা তিনি। যখন যেখানে ছুঁয়েছেন, সেখানেই ফুটেছে ফুল। কি অসাধারণ তার অভিনয় দক্ষতা, কি নিখুঁত, কি মোহনীয়!
শুধুমাত্র শারীরিক সমাপ্তি ঘটলেও কর্মই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। ২০১২ সালের, ১৩ ফেব্রুয়ারি আজকের এই দিনে একাকী মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন এই কিংবদন্তি।
হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় জীবনের শুরু ছাত্রজীবনে, মঞ্চ নাটকের মধ্য দিয়ে। তিন দশক চুটিয়ে অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে। যেখানেই গিয়েছেন সাফল্যের বরপুত্র হয়েছেন। সব ক্ষেত্রেই যোগ করেছেন বহুমাত্রিক ব্যঞ্জনা।
টেলিভিশনে তার অভিষেকটা ঘটে আতিকুল হক চৌধুরীর মাধ্যমে। সেটাও অবশ্য আফজাল হোসেন ও রাইসুল ইসলাম আসাদের সুবাদে। সেলিম আল দীনের রচনা এবং নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর নির্দেশনায় ধারাবাহিক নাটক ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ দিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন ফরীদি।
তার অভিনীত অন্যান্য উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্থ’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘ভবের হাট’ ও ‘শৃঙ্খল’।
প্রথম চলচ্চিত্র অভিনয় তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’। প্রথম বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র শহীদুল ইসলাম খোকন পরিচালিত ‘সন্ত্রাস’। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছে- ‘ভন্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের মর্যাদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক ও ‘পালাবি কোথায়’।
বাংলা চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে তিনি যোগ করেছিলেন এক নতুন মাত্রা। ‘সন্ত্রাস’ ছবির মাধ্যমে খলনায়ক চরিত্র শুরু হয় তার। তিনি ‘মাতৃত্ব’ ছবির জন্য সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ২০০৪ সালে।
ফরীদি একবার একটি টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন। সঞ্চালক প্রশ্ন করলেন, নিজের ব্যাপারে আপনার অভিব্যক্তি কি? তার বরাবরের মতই সোজা সাপ্টা জবাব, ‘আগামী ১০০ বছরেও বাংলাদেশে দ্বিতীয় ফরীদির জন্ম হবে না!’ এবং হয়তো তার কথাই সত্যি হবে, এই দেশ, শিল্প আবার কোন হুমায়ুন ফরিদীকে পাবো কিনা সন্দেহ!
‘উত্থান পতন’ সিনেমায় তার একটা ডায়লোগ ছিল – ‘আমারে যারা আইজ চিনো নাই কাইল চিনবা, কাইল না চিনলে পরশু চিনবা চিনতেই হইব নাম আমার রমজান আলী।’ হ্যা, সত্যিই তাই! দেরীতে হলেও তাকে চিনেছে বাংলাদেশ, মৃত্যুর এতগুলো বছর বাদে তিনি ২০১৮ সালে পেয়েছেন একুশে পদক(মরণোত্তর)।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন