দেশের চলচ্চিত্রে নব্বইয়ের দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও সুদর্শন নায়ক সালমান শাহ’র এই নায়কের ৪৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী, আর মা নীলা চৌধুরী।
সালমান শাহ পড়াশুনা করেন খুলনার বয়রা মডেল হাইস্কুলে। একই স্কুলে চিত্রনায়িকা মৌসুমী তার সহপাঠী ছিলেন। ১৯৮৭ সালে তিনি ঢাকার ধানমন্ডি আরব মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট ও ধানমন্ডির মালেকা সায়েন্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন।
সালমান শাহ ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। ক্ষণজন্মা এই তারকার মিডিয়ায় পথচলা শুরু মডেলিং ও নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। তখন তিনি পারিবারিক দেয়া নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন বা ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন।
১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’র মাধ্যমে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ছবিতে সঙ্গে নায়িকা হিসেবে ছিলেন নবাগত মৌসুমী। এ ছবির পর দর্শকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর থেকেই ভক্ত ও দর্শকদের কাছে সালমান শাহ নামেই তিনি পরিচিতি পান।
ছবিটির পর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তখনকার জনপ্রিয় নায়িকা মৌসুমী, শাবনূর, শাবনাজ, শাহনাজ, লিমা সবার সঙ্গেই জুটি গড়েছিলেন তিনি। তবে ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসে তাঁর জীবন খুব বেশি স্থায়ী হয়নি। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভক্তদের ছেড়ে চলে যান পরলোকে। রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি।
সালমান শাহকে বলা হতো ঢাকাই ছবির সাফল্যের বরপুত্র। তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। মাত্র কয়েক বছরের ক্যারিয়ারে তিনি অভিনয় করেন ২৭টি ছবিতে। সালমান শাহ অভিনীত ছবির মধ্যে অন্যতম- কেয়ামত থেকে কেয়ামত, তুমি আমার, অন্তরে অন্তরে, সুজন সখী, বিক্ষোভ, স্নেহ, প্রেমযুদ্ধ, আশাভালোবাসা, তোমাকে চাই, চাওয়া থেকে পাওয়া, স্বপ্নের নায়ক, শুধু তুমি, বুকের ভিতর আগুন, প্রেমি পিয়াসী, মায়ের অধিকার, জীবন সংসার, সত্যের মৃত্যু, স্বপ্নের পৃথিবী, মহামিলন, আঞ্জুমান, দেনমোহর, বিচার হবে, এই ঘর এই সংসার, আনন্দ অশ্রু।
তাঁর জনপ্রিয়তার রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি। রহমান, নাদিম, রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, উজ্জ্বল, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চন প্রমুখ জনপ্রিয় নায়কের যুগের পর ঢালিউডের আকাশে ধূমকেতুর মতো আবির্ভাব ঘটে সালমান শাহের।
মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি ছিলেন আন প্যারালাল, মৃত্যুর পরেও হয়ে আছেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী নায়ক। সালমানের অভিনয় স্টাইল, পর্দায় তার সপ্রতিভ উপস্থিতি আর নায়কোচিত ইমেজ আজও অন্য তারকাদের কাছে অনুকরণীয় হয়ে আছে।
নাটকে অভিনয়:
সালমান ১৯৮৫ সালে বিটিভির আকাশ ছোঁয়া নাটক দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করেন। পরে দেয়াল (১৯৮৫), সব পাখি ঘরে ফিরে (১৯৮৫), সৈকতে সারস (১৯৮৮), নয়ন (১৯৯৫), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬) নাটকে অভিনয় করেন।
নয়ন নাটকটি সে বছর শ্রেষ্ঠ একক নাটক হিসেবে বাচসাস পুরস্কার লাভ করে। এছাড়া তিনি ১৯৯০ সালে মঈনুল আহসান সাবের রচিত উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পাথর সময় ও ১৯৯৪ সালে ইতিকথা ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করেন।
ব্রেকিংনিউজ/
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন