মনোয়ার হোসেন ডিপজল। যাকে বেশিরভাগ মানুষই খল চরিত্রে চেনে ও জানে। অভিনয়ের পথচলা শুরু হয়েছিল ইতিবাচক চরিত্রে। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করেন খলচরিত্রে। দীর্ঘদিন বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেনে এ অভিনেতা। সম্প্রতি ওপেন হার্ট সার্জারি শেষে দেশে ফিরেছেন তিনি। সম্প্রতি মুখোমুখি হলেন বাংলা ইনসাইডারের।
কেমন আছেন?
সম্পূর্ণ সুস্থ তো হতে পারিনি। আবার ডিসেম্বরের ২৫ তারিখে সিঙ্গাপুরে যেতে হবে। এখন চিন্তা-ভাবনা হলো জানুয়ারির ৫ তারিখ থেকে নতুন ছবির শুটিংয়ের কাজ আরম্ভ করা। আর কোনো অসুবিধা হবে বলে মনে হয় না। তখন তো অপারেশনের তিনমাস পূর্ণ হয়ে যাবে। এর মধ্যে আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাব বলে মনে হয়।
অসুস্থ অবস্থাতেও কাজ নিয়ে ভেবেছেন। শুধু ভাবনাতেই থেমে থাকেননি…
একটা ছবির কিছু কাজ বাকি আছে। ওইটার শুটিং শেষ করে নতুন ছবি শুরু করব। ওইটার নাম দিছি ‘পাথরের মন’। নিজের প্রযোজনায় তিনটি ছবির কাজ আছে। আর অন্য একটি প্রযোজকের একটা ছবির কাজ করছি।
সিনেমার নাম ‘পাথরের মন’ রাখার কি কারণ?
‘পাথরের মন’ নাম দেওয়ার পেছনে কারণ আছে। অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে বিষয়টা উপলব্ধি হয়েছে। মেয়ে আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার আমাকে বললেন হুইল চেয়ারে বসতে হবে। তখন কিন্তু আমি হাটছি চলছি। আমি বসতে চাইলাম না। তিনি আমাকে বললেন আপনি অসুস্থ হুইল চেয়ারে বসতে হবে। তাছাড়া আপনার রিপোর্টেও স্পষ্ট আপনি অসুস্থ। একরকম জোর করে হুইল চেয়ারে বসাইয়া দিল। তারা চিকিৎসা করতে পারল না। বলল এখানে চিকিৎসা সম্ভব নয়। সিঙ্গাপুর যেতে হবে। জিজ্ঞেস করলাম, আমি কেন সিঙ্গাপুর যাব? ডাক্তার বললেন, আপনার হার্টে অনেকগুলো ব্লক ধরা পড়েছে! তখনই মনে হলো আমার মরণ যাত্রা শুরু হয়েছে। আমার সঙ্গে মেয়ে আর স্ত্রী ছিল। ওরাও অবাক! আমাকে কী বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তড়িঘরি সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হলো। এরপর তিনদিন আমার আর কিছু মনে ছিল না। ঝামেলা সিঙ্গাপুর গিয়েও হলো। সেখানকার ডাক্তাররা বললেন এখনই কিছু করা সম্ভব নয়। আপনার লিভারের অবস্থা খুবই খারাপ। আগে ওষুধ খেতে হবে। তারপর ওখানে হাত দেওয়া সম্ভব হবে। আসলে আপনার তো বেঁচে থাকার কথাই না। আমি ও আমার পরিবার আবার ভেঙ্গে গেল। ডাক্তার ওষুধ দিল। নিয়মিত চেকআপ করানো হলো। একমাস পর বললেন আপনি ঠিক আছেন। আপনার ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হবে। এইটা আবার কী বাবা!আমি তো বুঝি না। সেখান থেকে কি বেঁচে ফিরতে পারব! ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী তিনজনেই কান্নাকাটি শুরু করল। ওদের থামাবো না আমি শক্ত হব। ডাক্তারকে বললাম যা করেন জলদি করেন। তখন ডাক্তার তওবা করালেন আমি যেন আর সিগারেট বা অন্য কিছু না খাই। এই যে লম্বা জার্নিটা। এসময়টা মনে হয়েছে আমি মরণের পথে হাটছি। হয়তো এভাবে ওভাবে করে সে পথটা লম্বা করা হচ্ছে। এই সময় আমার মনটা আসলে পাথর হয়ে গেছে। মেয়েকে বললাম মা একটা গল্প ভাবছি। বলার পর দেখি ওর চোখে পানি। ও খুব তাড়া দিল নতুন সিনেমার কাজ শুরুর। বাজেট তো ১ কোটি ২০ লাখ ধরে দিলাম।
বাংলাদেশের সিনেমা ভালো অবস্থানে যেতে না পারার কারণ কি হতে পারে?
এজন্য নতুন প্রযোজক ও নতুন পরিচালকদের দায়ী করব। টাকা আছে বলেই যদি সে মনে করে সব বুঝে তাইলে কেমনে হইব। এক বস্তা টাকা নিয়ে কমু একটা ফিল্ম বানাইয়া দ্যান। অমনি ফিল্ম হয়া যাবে? উচিত সিনিয়রদের সঙ্গে আলাপ করা। কেমনে কী করব বুঝা। কিন্তু পাকনামি করতে গিয়ে কোনো প্রযোজক একটার বেশি ফিল্ম বানাইতে পারে না। ওই একটাও মুক্তি দিতে পারে না। কেমনে সে আর একটা সিনেমা বানাবে! আর টাকা ঢালার নামে তো কেউ নেই। টাকা হইলে মনে করে ফিল্মে কিছু লাগাই। ওখানে মনে হয় অনেক মজা আছে। বড়লোকের টাকা হলে যেমন কতকিছু করে। তেমনি ফিল্মেও টাকা লাগায়। আর বিস্তারিত কইলাম না। বুইঝা নিও। আসল কথা হইছে যারা একটা প্রপার ফিল্ম বুঝে, তারা এখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে নেই বললেই চলে।
অনেকদিন ধরেই ইন্ডাস্ট্রিতে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি, গ্রুপিং, দল, সংগঠন। এই সব কি চলচ্চিত্রের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে না?
সিনেমার হলের মালিকরা এক গ্রুপ হয়ে গেছে। সেখানে লিডার আছে। সব সিনেমা তার আন্ডারে। তাকে তেল দেও। জামাই আদর করো। সে যা বলবে যে সিনেমা চালাতে ইচ্ছে হবে। তাই হবে। সে একটা সিনেমা কয়টা হল পেতে পারে ভাগ করে দিবে।
আমরা এখনো কাজ করতে গেলে যতই জুনিয়র হোক ওকে ইজ্জত দেওয়ার চেষ্টা করি। ও কি চাচ্ছে সেটা বোঝার চেষ্টা করি। কারণ ও তো কিছু বলতে আসছে। আমিই যদি সব বুঝি তাহলে সব সিনেমা আমিই বানাতাম। আমি টাকা ইনভেষ্ট করি। আমি কি পারি না আমার নামটা ডিরেক্টরের জায়গায় বসাতে। কিন্তু ওটা তো আমার কাজ না।
পর্দায় দেখে আপনাকে নিয়ে মানুষের মনে কিন্তু একটা ভয়ও তৈরি হয়ে আছে। বাস্তবে না জানি আপনি কেমন……
আমি কিন্তু অনেক মজার মানুষ। আমার আশেপাশের মানুষ জানে। আমার সঙ্গে যদি কেউ একবার কথা বলে বা আড্ডা দেয়, তাহলে সেই সব ভয় পাওয়া মানুষের ভুল ভেঙ্গে যাবে আশা করি। তবে আমি স্ট্রেট কাট লোক। আমার সঙ্গে দুই নাম্বারি করতে এসে কেউ পারবে না। তখন তো ভয় পেতেই হবে। আমি তো কাউকে ছেড়ে কথা বলার মানুষ না।
আপনার প্রযোজিত সিনেমায় আপনি কেন্দ্রীক হয়, এমন অভিযোগ রয়েছে। নতুন ছবিও কি এমন কিছু হবে…
সিনেমা কিন্তু পাবলিক সেন্টিমেন্ট। এই যে তারকার জন্য মানুষ জীবন দিয়ে দিতে চায়। এটা কিন্তু একটা সেন্টিমেন্ট। সব বড় তারকাকে বেশি পারিশ্রমিক দিয়ে কেন সিনেমায় নেয়? এই পাবলিক সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগাতে। গল্প থাকবে অবশ্যই। সেখানে গল্পটা কারও না কারও প্রতি ঝুঁকে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সিনেমার পরিচালককে এটাই বুঝতে হবে। হয়তো আমাকে কোনো ক্যারেক্টার দিলে এই ভরসাটা তারা করতে পারে। তাই আমার রোল বাড়ায়। কিন্তু এখানে কিন্তু আমার হাত থাকে না। আমি পরিচালকগো কই ভালো গল্প প্রেজেন্ট করেন। আমি প্রডিউসার হওয়ার আগে জানছি জিনিসটা কি শুধু টাকা দেওয়া?জেনেশুনে মনে হলো তা না। একটা সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হতে অনেক কিছু করতে হয়।
বাংলা ইনসাইডার
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন