আমন চাল বাজারে চলে এসেছে। চালের মজুদ পরিস্থিতিও ভালো। এর পরও কমছে না দাম। বাড়তি দামেই এখনো বিক্রি হচ্ছে চাল।
তিন সপ্তাহ ধরে আগের চেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, ডিম ও সবজি। গত সপ্তাহ থেকে মাছের দামও কিছুটা কম। তবে প্রায় সব ধরনের মসলাজাতীয় পণ্য ও আটা-ময়দা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, বাড্ডা বাজার ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে এবং ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাজারে নতুন চাল এলেও মোটা চাল ব্রি-২৮ এখনো ৬২ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮০ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি।
বাজার পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্ভাব্য বিশ্বমন্দাকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধান-চাল মজুদ করছেন। এতে বাজারে নতুন চাল এলেও দাম কমছে না। এ জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোকে এখন থেকে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন তাঁরা।
রাজধানীর জোয়ারসাহারা বাজারের মেসার্স ভাই ভাই স্টোরের খুচরা ব্যবসায়ী মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘গত মাসের মাঝামাঝি থেকে বাজারে নতুন চাল এসেছে। পাইকারি বাজারে দাম না কমায় খুচরা পর্যায়ে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। ’
কারওয়ান বাজারের ঢাকা রাইস এজেন্সির মালিক মো. সায়েম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমনের নতুন চালের প্রভাব এখনো পড়েনি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। ’
রাজধানীর সবচেয়ে বড় চালের বাজার বাবুবাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার ধানের দাম বাড়তি থাকার কারণেই বাজারে চালের দাম কমছে না। তবে কিছুদিনের মধ্যে নতুন চাল ব্যাপকভাবে প্রবেশ করবে, তখন চালের দাম কিছুটা কমতে পারে। ’ তিনি বলেন, ‘বাজারে চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত। ’
জোয়ারসাহারা বাজারে চাল কিনতে আসা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘নতুন চাল আসার পরও চালের দাম কমছে না। গত মাসে এক বস্তা মিনিকেট চাল কিনেছিলাম তিন হাজার ৭০০ টাকায়, এখনো একই দাম। অথচ বাজারে ঘাটতি নেই চালের। ’
মসলার বাজার চড়া
বাজারে এখন প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। জিরা কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে এখন মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য মসলার দামও বেশ কয়েক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
রাজধানীর বাড্ডা বাজারের ভ্যারাইটিজ স্টোরের ব্যবসায়ী মো. ইব্রাহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক মাসের মধ্যে পাইকারিতে প্রায় সব মসলার দাম বেড়েছে। জিরা কেজি ছিল ৪৫০ টাকা, সেটি এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়। দাম বাড়ার কারণে মানভেদে এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকায়। ’
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকায়ও গরম মসলার মূল্যবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে। টিসিবি বলেছে, বাজারে গত এক মাসে প্রতি কেজি জিরায় ৭ শতাংশ, দারুচিনিতে ১২ শতাংশ, লবঙ্গে ৫ শতাংশ দাম বেড়েছে।
আটা-ময়দা ও চিনিতে অস্বস্তি
সম্প্রতি চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ১০২ টাকা হয়েছে। প্যাকেট চিনি কেজি ১০৭ টাকা। চিনির দাম বাড়ানোর পরও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। কম্পানিগুলো প্যাকেট চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে এর সংকট দেখা গেছে। বাজারে খোলা চিনি পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কেজিতে ১৩ থেকে ২০ টাকা বাড়তি নিয়ে ১১৫ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আটার দাম বেড়ে এখন এক কেজির প্যাকেট ৭৫ টাকা এবং দুই কেজির প্যাকেট ১৫০ টাকা। খোলা আটা ৬৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খোলা ময়দা ৭৫ টাকা কেজি।
জোয়ারসাহারা বাজারের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকার যে হারে চিনির দাম নির্ধারণ করেছে, সেই হারে আমরা পাইকারি পর্যায়েও কিনতে পারছি না। এতে আমাদের বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ’
মুরগি ও ডিমে কিঞ্চিৎ স্বস্তি
বাজারে গত তিন সপ্তাহ ধরে আগের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি ও ডিম। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা কেজি, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৭০ টাকা। দেশি মুরগি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫০০ টাকায়। ডিমের দাম কমে এখন প্রতি ডজন ১১০ থেকে ১১৫ টাকা।
এ ব্যাপারে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের মেসার্স মা আয়েশা ব্রয়লার হাউসের ব্যবসায়ী মো. আমজাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মুরগির বাজার বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই কম। মূলত চাহিদা কম থাকায় এখন ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমেছে। ’
মাছের দাম কিছুটা কমেছে
মাছ কিছুটা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া আকারভেদে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা ও পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। নলা বা ছোট রুই ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেড় কেজি ওজনের রুই ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা কেজি। বড় রুই বা কাতল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কার্প ২০০ থেকে ২২০ টাকা ও মৃগেল ২০০ থেকে ২১০ টাকা কেজি। এ ছাড়া চাষের শিং, মাগুর, বোয়াল, পাবদা ইত্যাদি আগের চেয়ে দাম কমেছে।
জোয়ারসাহারা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মো. মিলন মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে গত দুই সপ্তাহ ধরে মাছের দাম কেজিতে ২০ জোয়ার ৪০ টাকা পর্যন্ত কমে বিক্রি হচ্ছে। ’
সবজির দাম বেশ কমেছে
সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় বাজারে শীতকালীন সবজির দাম এখন ক্রেতার নাগালে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি একটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, শিম প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাঁচা টমেটো প্রতি কেজি ৫০ টাকা, কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পটোল প্রতি কেজি ৫০ টাকা, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া করলা, শসা, পাকা টমেটো, গাজর, লাউ, কাঁচা পেপে—এসবের দামও এখন কম।
জোয়ারসাহারা বাজারের সবজি বিক্রেতা মো. বকুল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সবজির সরবরাহ বাড়ায় এখন সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। ’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন