ফ্যাসিবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃশাসনে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল-ডাল-তেলসহ সব পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ-হীন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই দাম বাড়ছে জিনিসপত্রের। বাড়তি দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে শেখ হাসিনার সরকার। গত এক সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই চাল-ডাল ও তেলের দাম বিভিন্ন অজুহাতে বেড়েছে। ডিম, পেঁয়াজ ও ব্রয়লার মুরগির বাড়তি দামেও অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চাল, তেল, ডাল, আটা, ময়দা, মসুর ডাল, শুকনো মরিচ, জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গ ও এলাচের দাম বেড়েছে।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ান বাজার, বাদাম-তলী, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত, মৌলভীবাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর, রহমতগঞ্জ, রামপুরা এবং মিরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে টিসিবি।
হাতিরপুল কাঁচাবাজারে সদাই কিনতে আসা স্থানীয় নাঈম আহমেদ জানান, কিন্তু চাল, আটা, তেল, ডালের অনেক দাম। সবজির দামও বেশি। চাল, তেল, ডাল কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। মাংস খুব একটা খাওয়া হয় না। ব্রয়লার মুরগির বদলে চাল, ডাল, তেলের দাম কমলে আমরা একটু শান্তি পাই। চাল, ডাল, তেল কিনতে না পারলে মুরগি দিয়ে কী করবো!
ইমরান জোবায়েদ নামের একজন রিকশাচালক বলেন, ছেলে-মেয়ে নিয়ে টিনশেডের একটি বাসায় ভাড়া থাকি। সারাদিন রিকশা চালিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়ে কোনো রকমে চারজনের সংসার চলে। জিনিসপত্রের যে দাম তাতে মাছ-মাংস সপ্তাহে একদিনের বেশি খাওয়া হয় না। কোনো রকমে ডাল-ভাত খেতে পারলেই আমরা খুশি।
তিনি বলেন, চাল-ডালের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। সবচেয়ে খারাপ মানের চালের দামও কেজি প্রতি ৫০ টাকার নিচে না। অনেক সময় আমি দুপুরে না খেয়ে অথবা কলা-রুটি খেয়ে কাটিয়ে দেই। এরপরও খরচ কমাতে পারছি না। যদি চাল, ডাল, তেলের দাম কমতো তাহলে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেতাম। কিন্তু এগুলোর দাম তো কমে না, বরং দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এতে এক কেজি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫৩ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে এই চালের কেজি ছিল ৪৬ থেকে ৫২ টাকা।
গরিবের মোটা চালের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সরু চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেটের। একই সঙ্গে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দামও বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৭৯ শতাংশ। এতে এখন এক কেজি মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৬০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। সরু চালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ২৪ শতাংশ। এতে এক কেজি সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭২ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই চালের দাম ছিল ৬২ থেকে ৭২ টাকা।
টিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরু, মোটা ও মাঝারি মানের সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে ২৩ নভেম্বর। একই দিন বেড়েছে প্যাকেট আটা, ময়দা, বোতলের সয়াবিন তেল এবং খোলা পাম অয়েলের দাম। তার তিন দিন আগে অর্থাৎ ২০ নভেম্বর বাড়ে খোলা সয়াবিন, মসুর ডাল ও পাম অয়েলের দাম।
সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, খোলা পাম অয়েলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা পাম অয়েলের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। সুপার পাম অয়েলের দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। এতে এক সপ্তাহ আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা লিটার বিক্রি হওয়া সুপার পাম অয়েল এখন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৮৫ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। ফলে সপ্তাহের ব্যবধানে এই তেলের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। বোতলের এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৭৪ শতাংশ। এখন বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা। আর বোতলের পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৮৭৫ থেকে ৯২৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮৭০ থেকে ৯০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বোতলের সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে এক দশমিক ৬৯ শতাংশ।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা প্যাকেট আটার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। প্যাকেটের এক কেজি আটা বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। আর প্যাকেট ময়দার দাম বেড়েছে এক দশমিক ২৭ শতাংশ। এতে এক কেজির প্যাকেট ময়দা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। তবে খোলা আটার দাম এক দশমিক ৬৪ শতাংশ কমে কেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগে খোলা আটার কেজি ছিল ৬০ থেকে ৬২ টাকা।
টিসিবি জানিয়েছে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে এই মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১০০ থেকে ১০৫ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডালের দাম ২ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। তবে ছোট দানার মসুর ডালের দাম এক দশমিক ৮২ শতাংশ কমেছে। এক সপ্তাহ আগে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এই মসুর ডাল এখন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়ার তালিকায় থাকা আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। তবে দেশি রসুনের দাম ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ থেকে ৯০ টাকা।
জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৭০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। শতকরা হিসেবে দাম বেড়েছে এক দশমিক ৯০ শতাংশ। ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ দাম বেড়েছে দারুচিনির। এতে এক কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৫২০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লবঙ্গের দামও বেড়েছে। এখন প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা। আর ছোট এলাচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল এক হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার টাকা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন