দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত অনেক প্রতিষ্ঠানের ঋণের বোঝা বাড়ছেই। আর তার বলি হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত কিছু ব্যাংক। ব্যাংক ঋণ সহায়তা ও ভর্তুকি দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না দেশের বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রায়ত্ব প্রায় ৩৩টি প্রতিষ্ঠান সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করছে না। ৫টি ব্যাংকের কাছ থেকে এসব ঋণ নেয়া হয়েছিল। ব্যাংকগুলো হলো- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক।
২৯ হাজার কোটি টাকার ঋণের মধ্যে নগদ ঋণ বকেয়া রয়েছে ১৬ হাজার ৩৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। আর নন-ফান্ডেড বা এলসি, ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে নেয়া ঋণ বকেয়া রয়েছে আরও ১৩ হাজার ৫০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর কাছে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শ্রেণিবিন্যাসিত ঋণের জুলাই ২০২০ ভিত্তিক বিবরণীতে এসব তথ্য উঠে গেছে।
সরেজমিনের তথ্যে জানা গেছে, ওই ৫টি ব্যাংক বহু চেষ্টা করেও ৩৩ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা বকেয়া ঋণ আদায় করতে পারছে না। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বকেয়া ঋণের একটি প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ৩৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে সরকার বছর বছর শত শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে সচল রেখেছে। এর মূল কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের দক্ষতা ও জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে। ফলে প্রতিবছর উৎপাদনের চেয়ে অপচয় বেশি হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত এসকল প্রতিষ্ঠানের অপচয় ও দুর্নীতি রোধ করা গেলে সংস্থাগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
ঋণের বিবরণী অনুযায়ী, শিল্প খাতের ৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী এবং বেসিক ব্যাংকের পাওনা ৯ হাজার ৭৮৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এ ৬ প্রতিষ্ঠান হলো বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফআইডিসি)।
এই ৬টি প্রতিষ্ঠান ৫ ব্যাংকের কাছ থেকে ফান্ডেড বা নগদ ঋণ নিয়েছে ৮ হাজার ৬৩৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। আর নন-ফান্ডেড ঋণ বা এলসি, ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে নিয়েছে ১ হাজার ১৬২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
এরমধ্যে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) এর কাছে এই ৫টি ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ঋণ পায়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ৫ ব্যাংক ফান্ডেড ঋণ ৬ হাজার ৬১০ কোটি ২৮ লাখ টাকা আর নন-ফান্ডেড ঋণ পায় ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক খাতের ৩ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বাংলাদেশ জুট করপোরেশন এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) কাছে ৫টি ব্যাংক মোট ২ হাজার ৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ পায়। যার মধ্যে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে ব্যাংকগুলোর সর্বোচ্চ পাওনা ১ হাজার ৭৫৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এছাড়াও কৃষি ও মৎস খাতের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেনের কাছে সরকারি ৩টি ব্যাংকের পাওনা ২ হাজার ২৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যার মধ্যে সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ৪৯৪ কোটি, জনতা ৭৫৯ কোটি ৪৬ লাখ এবং রূপালী ব্যাংক পায় ২১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
বিপুল পরিমাণ এই ঋণের মধ্যে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ খাতের ৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের পাওনা ৭ হাাজর ৮৯১ কোটি টাকা। যার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কাছে ৭ হাজার ৫৪৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা পায় ব্যাংক।
পাওনা ঋণের মধ্যে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের ৬ প্রতিষ্ঠানের কাছে ৫ ব্যাংকের বকেয়া ৫ হাজার ৬৭৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলোর পাওনা এ ঋণ পরিশোধ করা উচিত। কারণ এই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বছরজুড়ে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করে থাকে। এ ব্যাপারে সরকারকে সুনজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন