একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রথম রমজান মাস আসায় জাকাতের কাপড়ের ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করেছিলেন এবার ভালো ব্যবসা হবে। তবে ব্যবসায়ীদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। শেষ সময় এসে হতাশায় দিন কাটছে তাদের।
ব্যবসায়ীদের অভিমত, এবার যাকাতের কাপড়ের বিক্রির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় বেশ কম। নির্বাচনী বছর হওয়ায় গত বছর (২০১৮ সাল) যাকাতের কাপড়ের ভালো ব্যবসা হয়। সে হিসাবে মনে করা হয়েছিল নির্বাচনের পর প্রথম রমজান মাস আসায় এবারও ভালো ব্যবসা হবে। কিন্তু এবার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সম্পদ শুদ্ধ করতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা যাকাত দিয়ে থাকেন। বছরের যেকোনো সময় এ যাকাত দেয়া গেলেও অতিরিক্ত সওয়াবের আশায় একটি বড় অংশই বেছে নেন পবিত্র রমজান মাসকে।
সম্পদের যাকাত হিসেবে গরিবের মাঝে বিতরণ করা হয় নগদ অর্থের পাশাপাশি পরিধের কাপড়। যে কারণে রোজা আসলেই বেড়ে যায় যাকাতের কাপড় বিক্রি। আর যাকাতদাতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যবসায়ীরাও নেন বাড়তি প্রস্তুতি।
তারা জানান, যাকাতের কাপড়ের মূল বিক্রি সাধারণত ১৫ রোজার মধ্যেই হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ২০ রোজা পার হয়ে গেছে। ঢাকার বাইরে থেকে যারা যাকাতের কাপড় কেনেন ইতোমধ্যে তাদের কেনা শেষ। এখন ঢাকার স্থানীয়রা হয় তো যাকাতের কাপড় কিনবেন। তাতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে তা নয়।
রাজধানীতে যাকাতের পোশাক যে কয়টি মার্কেটে পাইকারি বিক্রি হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোড়ে অবস্থিত পীর ইয়ামেনী মার্কেট। এ মার্কেটটির নিচতলায় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করা হয়।
শনিবার সরেজমিন এ মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা থরে থরে যাকাতের শাড়ি, লুঙ্গি সাজিয়ে রেখেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের সামনে শোভা পাচ্ছে ‘এখানে যাকাতের শাড়ি বিক্রি করা হয়’। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে শোভা পাচ্ছে ‘এখানে যাকাতের লুঙ্গি বিক্রি করা হয়’। তবে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।
মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এবার যাকাতের যেসব শাড়ি বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে নিম্নমানের শাড়ির দাম প্রতি পিস ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এর থেকে একটু ভালো মানের শাড়ির দাম ৩২০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা। আর যাকাতের স্ট্যান্ডার্ড মানের শাড়ির দাম ৪০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। তবে এর থেকেও বেশি দামের শাড়ি যাকাতের কাপড় হিসেবে কেউ কেউ কিনছেন।
অপরদিকে নিম্নমানের লুঙ্গির দাম প্রতি পিস ১৮০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা। এর থেকে ভালো মানের লুঙ্গির দাম ২৮০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা। ৩০০ থেকে ৩২০ টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া লুঙ্গিগুলোই যাকাতের কাপড় হিসেবে সব থেকে স্ট্যান্ডার্ড মনে করা হয়।
যাকাতের কাপড়ের দামের বিষয়ে কাজী শাড়ি হাউজের মো. জাহিদ বলেন, ‘নির্বাচনের বছর হওয়ায় গত বছর যাকাতের কাপড় বেশ ভালো বিক্রি হয়েছিল। আমাদের ধারণা ছিল এবারও বেশ ভালো বিক্রি হবে। বিক্রি পরিস্থিতি মোটামুটি হলেও আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই যাকাতের কাপড় বিক্রিতে এক ধরনের মন্দা ছিল। গত বছর নির্বাচন কেন্দ্র করে বেশ ভালো বিক্রি হয়। এবার এখন পর্যন্ত যা বিক্রি হয়েছে গত বছরের অর্ধেকের সমান হবে না। ঈদের আগে আর যে কয়দিন বাকি আছে তাতে বিক্রি খুব একটা বাড়বে বলে মনে হয় না।’
মার্কেটটিতে যাকাতের কাপড় বিক্রি করে এমন আরেকটি প্রতিষ্ঠান সুগন্ধা লুঙ্গি বিতানের মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঢাকার বাইরের ক্রেতারা ইতোমধ্যে যাকাতের কাপড় কেনা শেষ করেছে। এখন ঢাকার আশপাশের কিছু মানুষ হয় তো কিনবেন। তবে মূল যে বিক্রি তা শেষ হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে মাঝে মধ্যে এক-দু’জন করে ক্রেতা আসবেন।’
তিনি বলেন, ‘এবার কোনো মারামারি, ভাঙচুর নেই। দেশে অস্থিতিশীল কোনো অবস্থাও নেই। তাই আমাদের ধারণা ছিল এবার যাকাতের কাপড় বেশ ভালো বিক্রি হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। গত বছরের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের বিক্রি অর্ধেক। তবে দুই-তিন বছর আগের সঙ্গে তুলনা করলে বিক্রি মোটামুটি ভালো।’
পীর ইয়ামেনী মার্কেটের পূর্বদিকে অবস্থিত গুলিস্তান খদ্দর বাজার শপিং কমপ্লেক্সও কয়েকজন ব্যবসায়ী যাকাতের কাপড় বিক্রি করেন। এমন একটি প্রতিষ্ঠান আঁচল শাড়ি হাউজ। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনোয়ার হোসেন ইকবাল বলেন, ‘যাকাতের শাড়ি-লুঙ্গি দরদাম করে বিক্রি হয় না। সব দোকানে যাকাতের কাপড়ের দাম প্রায় একই রকম। তবে কোনো কোনো ক্রেতা যাকাতের শাড়ি হিসেবে দামি কাপড়ও কেনন। যে কারণে দামের তারতম্য থাকে।’
এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘কয়েক বছর ধরেই যাকাতের কাপড় বিক্রির পরিস্থিতি খুব একটা ভালো না। এর একটি কারণ হতে পারে এখন অনেকেই কাপড়ের পরিবর্তে যাকাত হিসেবে নগদ টাকা দেন। তবে গত বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ায় যাকাতের কাপড় তুলনামূলক বিক্রি বেশি ছিল। তবে এবার আগের বছরের মতো বিক্রি হয়নি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন