জনতা ব্যাংকঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের আট কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করতে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে কোনও বাছবিচার ছাড়াই ব্যাংকটির ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ক্রিসেন্ট লেদারকে হাজার কোটি টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থ তুলে দেওয়ায় গত ২২ মার্চ (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা সামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে এই সভায় অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকটির পর্ষদ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
পরিচালনা পর্ষদ থেকে যাদের সাময়িক বরখাস্ত করার জন্য বলা হয়েছে, তারা হলেন, ইমামগঞ্জ শাখার মহাব্যবস্থাপক রেজাউল করিম, একই শাখার ডিজিএম মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, একে এম আসাদুজ্জামান, এজিএম আতাউর রহমান, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মগরেব আলী, সিনিয়র অফিসার মনিরুজ্জামান, অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাইফুজ্জামান। এছাড়া, ইমামগঞ্জ শাখার তৎকালীন ডিজিএম ও বর্তমান ডিএমডি (অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক) ফকরুল আলমকে এই ঘটনার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুছ ছালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার বোর্ড থেকে সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই বোর্ডের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে উল্লিখিত কর্মকর্তাদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার চিঠি দেওয়া হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি আগামী বোর্ড সভায় তুলে ধরা হবে।’
প্রসঙ্গত, এরআগে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনেও ইমামগঞ্জ শাখার (পরিদর্শন চলাকালীন) ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন (ডিজিএম), তার আগে ব্যবস্থাপক রেজাউল করিমসহ (মহাব্যবস্থাপক) শাখার সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, চামড়া খাতের কোম্পানি ক্রিসেন্ট লেদারের রফতানির অর্থ দেশে না আসলেও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে একের পর এক বিল কিনেছে জনতা ব্যাংক। এভাবে বাছবিচার ছাড়াই ব্যাংকটির পুরান ঢাকার ইমামগঞ্জ শাখা থেকে ক্রিসেন্ট লেদারকে দেওয়া হয় এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। একক গ্রাহকের ঋণসীমার নিয়মও এ ক্ষেত্রে মানা হয়নি। সম্প্রতি কিছু অর্থ ফেরত আনার পর এখন ব্যাংকের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৯৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের বর্তমান মূলধন অনুযায়ী একজন গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৭৪৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিল বকেয়া থাকার পরও নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রিসেন্ট লেদারের নতুন বিল কিনেছে জনতা ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখা। প্রতিষ্ঠানটির রফতানির বিপরীতে সৃষ্ট ৫৭০টি বৈদেশিক বিনিময় বিল ক্রয় (এফডিবিপি) করে গ্রাহককে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকা দেওয়া হয়। আগের বিল মেয়াদোত্তীর্ণ থাকা অবস্থায় পরের বিল কেনার নিয়ম না থাকলেও তা কেনা হয়েছে।
জানা গেছে, হংকংয়ের বায়ো লিডা ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৫০ ডলারের চামড়াজাত পণ্য রফতানি দেখানো হয় গত বছরের ২৭ এপ্রিল। নিয়ম অনুযায়ী, রফতানি হওয়ার ১২০ দিনের মধ্যে ওই অর্থ দেশে আনা বাধ্যতামূলক। আর অর্থ না এলে উপযুক্ত কারণ দর্শানো ছাড়া রফতানিকারককে কোনও ঋণ সুবিধা বা তার বিল কেনা যাবে না। তবে ক্রিসেন্ট লেদারের অর্থ দেশে না এলেও একের পর এক বিল কিনেছে জনতা ব্যাংক, যা ব্যাংকিং আইন-কানুনের লঙ্ঘন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন