যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনের ২০২৪ সালের বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। তিনি জয় করলেন পর্তুগালের মানুষের হৃদয়। পর্তুগিজ ও বাংলাদেশ কমিউনিটিতে তিনি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। শুরুতেই বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেনফরমসো এলাকায় মেরিনা তাবাসসুমের প্রদর্শনীর আমন্ত্রণপত্র ও পোস্টার বিতরণ করেন লিসবনের সেন্ট্রো কালচারাল বেলেমের তিন পর্তুগিজ কর্মকর্তা। পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের প্রাণকেন্দ্র বেলেম কালচারাল সেন্টারে নিচতলার প্রদর্শনী হলে মেরিনা তাবাসসুমের একক স্থাপত্যে নকশার প্রদর্শনী চলেছে ১৮ই এপ্রিল ২০২৪ থেকে ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা। প্রদর্শনীতে মেরিনা তাবাসসুমের নকশা ছাড়াও বাংলাদেশের গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি, তালগাছের ডোংগা নৌকা, মাছ ধরার সরঞ্জামসহ নানা উপকরণ প্রদর্শিত হয়েছে।
স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম ১৯৪৭ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। হলিক্রস স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা শেষ করে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট থেকে স্নাতক হন ১৯৯৪ সালে। পরের বছরই তিনি স্থপতি কাশেফ চৌধুরির সাথে গঠন করেন আরবানা। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন নিজস্ব স্থাপত্য ফার্ম মেরিনা তাবাসসুম আর্কিটেক্ট। যার প্রধান স্থপতি তিনি।
২০১২ সালে মেরিনা তাবাসসুমের নান্দনিক স্থাপত্য নকশায় আবদুল্লাহপুরের ফায়েদাবাদে নির্মিত হয় বায়তুর রউফ মসজিদ।
এই মসজিদের স্থাপত্যশৈলী তাকে আন্তর্জাতিক পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। বায়তুর রউফ মসজিদের শৈল্পিক স্থাপত্যের জন্য তিনি ২০১৬ সালে আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার পুরস্কার পান। ২০১৮ সালে পান জামিল প্রাইজ। সুলতানি আমলের স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত বায়তুর রউফ মসজিদে নেই কোন গম্বুজ। কৃত্রিম কোনকিছু ছাড়াই মসজিদের ছাদ ও দেয়ালের ছিদ্র দিয়ে ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে আলো ও বাতাস প্রবেশ করতে পারে। ২০২০ সালে ব্রিটিশ সাময়িকী প্রসপেক্ট এর ৫০ চিন্তাবিদদের মধ্যে শীর্ষ ১০ জনের মধ্যে মেরিনা তাবাসসুম ছিলেন তৃতীয়। ২০২১ সালে মর্যাদাপূর্ণ সন পদক পান তিনি। ২০২২ সালে লিসবন আর্কিটেকচার ট্রিয়নালে মিলেনিয়াম লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন।
১৭ই এপ্রিল ২০২৪, বিশ্ববিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির তালিকায় উদ্ভাবক শ্রেণিতে স্থান পান মেরিনা তাবাসসুম। তালিকায় তাবাসসুমের সাথে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ইরানের মানবাধিকারকর্মী নার্গিস মোহাম্মাদী, রাশিয়ার ইউলিয়া নাভালনায়া, অ্যানিমেটর হায়াও মিয়াজাকি, ফরমুলা ওয়ান রেসার ম্যাক্স ভাঙাপেন, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই ব্রিটিশ পপ তারকা জুয়া লিপা, পোলান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কসহ পরিচিত অনেক মুখ।
টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে, সাধারণত পুরস্কারজয়ী স্থপতিদের সঙ্গে তাদের নিঃস্বার্থ কাজের বিষয়টি তেমন উল্লেখ করা হয় না। কিন্তু মেরিনা তাবাসসুম সাধারণ নন। তিনি স্থাপত্যচর্চায় এমন একটি রীতি তৈরি করেছেন, যেখানে স্থানীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের পাশাপাশি আমাদের এই পৃথিবী যে বিপদের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা অগ্রাধিকার পেয়েছে। তাবাসসুমের নকশা করা ভবনগুলোর মাঝেও তার নিঃস্বার্থ কাজের পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকি বাড়তে থাকা একটি দেশে তিনি এমন সব বাড়ির নকশা করেছেন যেগুলো কম খরচে নির্মাণ করা যায় ও সহজে সরিয়ে ফেলা যায়। কমফোর্ট রিভেরি, ফরিদাবাদের অবকাশ বাড়ি, পানিগ্রাম ইকো রিসোর্ট ও স্পা, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে নির্মিত বাংলাদেশের স্বাধীনতা জাদুঘর ও স্বাধীনতা স্বত্ব মেরিনা তাবাসসুমের উল্লেখযোগ্য কীর্তি। মেরিনা তাবাসসুম ১৯শে এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশ্যে পর্তুগাল ত্যাগ করবেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন