২০২৩ সালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তুরস্কের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি তাঁর দৃষ্টিতে রয়েছে। নির্বাচনী বিজয় উদযাপনের এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ান লাখো জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমরা কি ইস্তাম্বুল ফিরে পেতে প্রস্তুত?’ তিনি তখন বলেন, ‘আমরা ইস্তাম্বুল দিয়ে শুরু করেছি, ইস্তাম্বুলের সঙ্গেই থাকব।’
আজ থেকে ৩০ বছর আগে তুরস্কের প্রধান অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে নেতৃত্বে আসেন এরদোয়ান। এর পর থেকে নিজে এবং পরে তাঁর গঠিত দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সমর্থিত প্রার্থীই ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এই শহরের মেয়র। কিন্তু ২০১৯ সালে একে পার্টির প্রার্থী ও তৎকালীন মেয়র বিনালি ইলদিরিম হেরে যান বিরোধী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির একরেম ইমামোগলুর কাছে। সেই থেকে শহরটির নেতৃত্বে ফেরাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে ক্ষমতাসীন একে পার্টি।
এমন বাস্তবতায় আজ রোববার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইস্তাম্বুলসহ দেশটির ৪৮টি সিটির নির্বাচন। দেশজুড়ে নির্বাচন হলেও আলোচনা ও আগ্রহের কেন্দ্রে রয়েছে ইস্তাম্বুল। কারণ, এখানকার নেতৃত্বে যে কোনো পরিবর্তন দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এ ছাড়া রাজধানী আঙ্কারা নির্বাচনও রয়েছে আলোচনায়।
২০১৯ সালে পরিবর্তনের আশা করেছিল বিরোধীরা। সে সময় তারা প্রধান দুটি শহর ইস্তাম্বুল এবং আঙ্কারায় এরদোয়ানের একে পার্টিকে পরাজিত করে। এই দুটি শহরই দীর্ঘ ২৫ বছর একে পার্টি ও এর ইসলামপন্থি নেতাদের হাতে ছিল।
জরিপ বলছে, ইস্তাম্বুলে একরেম এবং একে পার্টির প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী মুরাত কুরুমের মধ্যে তীব্র লড়াই হবে। অন্যদিকে, রাজধানী আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন বিরোধী মেয়র মনসুর ইয়াভাসের দিকে জনসমর্থন বেশি। সেখানে একে পার্টির প্রার্থী করা হয়েছে প্রবীণ রাজনীতিবিদ তুরগুত আলতিনোকে।
গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীরা চরম চ্যালেঞ্জে ফেলেন এরদোয়ানকে। তবে শেষ পর্যন্ত ইসলামপন্থি এ নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেনি। তবে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহানগরী ইস্তাম্বুলে যদি এবার একে পার্টির প্রার্থী বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারেন, তাহলে এটি হবে এরদোয়ানের জন্য পরম জয়। এটিই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র।
কিন্তু বর্তমান বিরোধীদলীয় মেয়র আরেক মেয়াদে শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে সক্ষম হলে তা জাতীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের চাঙ্গা করবে। বিভিন্ন জরিপ বলছে, রিপাবলিকান পার্টি ও এরদোয়ানের ইসলামপন্থি একে পার্টির জনপ্রিয়তা ইস্তাম্বুলে খুব কাছাকাছি।
এ বিষয়ে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের ইউরোপীয় ইনস্টিটিউটের ফেলো সেলিন নাসির বলেন, ‘ইস্তাম্বুল জয়কে তুরস্কের বিজয় বলে মনে করা হয়। এটি যেমন অর্থনৈতিক প্রভাবের কারণে, তেমনি ৩০ বছর আগে বিস্ময়কর বিজয়ের মাধ্যমে মেয়র হওয়ায় এরদোয়ান নিজেই এর ‘গভীর প্রতীকী তাৎপর্য’ বহন করেন।’
রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী একরেম ইমামোলু তুরস্কের রাজনীতিতে সুপারস্টারের গুণ অর্জন করেছেন। ২০১৯ সালে তাঁর বিজয়ে স্বয়ং এরদোয়ান স্তম্ভিত হয়েছিলেন। পাঁচ বছর পর আবারও মুখোমুখি সেই একরেম।
ইস্তাম্বুলের কাদির হাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোলি ওজেল বলেছেন, একরেম হেরে গেলে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধীরা শক্তি হারাবে। শুধু তাই নয়, তারা বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়বে। ফলে দেশকে বর্তমান সরকারের ইসলামীকরণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারবে না।
ওজেলের ধারণা, ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার মতো অন্য বড় শহরগুলোতে বিরোধীদের পরাজয় কাটিয়ে উঠতে এক দশক সময় লাগতে পারে। তবে এর ব্যতিক্রম হয়ে একরেম জয়ী হলে সম্ভবত তিনি জাতীয় ক্ষমতার পথ ধরবেন।
একরেমের রিপাবলিকান পিপলস পার্টির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘একরেম ফের জয়ী হলে এটি হবে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে তাঁর তৃতীয় জয়। এর পর তিনি প্রেসিডেন্ট পদের দিকে হাঁটবেন। এরদোয়ান বিষয়টা বুঝতে পারেন, আর এজন্যই তিনি তাঁকে এখানেই থামাতে চান।’
সূত্র : খবর পলিটিকো ও রয়টার্স।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন