সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রেসিডেন্টকে পাশে নিয়ে গুজরাতের আহমদাবাদে রোড শোয়ের পরে এবার আরব মুলুকের মাটিতে দাঁড়িয়ে কার্যত প্রটোকল এড়িয়ে ‘ভাই’ সংবোধন করলেন সেই প্রেসিডেন্টকে। নরেন্দ্র মোদি সরকারের একের পর এক পদক্ষেপ দেখে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, আসন্ন লোকসভা ভোটে লখনউ, মুর্শিদাবাদ, ভোপাল, হায়দরাবাদের মতো বেশ কিছু জায়গায় শিয়া মুসলিমদের ভোটকে নিশানা করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
আজ বুধবার আবু ধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করবেন মোদি। তার আগে মঙ্গলবার কার্যত প্রটোকলের তোয়াক্কা না করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানকে বারবার ‘আমার ভাই’ হিসেবে সংবোধন করেছেন মোদি। সেখানে বসবাসকারী অনাবাসী ভারতীয়দের সম্মেলনে জায়েদ আল নাহিয়ানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা গিয়েছে তাকে। প্রধানমন্ত্রী মোদি একাধিকবার জায়েদ এবং তার পরিবারকে নিজের ‘আত্মীয়’ হিসেবেও সম্বোধন করেছেন।
সন্ধ্যায় অনাবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশে মোদির বক্তৃতা-অনুষ্ঠানের নাম ‘আহলান মোদি’। আরবি ভাষার এই শব্দবন্ধের অর্থ ‘স্বাগত মোদি’। আবু ধাবির জায়েদ স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠানটি হয়। ওই সমাবেশে কার্যত নির্বাচনী বক্তৃতাই ঝালিয়ে নিয়েছেন মোদি। তার সরকারের সাফল্য ও মোদির গ্যারান্টি নিয়ে সরব হয়েছেন। সেইসাথে আবু ধাবির সাথে আত্মীয়তার বন্ধনও আবেগদীপ্তভাবে বলতে শোনা গিয়েছে তাকে।
বক্তৃতার একটি অংশে হিন্দু ছেড়ে আরবির আশ্রয় নিয়েছেন মোদি। বলেছেন, 'ভারত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত একই কলমে বিশ্ববাসীর জন্য আরো কল্যাণময় ভবিষ্যতের হিসাব লিখছে।' প্রধানমন্ত্রী মোদি জানান, তিনি যখন ২০১৫ সালে প্রথমবার আবু ধাবি সফরে আসেন, তখন বিমানবন্দরে পাঁচ ভাইকে নিয়ে তখনকার যুবরাজ আল নাহিয়ান মোদির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আজ তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট। কিন্তু আপ্যায়নের উষ্ণতা বদলায়নি। মোদির কথায়, 'তার এই আত্মীয়তার বোধ আমার জন্য বড় পুঁজি।'
তৎপর্যপূর্ণভাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের এই প্রেসিডেন্টের সাথেই গত মাসে গুজরাত রাজ্যে আমদাবাদে রোড শো করেন মোদি। হাজার হাজার মুসলিম (বিশেষত বোরা মুসলিম) রাস্তায় দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছিলেন তাদের। রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করিয়ে দিয়েছেন, গুজরাত তো নয়ই, সারা দেশে এতজন মুসলিমকে একসাথে মোদির সভা বা রোড শোয়ে অংশ নিতে দেখা যায়নি। ২০০২ সালের গোধরা-হত্যা ও গুজরাত দাঙ্গার পরে ইসলামিক দুনিয়ার কোনো রাষ্ট্রনেতাও গুজরাতে এসে সভা করেননি। মঙ্গলবার ওই দিনের উল্লেখ করে মোদি বলেছেন, 'গুজরাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ আল নাহানকে দেখতে রাস্তার দু’পাশে জড়ো হয়েছিলেন।... উনি যেভাবে আপনাদের হিতের চিন্তা করেছেন, তার প্রতিদানে ধন্যবাদ দিতেই ওই জমায়েত।'
আবু ধাবিতে হিন্দু মন্দির গড়ার বিষয়েও আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের কাছে ঋণ স্বীকার করে মোদি বলেছেন, 'আমি প্রস্তাব দেওয়ার পরে উনি তিলার্ধ না ভেবে রাজি হয়ে যান। এমনকি বলেন, যেখানে মন্দির গড়বেন, সেই জমিও দিয়ে দেব।'
আল নাহিয়ানের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আবু ধাবিতে ইউপিএ রুপে কার্ড পরিষেবা চালু করেছেন মোদি। বলেছেন, 'আমরা গত সাত মাসে পাঁচবার দেখা করলাম। এটা অভিনব। আমাদের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতাই এতে প্রতিফলিত হচ্ছে। আমি আমার ভাইয়ের (আল নাহিয়ান) কাছে ভীষণ কৃতজ্ঞ।' তার কথায়, 'যত বারই এখানে আসি, আমার মনে হয় নিজের বাড়িতে এবং পরিবারের কাছে এসেছি।''
দুই দেশের মধ্যে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'আজ যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করলাম, তা সমস্ত জি২০ দেশের জন্য বড় খবর। এটা দু’দেশের অর্থনীতিকেই শক্তিশালী করবে।'
মঙ্গলবার দু’দেশের মধ্যে আটটি চুক্তপত্র সই হয়েছে, যার মধ্যে ভারত-পশ্চিম এশিয়ার অর্থনৈতিক করিডরের মধ্যে দিয়ে আন্তঃসরকার পরিকাঠামো-নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তিও রয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন