যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংকিং খাতে বড় আঘাত লেগেছে। মাত্র তিনদিনের মধ্যে সেখানে দুটি জনপ্রিয় ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মাত্র একদিনে ১০,০০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যপতন হয়েছে ব্যাংকগুলোতে। একে বলা হচ্ছে ওয়াল স্ট্রিটে রক্তক্ষরণ হিসেবে। তবে হোয়াইট হাউজের সাবেক একজন উপদেষ্টা একে ‘বরফ চাঁইয়ের মাত্র অগ্রভাগ’ বলে মন্তব্য করেছেন। মাত্র একদিনেই ওয়াল স্ট্রিটে আঞ্চলিক ব্যাংকগুলোতে মূল্যপতন হয়েছে শতকরা ৬০ ভাগ। এমন আতঙ্ক পেয়ে বসায় অর্থ নিয়ন্ত্রকদের হস্তক্ষেপে লেনদেনের গতি কমপক্ষে ২০টি আঞ্চলিক ব্যাংকে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ ছিল। সোমবার সিটিগ্রুপের শেয়ারের মূল্য পড়ে গেছে শতকরা ৭.৪৫ ভাগ।
ওয়েলস ফারগোর পতন হয়েছে শতকরা ৭.১ ভাগ, ব্যাংক অব আমেরিকার পতন হয়েছে শতকরা ৫.৮ ভাগ এবং জেপি মর্গানের পতন হয়েছে শতকরা ১.৮ ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক স্টাফ স্টিভ মুর সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, সিস্টেম সুস্থ আছে। তবে আমার মনে হচ্ছে বড় প্রচুর ব্যাংক একই রকম সমস্যায় পড়তে পারে।
অনলাইন ডেইলি মেইল এ খবর দিয়েছে। এতে আরও বলা হয়, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত আঞ্চলিক ব্যাংক হলো ফার্স্ট রিপাবলিক। তাদের শেয়ারের পতন হয়েছে শতকরা ৬২ ভাগ। ওয়েস্টার্ন এলায়েন্স শতকরা ৪৭ ভাগ লোকসান দেয়ার পর লেনদেন বন্ধ হয়ে যায়। কি-কর্পের শেয়ারের পতন হয়েছে শতকরা ২১ ভাগ।
বাজারব্যবস্থা খোলার আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিনিদের আশ্বস্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিরাপদ আছে। এ বিষয়ে আস্থা থাকতে হবে মার্কিনিদের। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে হস্তক্ষেপের কয়েক মিনিট আগেই ওয়াল স্ট্রিটে পতন শুরু হয়। ট্রাম্প আমলে হোয়াইট হাউজের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ মুর সতর্ক করেছেন এই বলে যে, এসভিবি হতে পারে বরফচাঁইয়ের মাত্র অগ্রভাগ। বাইডেন ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের কোভিড স্টিমুলেশন প্যাকেজ ঘোষণার পর এই দুর্বল অবস্থা প্রকাশিত হয়েছে।
শুক্রবার আকস্মিত পতন হয় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক এসভিবির। বিনিয়োগকারীরা এ সময় পাগলের মতো তাদের তহবিল প্রত্যাহার করে নিচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে ভয় ঢুকে যায় যে, ফেডারেল রিজার্ভের হার যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা আর সঠিক পথে রাখা সম্ভব হবে না। স্টিভ মুর ফক্স নিউজকে বলেন, কিভাবে এই ব্যাংকিং সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা জনগণের বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রক নেই, এ জন্য এটা হয়েছে, এমন নয়। অথচ প্রেসিডেন্ট বাইডেন সেটাই বলার চেষ্টা করছেন। এ ঘটনা ঘটেছে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, কেন্দ্রীয় সরকারের ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার কারণে। এমন অবস্থা আপনি মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলতে দিতে পারেন না। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়া হচ্ছে। শুধু বাইডেনের ব্যাংক ও ঋণ বিষয়ক নীতির জন্যই এই মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে এমন নয়। একই সঙ্গে সুদের হার বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালজুড়ে বেশ কয়েকবার সুদের হার বৃদ্ধি করেছে ফেডারেল রিজার্ভ। তারা এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে, অর্থনীতিতে যে উত্তাপ সৃষ্টি হয়েছে তাকে ঠাণ্ডা করতে এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন