মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন এলাবান্দরবান সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আসলে কী ঘটছে?কায় হামলা চালাচ্ছে দেশটির জান্তা। রাখাইনে আবান্দরবান সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে আসলে কী ঘটছে?ত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের দাবিতে লড়াইররত সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মিকে দমাতে এই হামলা চলছে বলে খবর আসছে।
গেল আগস্টে শুরু হওয়া সামরিক জান্তার হামলা সম্প্রতি বেড়েছে। বিশেষ করে রাখাইনে পুলিশের একটি তল্লাশিচৌকিতে আরাকান আর্মির হামলা ও ১৯ পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে হামলা বাড়িয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
আরাকান আর্মির দুই স্নাইপার।
বাংলাদেশের বান্দরবান সীমান্তের ওপারে এই হামলার ঘটনায় আতঙ্কিত ঘুমধুম ও তমব্রু সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা। এরইমধ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ছোড়া গোলা দুই দফায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পড়েছে। দুই বারই মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা।
সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকায় যেকোনো ধরনের গোলার ব্যবহার করতে আগে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করার রীতি আছে। তবে রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তে এসব গোলাগুলির ঘটনায় বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো রকম তথ্য আদানপ্রদান করেনি মিয়ানমার।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘মর্টার শেলগুলো হঠাৎ করে চলে এসেছে। তাদেরকে (মিয়ানমার) আমরা জিজ্ঞেস করেছি, তারা ভবিষ্যতে সতর্ক থাকবে বলেছে।’
কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। প্রায় প্রতিদিনই সীমান্তের ওপার থেকে গোলাগুলির শব্দ শুনছেন তুমব্রু ও ঘুমধুমের বাসিন্দারা। বুধবারও তুমব্রু সীমান্তে থেমে থেমে ভারী গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এর ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আরাকান আর্মিতে আছে নারী যোদ্ধাও।
রাখাইনে আসলে কী ঘটছে
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে কী ঘটে বা হচ্ছে জানা বেশ কঠিন। জান্তা সরকারের কড়া শাসনে মিয়ানমারের গণমাধ্যমেও বাস্তব চিত্র প্রায় উঠে আসে না। তবে থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতী খবর দিচ্ছে, রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির বাহিনীর ব্যাপক সহিংসতা হচ্ছে।
আরাকান আর্মির কমান্ডার ইন চিফ তুন মার্ট নেইন।
আরাকান আর্মি রাখাইনে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করছে। আর তাদের সমর্থন দিচ্ছে স্থানীয় বৌদ্ধ অনুসারী রাখাইনরা। এর আগে প্রদেশটির বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৌদ্ধ রাখাইনদের মাঝে বিভাজন তৈরি করে মিয়ানমারের শাসকগৌষ্ঠী ফায়দা লুটেছিল। তবে নিপীড়ন নির্যাতনে এখন প্রায় রোহিঙ্গাশূন্য প্রদেশটিতে রাখাইনদের অধিকার আদায়ে লড়াইয়ে নেমেছে আরাকান আর্মি। ফলে তাদের সঙ্গে নিয়মিত সংঘাত হচ্ছে জান্তা সরকারের বাহিনীর। নিয়মিত ঘটছে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনা।
সবশেষ ইরাবতির খবর অনুযায়ী, গেল রবিবার রাখাইনের মংডু শহরে আরাকান আর্মির হামলায় সীমান্ত রক্ষী পুলিশের অন্তত ১৯ কর্মকর্তা নিহত হয়। এছাড়া একটি ফাঁড়ির অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে নেয় সশস্ত্র সংগঠনটি।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এয়ার স্ট্রাইক।
এরপরই আরাকান আর্মিকে টার্গেট করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টার নিয়ে বিমান হামলা শুরু করে। রাখাইনের একাধিক স্থানে এসব বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে গোলাবারুদ ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়।
বাংলাদেশে উদ্বেগ যেসব কারণে
মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন। এই প্রদেশের যেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে, সেই এলাকাটি বাংলাদেশের সীমান্তের ঠিক ওপারে। ফলে সেখানকার সংঘর্ষে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশি বাসিন্দারা।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ঢাকা টাইমসকে বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশের অনেক গ্রাম আছে। রাখাইনে গোলাগুলির শব্দে আমাদের এখানকার কেউ বাড়িতে থাকতে নিরাপদ বোধ করছে না।
লড়াই চলছে আরও তিন প্রদেশে
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে রাখাইনে আরাকান আর্মির সঙ্গে যেমন লড়তে হচ্ছে তেমনি আরও তিন রাজ্যেও বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে। কায়াহ, কাইন ও চিন রাজ্যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে হচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে। অনেকটা যুদ্ধাবস্থার মধ্যে পড়েছে এসব রাজ্যের বাসিন্দারা। অনেকেই জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশি দেশগুলোতে পালাতেও বাধ্য হচ্ছে।
কারেন আর্মির প্যারেড।
ইরাবতি খবরে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সাগাইং ও ম্যাগওয়া অঞ্চলে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোসের্স (পিডিএফ) সেনাবাহিনীর সঙ্গে তীব্র লড়াই করছে। অন্যদিকে চিন স্টেটে অন্তত দুটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী চিন ডিফেন্স ফোর্স ও চিন ন্যাশনাল আর্মি সে দেশের সেনা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছে বহু দিন ধরেই।
চিন ডিফেন্স ফোর্সের সামরিক ট্রেনিং।
কায়াহ রাজ্যে গত মে মাস থেকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছে বিদ্রোহী কারেন ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স, দ্যা কারেন আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। পাশের শান রাজ্যেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী।
এসব বিদ্রোহ দমনে তীব্র গোলাগুলি, মর্টার ছাড়াও বিমান ও ভারী কামানের গোলা ব্যবহার করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। তারা সেখানকার একাধিক গ্রাম পুড়িয়ে দিয়েছে এবং গ্রামে গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন