অনিয়মের আখড়া রাজধানীর মমতা বহুমুখী সমিতি
নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতি। নবনির্বাচিত কমিটির সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সমিতির কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তার বিরুদ্ধে কয়েকটা অভিযোগ রয়েছে।
মূলত নিম্ন আয়ের প্রায় এক হাজার মানুষের জমানো টাকা এ সমিতি গড়ে উঠেছে। সমিতির কতিপয় প্রভাবশালী সদস্যের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ, নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তিতে অনিয়ম, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সদস্যদের নিয়ে নতুন কমিটি গঠন, নকশা জালিয়তির মাধ্যমে সরকারি সম্পত্তি দখল করে খালের উপর কয়েকশ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন নির্মাণ, সমিতির বহুতল মার্কেট দোকান বরাদ্দ, লটারিতে অনিয়মসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে আবু তাহের ও বেলায়েত কমিটি সমিতিতে বিধিমালা বহির্ভূত ১শ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে। সদস্য ফি বাবদ প্রতিজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা করে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা আদায় করে। তবে সমিতিতে নামে প্রতি সদস্যের জমা বাবদ ২ লাখ টাকা দেখানো হয়। বাকি টাকার হিসাব এখনো সাধারণ সদস্যদের দেওয়া হয়নি।
সাধারণ সদস্যরা জানান, সমিতির সাতজন সদস্য ১ কোটি ৭৩ লাখ ৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার পরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উলটা নতুন কমিটিতে নিয়ে আসতে নির্বাচন দেওয়া হয়। কমিটির মোখলেছুর রহমান ও বদরুল আলমসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ থাকার পরও সমবায় অধিদপ্তর সমিতির নির্বাচন ও নতুন কমিটির অনুমোদন দেয়।
সমিতির অর্থ আত্মসাৎসহ অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সমবায় অধিদপ্তর মামলা করে। দুর্নীতি অভিযোগ ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত সদস্যরা হাইকোর্টে মামলার ওপর একটি স্টে-অর্ডার জারি করায়।
আগারগাঁও-শ্যামলী লিংক রোডে বাংলাদেশ বেতারের পাশ দিয়ে মিরপুরের দিকে অর্থাৎ রাস্তার পশ্চিম পাশ দিয়ে একটু সামনে এগিয়ে বামে বাঁক দেওয়া ৩০ ফুট খাল দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে মমতা বহুমুখী সমবায় সমিতির ১৭ তলা বহুতল শপিং কমপ্লেক্স।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ খালের নকশা জালিয়াতি করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনটি নিয়ে আদলতে মামলা চলছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে এখনো কথা বলার সময় হয়নি। সময় হলে বিস্তারিত জানাব।
এদিকে মার্কেটে দোকান বরাদ্দের লটারিতে অনিয়ম খুঁজতে সমবায় অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সমবায় অধিদপ্তরের জেলা সমবায় কর্মকর্তা শিহাব উদ্দীন যুগান্তরকে বলেন, লটারিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। অনিয়ম বা অস্বচ্ছতার প্রমাণ পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সমিতির অর্থ আত্মসাতে অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী বেলায়েত হোসেন যুগান্তরকে জানান, সমিতি যাতে এগোতে না পারে সেজন্য একটা পক্ষ ষড়যন্ত্র করছে। তারা আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সমবায় অধিদপ্তরে যাচ্ছে। যখন মার্কেটটি করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছি তখন এমন একজন ব্যক্তি খাল দখলের অভিযোগ এনেছে যার বাড়ি এই এলাকায় নয়।
অর্থ আত্মসাৎ ও দুদকে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সমিতির কমিটি সদস্যদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, খাল দখল করে শপিংমল নির্মাণ ও নানা অনিয়মের কথা তিনি অস্বীকার করে বলেন, সব মিথ্যা।
নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মোখলেছুর রহমানের যুগান্তরকে বলেন, আসলে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আমার তেমন জানা নেই। তবে তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মনির মাস্টারের সময় মার্কেটে দোকান বরাদ্দের জন্য লটারিতে বড় অনিয়ম হয়েছে। তিনি দোকান বরাদ্দে স্বজনপ্রীতি করেছেন।
সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির মাস্টার যুগান্তরকে জানান, তার বিরুদ্ধে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা তৈরি করেছে বর্তমান কমিটির সভাপতি মোখলেছ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সবুজ ও ক্যাশিয়ার বাশার। মামলা করে সমিতি ধ্বংস করে দিতে চাচ্ছে তারা। মামলার যত খরচ সব সমিতির টাকা দিয়ে বহন করে। এজন্য কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে, যা সাধারণ গ্রাহকদের পকেট থেকে যাচ্ছে। বর্তমান সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারী মিলে সমিতিটি একেবারে ধ্বংস করে ফেলছে। সমবায় আইন অনুযায়ী কেউ সমিতিতে ঋণ থাকলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত সমিতির কাছে ঋণ থাকার পরও তিনি নির্বাচন করেছেন।
সরকারি খাল দখল করে খালের উপর ভবন নির্মাণ নিয়ে জনস্বার্থে একটি মামলা করেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তিনি যুগান্তরকে বলেন, খাল রক্ষা ও জনস্বার্থে করা এ মামলাটি করোনা মহামারির কারণে পেইন্ডিংয়ে রয়েছে। এখনো শুনানি হয়নি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন