পশ্চিম আফ্রিকার দেশ বুরকিনা ফাসোতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের কাছে সেনাদের মধ্যে গুলি বিনিময় হয়েছে। রাজধানী ওগাদুগোউ’তে সেনা বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। সরকার সামরিক অভ্যুত্থানের অভিযোগ উড়িয়ে দিলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনই খবর রটে গেছে। এমন খবরে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট রোচ মার্ক ক্রিশ্চিয়ান কাবোরে’কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রোববার এ খবর নাকচ করে দিয়ে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বার্থেলেমি সিম্পোরে। প্রেসিডেন্ট কোথায় সে সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় তিনি কেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন- তা নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সামরিক অভ্যুত্থানের গুজব আরো ডালপালা ছড়িয়েছে।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা ও বিবিসি।
রোববার স্থানীয় সময় ভোর ৫টায় কয়েকটি সেনা ক্যাম্পে ভারি গুলি বিনিময় হয়। এরপর দিনশেষে প্রেসিডেন্ট রোচ মার্ক ক্রিশ্চিয়ান কাবোরে’র বাসভবনের খুব কাছে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়। এর কয়েক ঘন্টা আগে বিদ্রোহী সেনারা রাজধানী ওগাদুগোউ’র একটি সামরিক ঘাঁটি তাদের দখলে নেয়। তাদের দাবি সেনাবাহিনীর বর্তমান প্রধানদেরকে বরখাস্ত করতে হবে। কারণ, প্রেসিডেন্ট তার পছন্দের লোকদের সেনাবাহিনীর শীর্ষ পদগুলোতে বসিয়ে দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করেছেন। একই সঙ্গে ইসলামপন্থি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিদ্রোহী সেনারা আরো সম্পদ দাবি করেছে। সেনাদের সমর্থনে রাজপথে বেরিয়ে এসেছে কয়েক হাজার মানুষ। ফলে বাধ্য হয়ে দেশটির কর্তৃপক্ষ নৈশকালীন কারফিউ ঘোষণা করেছে।
সরকার দাবি করেছে সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন অভ্যুত্থান চেষ্টার গুজব উড়িয়ে দিয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১১ সেনা সদস্যকে আটক করা হয়েছে সেখানে। বিবিসি লিখেছে, পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটি ২০১৫ সাল থেকে ইসলামপন্থি বিদ্রোহীদের কারণে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ বা শান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন প্রেসিডেন্ট রোচ কাবোরে। এ জন্য তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, অসন্তোষ তীব্র হচ্ছে। ফলে বিদ্রোহী সেনারা ক্ষমতাসীন দলের প্রধান কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে সমর্থন করছেন বিক্ষোভকারীরা।
গুলির শব্দ শোনা গেছে রাজধানীর পশ্চিম ও দক্ষিণে, প্রধান বিমানবন্দরের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে। পশ্চিম দিকে সাঙ্গোলি লামিজানা ক্যাম্পে আটক রাখা হয়েছে এর আগে অভ্যুত্থানে ব্যর্থ সেনাদের। যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বলেছে, গুলির শব্দ শোনা গেছে উত্তরাঞ্চলীয় শহর কায়া ও অউহিগোয়াতে সামরিক ঘাঁটিতে। বিদ্রোহীরা বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করেছেন। তা হলো- সেনাপ্রধান এবং গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানকে বরখাস্ত করতে হবে। বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধের জন্য আরো সেনা মোতায়েন করতে হবে। আহত সেনাদেরকে এবং যুদ্ধে যেসব সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যদের উত্তম যতœ নিতে হবে।
এ অবস্থায় দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বার্থেলেমি সিম্পোরে জাতির উদ্দেশে টেলিভিশনে ভাষণ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এসব হলো স্থানীয় পর্যায়ে কয়েকটি ব্যারাকে সীমিত কিছু ঘটনা। প্রজাতন্ত্রের কোনো প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করা হয়নি। জনগণকে তিনি স্বাভাবিক কাজকর্ম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। পরবর্তীতে আরো তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে তিনি জাতিকে আশ্বস্ত করেছেন। তবে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাবোরে কোথায় আছেন তা অস্পষ্ট। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন