আমাদের এই নীল গ্রহের শেষের দিনগুলি কেমন হতে পারে? প্রশ্ন উঠতেই পারে শেষের সেই দিনগুলির কথা বলবে কে? তখন তো কেউই থাকবে না পৃথিবীর বুকে। জানেন কি শেষের সেই দিনগুলির কথা রেকর্ড হয়ে থাকবে সুদূর তাসমানিয়ার অস্ট্রেলিয়ান দ্বীপে? কারণ সেখানেই বসানো হচ্ছে বিশাল আকারের একটি ‘ব্ল্যাকবক্স’। যা কোনও ভাবেই ধ্বংস করা সম্ভব নয়। এর নাম দেয়া হয়েছে আর্থ ব্ল্যাকবক্স।
যা ইতিমধ্যেই বানিয়ে ফেলা হয়েছে পুরু ইস্পাত দিয়ে। তবে ঠিক কোথায় সেটিকে বসানো হবে তা গোপন রাখা হয়েছে। সৌরশক্তিতে চলবে এর হার্ডড্রাইভগুলি। পৃথিবীতে গণবিলুপ্তি রুখতে বিজ্ঞানীরা যা যা ব্যবস্থা নিচ্ছেন উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের গতিতে লাগাম পরানোর জন্য আর তার প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে সব রাষ্ট্রনেতার কর্মকাণ্ড, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত তার যাবতীয় রেকর্ড একেবারে রিয়েল টাইমে ধরা থাকছে সেই ব্ল্যাকবক্সে।
আগামীদিনে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন এবং অন্যান্য মানবসৃষ্ট বিপদ আমাদের সভ্যতাকে বিপর্যস্ত করলে সেই রেকর্ড মিলবে, আর্থের ব্ল্যাকবক্স ওয়েবসাইটে। আমাদের গ্রহের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত শত শত ডেটা ক্রমাগত সংগ্রহ করা হবে এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য নিরাপদে সংরক্ষণ করা হবে। নরওয়ের বিখ্যাত 'ডুমসডে ভল্ট'-এর মত কাজ করবে এই ব্ল্যাকবক্স। যদি পৃথিবী আকস্মিক ধ্বংসের মুখে পড়ে তখন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ বীজগুলি সংরক্ষণ করার জন্য স্বালবার্ড গ্লোবাল সীড ভল্ট তৈরী করা হয়েছে।
আর পৃথিবীর গতিপথের ভয়ঙ্কর দুর্দশার একটি চলমান রেকর্ড বর্ণনা করা থাকবে আর্থ ব্ল্যাকবক্সে। ক্লেমেঞ্জার বিবিডিও-র সৃজনশীল পরিচালক জিম কার্টিস অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী যদি বিধ্বস্ত হয়, তাহলে এই অবিনশ্বর রেকর্ডিং ডিভাইসটি যদি কেউ পেয়ে থাকেন তাহলে জানতে পারবেন সেইসময়ে বিশ্বের বুকে ঠিক কী হয়েছিল।
ঠিক যেমন বিমান ধ্বংসের পর ব্ল্যাকবক্সটি বলে দেয় কী কারণে বিমানটি ভেঙে পড়েছিল। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র নেতাদের তথ্যও ধরে রাখা রয়েছে আর্থ ব্ল্যাকবক্সে- তাদের কর্ম বা নিষ্ক্রিয়তা পুঙ্খানুপুঙ্খ রেকর্ড করা হচ্ছে। পৃথিবীর এই ব্ল্যাকবক্সটি বানিয়েছে তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও দুটি সংস্থা- ‘ক্লেমেঙ্গার বিবিডিও’ এবং ‘দ্য গ্লু সোসাইটি। বক্সের নির্মাতারা বলছেন, ভবিষ্যৎ মানব সভ্যতাকে কেয়ামতের মতো পরিস্থিতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতে সাহায্য করবে এই ব্ল্যাকবক্স, সেই সঙ্গে আগামী প্রজন্মকে আরও প্রগতিশীল এবং দায়িত্বশীলভাবে কাজ করতে উত্সাহিত করবে।
যদিও অনেকে সমালোচনা করে বলছেন, এই ব্ল্যাকবক্স আসলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য ডিজাইন করা একটি স্টান্ট। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জেরে বর্তমানে বরফের চাদরগুলি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়েছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে পানি এবং যেখানে প্রাণীরা এমন গতিতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে যে বিজ্ঞানীরা বলছেন আমরা ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছি। এই সময়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকানো প্রয়োজন। আর্থ ব্ল্যাকবক্স নির্মাতারা বলেছেন, যন্ত্রটির উদ্দেশ্য হল গ্রহের মৃত্যুর দিকে পরিচালিত ঘটনাগুলির একটি নিরপেক্ষ বিবরণ প্রদান করা, ভবিষ্যত প্রজন্মকে দায়বদ্ধ করে তোলা এবং জরুরী পদক্ষেপে অনুপ্রাণিত করা। যদিও পৃথিবীর শেষের দিনগুলি কেমন হবে তা নির্ভর করছে আমাদের ওপরেই।
সূত্র: sciencealert.com
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন