সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনাবাহিনীর সদস্যদের বহনকারী একটি বাসের কাছে রাস্তার পাশে পেতে রাখা দুটি বোমার বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১৩ সেনা সদস্য নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে।
বুধবার সকালে চালানো হামলাটি দামেস্কে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা ছিল এবং সরকারি বাহিনী বিরোধী যোদ্ধাদের দখলে থাকা শহরতলীগুলো দখল করে নেওয়ার পর প্রথম বড়সড় হামলা। সিরিয়ায় গত দশ বছর ধরে সরকার, গণতন্ত্রপন্থী এবং আইএস জঙ্গীদের মাধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ চলছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টিভি, সেন্ট্রাল দামেস্কের দগ্ধ বাসের ফুটেজ দেখিয়ে বলেছে, ভিড়ের সময় বিস্ফোরণ ঘটে যখন লোকেরা কর্মস্থল এবং স্কুলে যাচ্ছিল।
বাসটি হাফেজ আল-আসাদ সেতুর কাছে আসার পর দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। তৃতীয় একটি বোমা সেনাবাহিনীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট নিষ্ক্রিয় করে ফেলেছে। সিরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন যে, এটি একটি ‘সন্ত্রাসী’ হামলা ছিল।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেনি কোনো গোষ্ঠী।
দামেস্কের পুলিশ কমান্ডার মেজর জেনারেল হুসেইন জুমা রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, ‘এটি একটি কাপুরুষোচিত কাজ’, তিনি আরও বলেন যে, পুলিশ বাহিনী অবিলম্বে এলাকাটি ঘিরে ফেলেছে এবং নিশ্চিত করেছে যে আর কোন বোমা নেই। তিনি জনগণকে যে কোনো সন্দেহজনক বস্তু দেখলে তা কর্তৃপক্ষকে জানানোর আহ্বান জানান।
আল জাজিরার সংবাদদাতা জেনা খোদর বলেন, সিরিয়ার রাজধানীর কেন্দ্রে যে হামলা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে একটি ‘নিরাপত্তা লঙ্ঘন’।
লেবাননের রাজধানী বৈরুত থেকে তিনি বলেন, ‘সিরিয়া সরকারের অবশ্যই অনেক শত্রু রয়েছে’।
তিনি বলেন, একটি শত্রু হল বিরোধী যোদ্ধারা, যারা মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলে সীমাবদ্ধ। আরও আছে আইএসআইএল (ইসলামিক স্টেট যোদ্ধারা), যারা এখনও বিস্তীর্ণ মরু অঞ্চলে সক্রিয় আছে এবং বারবার সরকারের সঙ্গে চলমান সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
‘বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনী এবং এই অঞ্চলের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে। সুতরাং আমরা কেবল অনুমানই করতে পারি, কিন্তু সিরিয়ার সরকার স্পষ্টতই বিশ্বাস করে যে বিরোধীরাই এই হামলা চালিয়েছে’, খোদর যোগ করেন।
খোদর বলেন, ‘এই বিস্ফোরণের খবর পাওয়ার মাত্র কয়েক মিনিট পরে বিরোধীদের নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ ইদলিবের গ্রামাঞ্চল আরিহার ছোট একটি শহর লক্ষ্য করে ভারী কামানের গোলা নিক্ষেপ করা হয়। আমাদের বিশ্বাস ওই হামলায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই স্কুলে যাওয়ার পথে হামলার শিকার হয়। এই হামলাকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত বছর যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এই এলাকাটি নিয়মিত হামলার শিকার হয়ে আসছে’।
ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে যুদ্ধকালীন এবং সংঘাত-পরবর্তী সিরিয়া প্রকল্পের অধিভুক্ত অধ্যাপক জোসেফ দাহার বলেন, এই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হচ্ছে যে, সিরিয়া এখনো ‘যেকোনো ধরনের স্থিতিশীলতা থেকে অনেক দূরে’ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একাধিক গোষ্ঠী এখনো সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে বিরাজ করছে। এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তথাকথিত ইসলামিক স্টেট এর একটি ট্রেডমার্ক, যারা ২০১৯ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী এবং এসডিএফের কাছে পরাজয়ের পরও ধ্বংস হয়ে যায়নি। এবং কৌশল পরিবর্তন করে তারা এখন নতুনভাবে হুমকি এবং নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘এই হামলা আবারও দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা রাজনৈতিক, সামরিক বা অর্থনৈতিকভাবে সিরিয়ার যে কোনো ধরনের স্থিতিশীলতা অর্জন থেকে অনেক দূরে রয়েছি। আমরা এখনও সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আছি’।
২০১৭ সালের মার্চ মাসে জাস্টিস প্যালেসে আইএসআইএল এর বোমা হামলায় ৩০ জন নিহত হওয়ার পর বুধবারের এই হামলা সিরিয়ার রাজধানীতে সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা ছিল।
এর আগে গত আগস্টে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, শর্ট সার্কিটের কারণে সৈন্যবাহী একটি বাসের গ্যাস ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণ ঘটে একজন নিহত ও তিনজন আহত হয়।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত বাহিনী শহরের চারপাশের বিদ্রোহী এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার পর থেকে দামেস্কে বিস্ফোরণের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। রাশিয়ার সামরিক উপস্থিতি এবং ইরানের মিলিশিয়াদের সাহায্যে বাশার আল-আসাদ সরকার এখন দেশটির বেশিরভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে।
২০১১ সালের মার্চ মাসে শুরু হওয়া সিরিয়ার সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে এবং দেশটির অর্ধেক জনসংখ্যা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে, যার মধ্যে ৫০ লাখ মানুষ বিদেশে শরণার্থী হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন