৬৮টি দেশের সংযোগ নিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ সম্পর্কিত সবচেয়ে গুরুতর মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে চীন ও পাকিস্তান। যার ফলে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন বিলম্বিত করা হয়েছে।
সিপিইসির প্রধান সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাটি হলো যৌথ সহযোগিতা কমিটি (জেসিসি)। পাকিস্তানের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিশেষ উদ্যোগ মন্ত্রী এবং চীনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের সহসভাপতি যৌথভাবে জেসিসির সভাপতিত্ব করেন।
জেসিসির প্রথম সভাটি ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে এবং সর্বশেষ সভা ২০১৮ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দশম জেসিসি সভাটি ২০২০ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে তা স্থগিত রয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এএনআই বলছে, করোনা মহামারিটি ছিল এই বিলম্বের প্রাথমিক কারণ। তবে পরবর্তীতে মেইন লাইন ওয়ান (এমএল-১) রেলপথ প্রকল্প এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে মতবিরোধ এই দ্বিমতের মূল বিষয় হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বিশেষ উদ্যোগ মন্ত্রী আসাদ উমর নভেম্বরে স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, পরের মাসে দশম জেসিসি সভা অনুষ্ঠিত হবে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা সম্প্রতি বলেছেন, এই বৈঠকটি অন্তত তিন মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে না, যা এখন পর্যন্ত দুটি জেসিসি সভার মধ্যে দীর্ঘতম ব্যবধান সৃষ্টি করবে।
এমএল-১ হল সিপিইসি-র বৃহত্তম প্রকল্প এবং এর মূল্য ৬.৮ বিলিয়ন ডলার। চীন এই অর্থের ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ৩ শতাংশের চেয়ে কম মুনাফায় পরিশোধ করবে পাকিস্তান।
চীন এ জাতীয় প্রকল্পগুলোর জন্য বাণিজ্যিক ও অবাণিজ্যিক ঋণ প্রদান করে থাকে। পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের মতে, এটি ইসলামাবাদের সামগ্রিক সুদের হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি করতে পারে।
লাহোরের প্রবীণ সাংবাদিক নাসির জামাল বলেছেন, চীন এমএল-১ এর জন্য ঋণ দিতে নারাজ, কারণ পাকিস্তান ইতিমধ্যে জি-২০ ঋণ শর্ত পূরণ করার জন্য ঋণমুক্তির আবেদন করেছে এবং তারা সার্বভৌম নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো অবস্থানে নেই।
তিনি বলেন, বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্পগুলোর জন্য বেইজিংয়ের ঋণ দেয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। কেননা, এই প্রকল্পগুলো স্থানীয় রাজনীতির দ্বারা ঝুঁকির সম্মুখীন হয়, যা চীনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পরিশোধের প্রাপ্যতাকে বিলম্বিত করে। এটি এমএল-১ এর জন্য আর্থিক কাঠামোর চুক্তিকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জেসিসি-র বিলম্বিত বৈঠক এবং এমএল-১ আর্থিক কাঠামোর অচলাবস্থা পাকিস্তানের জন্য বিষয়গুলোকে জটিল করে তুলছে। এই মাসের শুরুর দিকে, এমএল-১ প্রকল্পের সুরক্ষার জন্য সরকারের কাছে ৬৯ মিলিয়ন ডলার চেয়েছিল পাকিস্তান রেলপথ। চীনা অর্থায়নের কাঠামোটি জেসিসি'র দ্বারা সম্মত না হলে, পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা এবং বাজেটের তীব্র সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামাবাদের পক্ষে এত বড় পরিমাণের অর্থায়ন করা প্রায় অসম্ভব।
জেসিসির বৈঠক বিলম্বিত করার আরেকটি প্রধান কারণ হলো বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এসইজেড) সম্পর্কে বেইজিং ও ইসলামাবাদের মধ্যকার মতবিরোধ। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সিপিসি-র দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্ধারিত সময়ে, চীনা সংস্থাগুলোর পাকিস্তানে পণ্য উত্পাদন এবং সেখান থেকে রপ্তানি শুরু করার কথা।
বর্তমানে, এসইজেড-এর জন্য শিল্প সহযোগিতার কাঠামোটি কোনো বিস্তারিত রূপ ছাড়াই সমঝোতা স্মারকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। করমুক্তি এবং স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগের মতো প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য জেসিসি-তে চীনের একমত হতে হবে। পাকিস্তানের বিনিয়োগ বোর্ড গত মাসে শিল্প সহযোগিতার কাঠামোর জন্য খসড়া চুক্তিটি চীনা সরকারের কাছে জমা দিয়েছে এবং এখনো এর উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন