করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে গভীর সংকটে পুঁজিবাদ। তবে মহামারি তা চিরতরে পাল্টে দিচ্ছে। এটা মার্কিন অর্থনীতি ও সমাজের বিভিন্ন বৈষম্যকে আতশী কাচের নিচে নিয়ে এসেছে। লাখ লাখ আমেরিকান কর্মহীন ছিল। সেটা আরও বেড়েছে করোনাকালে। নারী ও সংখ্যালঘু কর্মীরা মারাত্মকভাবে ধাক্কা খেয়েছেন। বিশেষ করে অনেকেই শিশুদের প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না।
আবার দূরশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিও সরবরাহ করতে পারছে না। এমনিতেই ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। করোনা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার খামতিগুলো আরো স্পষ্ট করে তুলেছে। অক্সফোর্ডের ইকোনমিকস অ্যান্ড পাবলিক পলিসি প্রফেসর পল কলিয়ার এমনটাই মনে করছেন ।
এরই মধ্যে ওয়াল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) পুঁজিবাদ একেবারে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছে। আজকের পুঁজিবাদী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনেক গ্রুপ পেছনে পড়ে যায়। নীতিনির্ধারকদের কাজ হচ্ছে তাদের টেনে তোলা।
আধুনিক ইতিহাসে কভিড-১৯-এর চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে ধ্বংসাত্মক প্রভাব রেখেছে শুধু ১৯৩০-এর মহামন্দা। মহামারি শেষ হলে আগের মতো সবকিছু শুরু করা কঠিন ঠেকবে। এমআইটির অর্থনীতির অধ্যাপক ড্যারন আসেমগলু বলেন, আমাদের এখন পরিবর্তনের মৌসুম চলছে।
মহামারি শেষে বেশকিছু ক্ষেত্রে বড় আকারের পরিবর্তন আনতে হবে। প্রথমত, আমেরিকার সামাজিক নিরাপত্তা জালের ছিদ্রগুলো উন্মুক্ত করে দিয়েছে কভিড-১৯। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে দ্বিতীয় ধাপের কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে প্রবেশ করতে হবে, যা শ্রমিকমুখী হবে।
গত কয়েক মাসে লাখ লাখ মার্কিনি চাকরি হারিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিয়মিত বেকারত্ব সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় একান্তই অপ্রতুল। দেশের সব জায়গায় যেখানে বাসা ভাড়ায় বেশির ভাগ অর্থ চলে যাচ্ছে, সেখানে অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো কঠিন ঠেকছে।
মহামারি প্রলম্বিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধাও একটি বড় সংকট হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তার ওপরে নিম্ন আয়ের অনেক শ্রমিক কর্মস্থলে নভেল করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে ক্যাসিনো, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা ও শিপিং ওয়্যারহাউজ।
দ্বিতীয়ত, বিশ্বায়ন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে অটোমেশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা। পুঁজিবাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়েছে বিশ্বায়ন। বিশ্বব্যাপী মানুষ ও অর্থপ্রবাহের পদ্ধতি পাল্টে দিয়েছে। নীতিনির্ধারকদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো কীভাবে এটা শ্রমিকদের ওপর প্রভাব ফেলেছে তা অনুধাবন করা এবং যথাযথ সমাধান বের করা।
আজকের পুঁজিবাদে শ্রমিকদের চেয়ে অর্থ গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেছে। চাকরি অন্যত্র সরিয়ে কিংবা রোবট ব্যবহার করে যদি ডলার বাঁচানো যায় তাহলে তা শিল্প মালিকদের কাছে ঠিক আছে। এ প্রবণতা যে বৈষম্য বাড়াচ্ছে, চলতি বছরের শুরুতেই বলেছেন ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল। মহামারি আরো স্পষ্ট করে দেখিয়েছে রোবট রোগাক্রান্ত হয় না, মানবশ্রমিক হয়।
তৃতীয়ত, মহামারিতে ঋণ আকাশচুম্বী দাঁড়িয়েছে। কভিড-১৯-এর কারণে সরকারি ব্যয় অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে, যুক্তরাষ্ট্রেও তা রেকর্ড সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছে। কংগ্রেসনাল বাজেট অফিসের পূর্বাভাস, চলতি বছরের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে; যা ২০১৯ সালের চেয়ে তিন গুণ বেশি।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক ক্রিস্টিন দেসান বলেন, আজকের পুঁজিবাদের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ঋণ। মহামারী-পরবর্তী সময়ে নীতিনির্ধারকদের বড় আকারের ঋণের বোঝা নিয়ে চলতে হবে বা পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন