পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজনৈতিক দল নেই। দেশটিতে প্রধানত দুটি দলের কথা বেশি আলোচনা হয়ে থাকে। ডেমোক্র্যাট পার্টি এবং রিপাবলিকান পার্টি। তবে অন্যান্য ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলো- যেমন লিবার্টারিয়ান পার্টি, গ্রিন পার্টি, ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি রয়েছে যারা কখনো কখনো প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।
আধুনিক উদারনীতিতে বিশ্বাস করে ডেমোক্র্যাট পার্টি যেমন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, সাশ্রয়ী মূল্যের শিক্ষা, সামাজিক কর্মসূচী, পরিবেশ সংরক্ষণ নীতি এবং শ্রমিক ইউনিয়ন ইত্যাদি।
অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টি গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি অথবা জিওপি নামেও পরিচিত। এরা আমেরিকার রক্ষণশীলতা প্রচার করে যেমন সীমিত সরকারি নিয়ন্ত্রণ, কম কর হার, মুক্তবাজার, পুঁজিবাদ, বন্দুকের অধিকার, নিয়ন্ত্রণ মুক্ত শ্রমিক ইউনিয়ন এবং অভিবাসন ও গর্ভপাতের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় বিশ্বাসী।
এ বছর প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা দেশজুড়ে চেষ্টা চালিয়ে দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জো বাইডেন ডেমোক্র্যাট পার্টি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন পেয়েছেন।
আমেরিকার গণতন্ত্রে খোলামেলা আলোচনা হচ্ছে কে ডিসেন্ট আর কে না। অনেকের মতে জো বাইডেন একজন ডিসেন্ট ব্যক্তি অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ইনডিসেন্ট ব্যক্তি। কেউ কেউ নানা উদাহরণ টেনে এনে তাদের কথাকে যুক্তি দিয়ে শ্রোতাদের মোটিভেট করতে চেষ্টা করছে।
জেল হাজতের ভয় দেখিয়ে নয় শুধু সৃজনশীলতা এবং যুক্তি তর্কের মধ্য দিয়ে চলছে আলোচনা। এ ধরণের আলোচনা সঠিকভাবে পরিপূর্ণতা লাভ করে যেখানে মিউচুয়াল রেসপেক্ট, আন্ডারস্ট্যান্ডিং এবং টলারেন্স আছে।
সেক্ষেত্রে উপরের পুরো প্রসেসকে সহজ ভাবে বলা যেতে পারে এগ্রি টু ডিজএগ্রি কনসেপ্ট। ঘৃণা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতা যেখানে বিদ্যমান সেখানে এই কনসেপ্টের ব্যবহার নেই বললেই চলে।
আজ সুইডেনে টেলিভিশনের একটি আলোচনায় যোগ দিয়েছেন প্রোগ্রাম লিডার ছাড়াও তিনজন ভিন্ন পেশার আলোচক। এদের মধ্যে একজন সুইডেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডরিক রেইনফেল্ট, সুইডিশ বংশোদ্ভূত আমেরিকা প্রবাসি একজন তরুণী এবং একজন বুদ্ধিজীবী।
করোনার সময় যদিও সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার কথা, তা সত্বেও এরা বেশ চাপাচাপির মধ্যে বসেছে। আমেরিকার ইলেকশনে গোটা বিশ্বের মাথা ব্যথা। কারণ গোটা বিশ্বে তাদের প্রভাব রয়েছে। সেক্ষেত্রে একজন গ্রহণযোগ্য প্রেসিডেন্টের প্রত্যাশা সবার।
আলোচনায় যে বিষয়টি আমার ভালো লেগেছে সেটা হলো এদের কথায় সমাজের সব ধরণের মানুষের চিন্তা চেতনা ফুটে উঠেছে, কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। আমার ছোটবেলার কিছু সময়ের কথা মনে পড়ে গেল।
সময়টি হবে ১৯৮৩-৮৪, পড়ি তখন ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। শুক্রবার হলেই রাতে বেশ আড্ডা জমতো। সবাই যে আড্ডা পছন্দ করতো তা নয়। সেক্ষেত্রে আড্ডাবাজদের ঘাঁটি বসতো বেশির ভাগ সময় দুইজন তৎকালীন তিন নম্বর হলের খ্যাতনামা আড্ডাবাজদের রুমে।
এমনও সময় গেছে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল আমরা যে মানুষ নামে পরিচিত এর পরিবর্তে যদি শুরু থেকে আমাদেরকে খাট বলে ডাকা হতো তবে আমাদের পরিচয় হতো খাট। এর পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা করতে করতে রাত পার হয়ে সকাল হয়ে গেছে তবে সমাধানে আসা যায়নি।
কিন্তু মনের অজান্তে আমাদের এগ্রি টু ডিজএগ্রির ওপর যে প্রশিক্ষণ হয়েছে তা বুঝতে পারিনি তখন। তবে পেরেছিলাম ২০০০ সালে মিলেনিয়াম ক্রাইসিস এবং তার প্রতিরোধে কী করণীয় আর কী বর্জনীয়, টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনায়।
আমার সঙ্গে ছিল টেলি কোম্পানি এরিকসন, নোকিয়া, গাড়ি কোম্পানি সাব স্কানিয়া, টয়োটা, ওষুধ কোম্পানি ফার্মাসিয়া, আস্ট্রা, প্রযুক্তি কোম্পানি তোসিবা ইত্যাদির পরিচালক।
রাত জেগে ঢাকা রেসিডেন্সিয়ালে মনের অজান্তে মানুষের নাম মানুষ না হয়ে খাট হতে পারত আলোচনায় যে এগ্রি টু ডিজএগ্রির ওপর প্রশিক্ষণ হয়েছিল তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বুঝতে এবং অন্যদের বোঝাতে পেরেছিলাম সেদিন টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে।
অনেকের কাছে হয়ত রাত জেগে ঢাকা রেসিডেন্সিয়ালের আড্ডা ছিল বিরক্তিকর। আমরা এগ্রি টু ডিজএগ্রি হয়েছি তবে সম্পর্কে অবনতি ঘটেনি কখনও। মজার ব্যাপার হলো যাদের সঙ্গে রাত জেগে মানুষ কেন খাট নামে পরিচিতি পেল না আলোচনা করেছি, তারা আজ বুয়েটের মস্ত বড় প্রফেসর, আর্মির জেনারেল, ব্যাংক এবং হাসপাতালের পরিচালক প্রমুখ।
আমার শিক্ষাজীবন এবং কর্মজীবনে যা শিখেছি তার বেশির ভাগ শিক্ষাই ছিল এগ্রি টু ডিজএগ্রি কনসেপ্টের মধ্য দিয়ে। মাল্টিকালচার এবং গ্লোবালাইজেশন পৃথিবীতে সব সময় এগ্রি হওয়া যাবে না বা আশা করাও ঠিক হবে না। তবে মিউচুয়াল রেসপেক্ট এবং আন্ডারস্টান্ডিংয়ের সাথে যদি আমরা অ্যাড করি এগ্রি টু ডিজএগ্রি কনসেপ্ট তবেই সম্ভব গণতন্ত্রের সেরা চর্চা করা।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন থেকে,
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন