জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের মূখ্যসচিব ইয়োশিহিদে সুগা। গত সোমবার জাপানের ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রধান নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় সুগার প্রধানমন্ত্রী হওয়া একপ্রকার নিশ্চিতই ছিল।
বুধবার সংসদে নিম্নকক্ষের ভোটে জয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী পদে বসার আনুষ্ঠানিকতাও সেরে নিলেন। অসুস্থতার কারণে সরে যাওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের স্থলাভিষিক্ত হলেন ইয়োশিহিদে সুগা।
এদিকে আজ বুধবার বিকেলেই নতুন মন্ত্রিসভা ঘোষণা করতে পারেন ইয়োশিহিদে সুগা। এতে আবে সরকারের অনেক নেতাই তার মন্ত্রিসভায় থেকে যাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানে আমলাতান্ত্রিক সংস্কার, ডিজিটালাইজেশন, কৃষি ও পর্যটনে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে নজর দিতে চেয়েছেন সুগা। এছাড়া জাপানের অর্থনীতি বিষয়ে শিনজো আবের ত্রিমাত্রিক কৌশল, যা আবেনোমিক্স নামে পরিচিত, সেটিও এগিয়ে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে সোমবার ক্ষমতাসীন দলটির নেতৃত্ব নির্বাচনের ভোটে তিনি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচিত সভাপতিই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন। বুধবার পার্লামেন্টের ভোটে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়ার সেই কাজটিই করা হলো।
২০১২ সালে শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তার ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন সুগা। আবের গোটা শাসনামলেই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব সামলেছেন। এসময় তার ক্ষমতাকে অনেকটা চিফ অব স্টাফ ও প্রেস সচিবের সমন্বয় বলা চলে।
তবে ক্ষমতায় চূড়ায় পৌঁছানোর এ সুদীর্ঘ যাত্রাপথ মোটেও সুগম ছিল না ইয়োশিহিদে সুগার জন্য। জাপানের আকিতা অঞ্চলের প্রত্যন্ত এলাকায় এক কৃষক পরিবারে জন্ম নিয়েছেন তিনি। বাবা ছিলেন স্ট্রবেরি চাষি। হাইস্কুল পার করেই রাজধানী টোকিওতে পাড়ি জমান ইয়োশিহিদে সুগা।
কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ইয়োশিহিদে সুগা ১৯৭৩ সালে টোকিও হোসেই নামক এক নৈশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক করেন। নিজের উপার্জিত অর্থে পড়াশুনা করা সুগা ১৯৮৬ সালে এলডিপিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালে কানাজাওয়া প্রদেশ থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
আশির দশকের শেষের দিকে ইয়োকোহামার সিটি কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন ইয়োশিহিদে সুগা। সেসময় রাজনৈতিক যোগাযোগ বা অভিজ্ঞতা কোনোটাই খুব বেশি ছিল না তার। শুধু ছিল দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমের মনোবল।
স্বশরীরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা মুরু করেন তিনি। এভাবে দৈনিক ৩০০ বাড়ি করে মোট ৩০ হাজার বাড়ির দরজায় হাজির হয়েছিলেন সুগা। এলডিপির তথ্যমতে, ওই নির্বাচনী প্রচারণায় অন্তত ছয় জোড়া জুতা ক্ষয় হয়েছিল এ নেতার।
প্রথম নির্বাচনে জেতার সেই দৃঢ় চেষ্টা আর পরিশ্রমের অভ্যাস আর কখনোই বদলায়নি ইয়োশিহিদে সুগার। প্রকাশ্যে না এসেও বহু আলোচিত চুক্তির কারিগর তিনি। হয়ে উঠেছেন জাপানের অন্যতম সফল রাজনৈতিক নেতা ও আদর্শ। একমাত্র সুগাই শিনজো আবের যোগ্য উত্তরসূরী হতে পারেন বলে মনে করছেন জাপানের রাজনীতিবিদরা।
সোমবার জাপানের স্থানীয় সময় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এলডিপির সভাপতি নির্বাচনে দলীয় সাংসদদের ৩৯৪ ভোট আর ৪৭টি প্রদেশের তৃণমূল নেতাদের ১৪১টি ভোট গ্রহণের কথা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি ভোট কম পড়ে। ভোটের ফলাফল বিকেল সাড়ে ৩টায় প্রকাশ করা হয়।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, মোট ৫৩৪টি ভোটের মধ্যে ৭১ বছর বয়সী ইয়োশিহিদে সুগা পেয়েছেন ৩৭৭ ভোট। এছাড়া তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা পেয়েছেন ৮৯ ভোট আর অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিগেরু ইশিবা পেয়েছেন ৬৮ ভোট।
গত ২৮ অগাস্ট অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে হঠাৎ করেই জাপানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন আবে। জাপানে সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা আবে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘আলসারেটিভ কোলাইটিস’ রোগে ভুগছেন।
শিনজো আবের পদত্যাগের পর তার দল থেকে প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার প্রতিয়োগিতায় নামেন সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইশিবা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দলটির অন্যতম নীতি নির্ধারক কিশিদা এবং শিনজো আবের আর্শীদবাদপুষ্ট ও দীর্ঘদিনের মন্ত্রীপরিষদের সচিব সুগা।
শিনজো আবের নেতৃত্বাধীন সরকারের পুরো সময়জুড়ে মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্ব থাকা সুগা সরকারের নীতি নির্ধারকের ভূমিকায়ও ছিলেন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সুগা শিনজো আবের রেখে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীত্বের ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ পূরণ করবেন। খবর আল জাজিরা, সিএনএন।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন