রাসায়নিক গুদাম থেকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণে ২২০ জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বৈরুতের গভর্নর মারওয়ান আবুদ একথা জানিয়েছেন। তবে বহু লোক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের অনেকেই বিদেশি শ্রমিক বলেও জানিয়েছেন তিনি।
দেশটির আল মুরসাদু অনলাইন নিউজ ওয়েবসাইটের দেওয়া উদ্ধৃতিতে গভর্নর আবুদ জানিয়েছেন, ওই বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ২২০ জনে দাঁড়িয়েছে এবং ১১০ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
আল জাদিয়েদেন টেলিভিশন চ্যানেলকে তিনি বলেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে অনেক বিদেশি শ্রমিক ও লরি চালক রয়েছেন, এ কারণে তাদের শনাক্ত করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।
বৈরুতে সোমবার তৃতীয় দিনের মতো এই বিস্ফোরণে বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে বলে বিবিসি জানিয়েছে।
বৈরুত বন্দরে ঘটা ওই বিস্ফোরণের জেরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব পদত্যাগ করেছেন। হাসান দিয়াবের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মাইকেল আউন।
এর আগে বিচারমন্ত্রী মারি ক্লদ নাজম সোমবার পদত্যাগ করেছেন। এই নিয়ে মন্ত্রিসভার তৃতীয় আরেকজন সদস্য পদত্যাগ করলেন, কিন্তু তাতেও প্রতিবাদকারীদের ক্ষোভ কমেনি বলে ভাষ্য বিবিসির।
সোমবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব পদত্যাগের আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকও ডেকেছিলেন। ওই একই সময় রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে সরকারবিরোধী প্রতিবাদকারীরা।
দিয়াব জানিয়েছিলেন, ছয় বছর ধরে বৈরুত বন্দরে অরক্ষিত অবস্থায় রাখা ২৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট কোনোভাবে প্রজ্বলিত হয়ে বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটেছে।
তবে শহরের কেন্দ্রস্থলের কাছে গুদামে এত বিপুল পরিমাণ বিপজ্জনক উপাদান রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি অনেক লেবাননিই বিশ্বাস করতে পারছেন না; অনেক দিন ধরেই দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ করে আসছেন তারা।
এদিকে লেবাননের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জীবিত আর কাউকে পাওয়া না যাওয়ায় বন্দরে তল্লাশি অভিযানের উদ্ধার পর্ব বন্ধ করে দিতে বলেছে তারা।
অন্যদিকে শহরটির কয়েক লাখ বাসিন্দা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িতে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন। এসব বাড়ির অধিকাংশেরই জানালা-দরজা উড়ে গেছে।
কর্মকর্তাদের হিসাবে এই বিস্ফোরণে ৩০০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এতে লেবাননের সম্মিলিত অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়তো এক হাজার ৫০০ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন তারা।
গত কয়েক বছর ধরে চরম রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এবং বিশাল অংকের ঋণের বোঝার চাপে লেবননের অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। তার মধ্যে গত মঙ্গলবার বৈরুতের বন্দর এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ দেশটিকে খাদের কিনারে নিয়ে দাঁড় করিয়েছে বলে জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।
ব্রেকিংনিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন